বিধায়ক পদে তিনি ইস্তফা দিয়েছেন গত লোকসভা ভোটের পরেই। কিন্তু সরকারি দফতরের খাতায় সোমেন মিত্রের স্ত্রী শিখা মিত্র এখনও বিধায়ক হিসাবেই রয়েছেন! তা-ও যে সে দফতর নয়! স্বাস্থ্য দফতর। যে দফতর রয়েছে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই হাতে! স্বাস্থ্য দফতরের কমিটির বৈঠকের জন্য রীতিমতো চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে শিখাদেবীকে।
এমন ঘটনায় যথেষ্টই পুলকিত সোমেন-জায়া। তাঁর তির্যক মন্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী যে দফতরের মাথায় রয়েছেন, তারই যদি এমন হাল হয়, তার থেকেই বোঝা যায় সরকার কেমন চলছে!” রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা দফতরের একটি উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক ছিল গত ২ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য ভবনে। ওই বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য শিখাদেবীকে গত ২৫ নভেম্বর চিঠি (মেমো নম্বর: H/SFWB/1M-01-2010/3657(18) দিয়েছিলেন পরিবার পরিকল্পনা দফতরের কমিশনার এবং কমিটির চেয়ারপার্সন। শিখাদেবী ২০১১ সালে চৌরঙ্গি থেকে তৃণমূলের বিধায়ক হয়েছিলেন। নতুন সরকারের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই তাঁকে এবং জোড়াসাঁকোর বিধায়ক স্মিতা বক্সীকে ওই কমিটির সদস্য করা হয়েছিল। কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ করায় শিখাদেবীকে ‘সাসপেন্ড’ করার কথা ঘোষণা করেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। তবে দলের কাছ থেকে সাসপেনশনের কোনও চিঠি তিনি পাননি বলে বারবার দাবি করে এসেছেন শিখাদেবী। তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ টানাপড়েনের পরে শেষ পর্যন্ত গত বছর ১৯ মে তিনি বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন। তার পরে সেপ্টেম্বরে চৌরঙ্গিতে উপনির্বাচন হয়ে নতুন বিধায়ক হয়েছেন তৃণমূলেরই নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ তার পরেও শিখাদেবীর কাছে চিঠি আসা থামেনি!
ইস্তফা দেওয়ার পরে সরকারি যে সব কমিটিতে বিধায়ক হিসাবে তিনি সদস্য ছিলেন, তা-ও স্বাভাবিক ভাবে খারিজ হয়ে যায় বলে শিখাদেবীর যুক্তি। কিন্তু পদত্যাগের ৬-৭ মাস পরেও সরকারি নানা দফতর থেকে বিধায়ক হিসাবে চিঠি পাঠানো ছাড়াও ফোন করেও অনেক সময়ে বৈঠকে ডাকা হয় বলে শিখাদেবী জানাচ্ছেন! এমনকী, পদত্যাগ করার পরে বিধায়ক হিসাবে গত ১৫ অগস্ট রেড রোডে কুচকাওয়াজ দেখতে যাবার জন্য সরকারি দফতর থেকে গাড়ি পাঠানো হয়েছিল তাঁকে! তাঁর কথায়, “স্বাস্থ্য দফতর থেকে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আমাকে চিঠি পাঠানো ছাড়াও ফোনে আমাকে বৈঠকে আসার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। আমি বললাম, আমি তো আর বিধায়ক নই, আপনাদের কমিটির সদস্যও নই! তা হলে বৈঠকে কেন যাব? তখন যিনি ফোন করেছিলেন, তিনি বললেন, ‘ওহ, আমাদের কাছে খবর ছিল না’! এই ভাবেই এখানে সরকার চলছে!” বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ, অধুনা কংগ্রেস নেতা সোমেনবাবুর রসিকতা, “এখানে সরকার না পাড়ার ক্লাব চলছে? শিখা যে বিধায়ক নেই, এই তথ্যও সরকারি দফতরে থাকে না?”
বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তাঁর বক্তব্য, “এটা একটা ভুল মাত্র! উনি তো বিশাল মাপের কোনও বিধায়ক ছিলেন না! দিদি (মুখ্যমন্ত্রী) ওঁকে সম্মান দিয়ে কমিটির সদস্য করেছিলেন। এই ভুল আমাদের দেখার কথা নয়! আমার মনে হয়, উনি বিধায়ক আছেন, না-ছেড়ে দিয়েছেন, এটা দফতরের সাধারণ কর্মী, যাঁরা চিঠি পাঠানোর দায়িত্বে থাকেন, তাঁদের জানার কথা নয়।” পদ ছেড়ে দেওয়ার পরেও তাঁকে সরকারি কমিটির বৈঠকে ডাকা নিয়ে মমতা-সরকারকে যে কটাক্ষ শিখাদেবী করেছেন, তা নিয়ে প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা পাল্টা বলছেন, “এতেও উনি সরকারের দোষ খুঁজে পাচ্ছেন? সরকার কেমন চলছে, সেটা বাংলার মানুষ জানেন। সামান্য একটা ভুল নিয়ে মা-মাটি-মানুষের সরকার বিরুদ্ধে কুৎসা করে উনি সুবিধা করতে পারবেন না!”