এক বারও তাঁর নাম মুখে আনেননি। কিন্তু বিধানসভায় দাঁড়িয়ে এক সময়ের প্রিয়পাত্র কুণাল ঘোষের আত্মহত্যার চেষ্টা নিয়ে শুক্রবার বিবৃতি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সারদা-কাণ্ডে কুণালের ভূমিকা নিয়ে তির্যক মন্তব্য করতেও ছাড়লেন না।
এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ এসইউসি-র বিধায়ক তরুণ নস্কর বিধানসভায় প্রশ্ন করেন, “জেলে এক জন নাকি আত্মহত্যা করতে গিয়েছেন। যেহেতু মুখ্যমন্ত্রী সভায় আছেন, তাই বিষয়টি জানতে চাইছি।” অন্য প্রশ্নের মধ্যে আচমকা তরুণবাবু এ কথা জিজ্ঞাসা করতেই সরকার পক্ষের বিধায়কেরা চিৎকার করে তরুণবাবুকে থামাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু এর মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, “উনি একটা কথা জানতে চেয়েছেন। এটা সভার সদস্যরা জানতে চাইতেই পারেন। এটা তাঁদের অধিকার।” এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এ ব্যাপারে একটা উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত শুরু করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রসচিব করছেন। তিনি নিজে গিয়ে ব্যাপারটা দেখবেন।” এ দিনই জেলের সুপারিন্টেন্ডেন্ট, ডাক্তার এবং জেল কর্মীদের একাংশকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত জানান মুখ্যমন্ত্রী।
“আসলে ঘটনাটা কী জানেন?” বিবৃতি দিতে গিয়ে নিজেই প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। উত্তরটাও নিজেই দেন, “যারা এত লোকের সঙ্গে প্রতারণা করেছে, তাদেরই সাধু সাজিয়ে দিচ্ছে সংবাদমাধ্যম! দুর্ভাগ্যজনক! যারা গরিব মানুষের পয়সা নিয়েছে, তারাই আজ মহাপুরুষ হয়েছে।” তিনি বলে চলেন, “এটা ২টোর সময় ঘটেছে। উনি অসুস্থ বোধ করছিলেন, উনি সেটা বলেওছেন।” মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘উনি’ (কুণাল) নিজেই হেঁটে হেঁটে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছেন। তাঁকে এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্থিতিশীল। নাড়ির গতিও এক্কেবারে স্বাভাবিক। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ওই একটা ঘুমের ওষুধ আছে, অ্যালজোপাম (অ্যালপ্রাজোলাম) না কী? সাধারণ মানুষ খায়। ০.৫ মিলিগ্রামের। ওরই একটা স্ট্রিপ পাওয়া গিয়েছে ওঁর কাছে। ডাক্তার গৌতম দাশগুপ্তের প্রেসক্রিপশন ছিল। এটা ১৫টা ট্যাবলেটের স্ট্রিপ। হি ইজ অ্যাবসোলিউটলি স্টেবল। ডাক্তারদের রিপোর্ট অনুযায়ী হি হ্যাজ পারহ্যাপস নট কনজিউমড সো মেনি পিলস। ওঁর বি পি (রক্তচাপ) ১১০ বাই ৭০।”
তার পরেই তিনি সভার সদস্যদের উদ্দেশে নাম ধরে বলতে থাকেন, “কী ডাক্তার তরুণ নস্কর, ঠিক বলছি?” তরুণবাবু তৎক্ষণাৎ উঠে বলেন, “ম্যাডাম, আমি ডাক্তার নই, ডক্টরেট!” মুখ্যমন্ত্রী জিভ কেটে বলেন, “ও সরি! তা হলে আবু হেনা?” কংগ্রেস বিধায়ক হেনা উঠে জানান, তিনি ডাক্তার নন! আইনজীবী। এ বার মুখ্যমন্ত্রী ধরেন পরিষদীয় সচিব এবং পেশায় সত্যিই চিকিৎসক নির্মল মাজিকে। তখনই তাঁর আরও মন্তব্য, “এই তো মানস ভুঁইয়া (ডাক্তার) আছেন! ওঁর (কুণালের) পালস ৮০। আমারই পালস কখনও কখনও ৪৪ হয়ে যায়!”
পরে অবশ্য সভার বাইরে আর এক ডাক্তার, বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র মন্তব্য করেছেন, পালস অত কম (৪৪) হলে হৃদ্যন্ত্র রুদ্ধ হয়ে মানুষের মৃত্যু হতে পারে!
সামান্য কৌতুকমিশ্রিত এ সব কথা বলার পর মুখ্যমন্ত্রী জানান, “যদি কোনও গাফিলতি (ল্যাপ্স) হয়, (তার জন্যই) তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” তদন্ত চলাকালীন জেল সুপার, ডাক্তার এবং কর্মরত ওয়ার্ডারদেরও সাসপেন্ড করার কথা তখনই জানান তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “উনি (কুণাল) বলেছেন যে, অনেক বেশি ট্যাবলেট খেয়েছেন। ডাক্তার ২-৩টে ট্যাবলেট দিতে পারতেন। পুরো স্ট্রিপ দিলেন কেন? তবে এটা খুব ইন্টারেস্টিং যে, যিনি ওষুধ খেয়েছেন, তিনিই বলছেন খেয়েছেন!”
শেষে মুখ্যমন্ত্রী জানান, “এটা কিন্তু সিবিআই তদন্ত করছে, রাজ্য নয়। তাই সিবিআইকে সব জানানো হয়েছে।” সেই সঙ্গেই তাঁর সংযোজন আত্মহত্যা করা সামাজিক পাপ! আইনত অপরাধও।