আসাদুজ্জামান খান কামাল
বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা সারদার কোটি কোটি টাকা বাংলাদেশের মৌলবাদী সংগঠনগুলির হাতে আসার বিষয়ে দিল্লির কাছে যে তথ্য চাওয়া হয়েছে, এই প্রথম স্বীকার করল ঢাকা। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সদস্য আহমেদ হাসান ইমরানের মাধ্যমে এই টাকা এসেছে বলেও বাংলাদেশ সরকার দিল্লির কাছে নালিশ করেছে। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আজ সাংবাদিকদের এই তথ্য চাওয়ার খবর জানিয়ে বলেন, “তবে সারদার টাকা আসা ও তৃণমূলের মৌলবাদী-ঘনিষ্ঠ সাংসদ ইমরানের বিষয়ে দিল্লির কাছে থেকে এখনও কোনও তথ্য আসেনি।”
শেখ হাসিনার সরকারকে উচ্ছেদের মৌলবাদী চক্রান্তে তৃণমূলের জামাত-ঘনিষ্ঠ সাংসদের মাধ্যমে টাকা এসেছে এমন অভিযোগকে অত্যন্ত গুরুতর বলে মনে করছে ঢাকা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যে দিল্লির দৃষ্টি আকর্ষণ করে সবিস্তার তথ্য চেয়েছে, সে খবর আনন্দবাজারে আগেই প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু দিল্লি বা ঢাকা কেউই এত দিন প্রকাশ্যে এ বিষয়ে মুখ খোলেনি। এ দিন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কামাল সাংবাদিকদের বলেন, “ভারতের জঙ্গিদের বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না বলে আমরা আগেই অঙ্গীকার করেছি। ভারতের প্রধানমমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এ বিষয়ে নেত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতার প্রশংসা করেছেন। আমরা আশা করব ভারতও তাদের মাটি থেকে বাংলাদেশের জঙ্গিদের ডেরাগুলি উচ্ছেদ করবে।”
সারদার কোটি কোটি টাকা অ্যাম্বুল্যান্সে করে সীমান্ত এলাকায় নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশের মৌলবাদীদের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে দাবি করা হয়েছে। তৃণমূলের সাংসদ কুণাল ঘোষও জেরায় ইডি-কে এমন খবর জানিয়েছেন। বাংলাদেশের গোয়েন্দারাও সরকারকে জানায়, গত বছর বাংলাদেশ জুড়ে মৌলবাদীদের নাশকতার সময়ে সীমান্ত পেরিয়ে কোটি কোটি টাকা এসেছে বলে তারা জানতে পেরেছে। এ ক্ষেত্রেও উঠে আসে তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য আহমেদ হাসান ইমরানের নাম। বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের দাবি, মৌলবাদী দল জামাতে ইসলামির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে অধুনা নিষিদ্ধ সিমি-র সাবেক নেতা ইমরানের। এর পরেই বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যেমন ইমরানের বিষয়ে দিল্লিকে সতর্ক করে, সারদার কোটি কোটি টাকা বাংলাদেশে যাওয়ার বিষয়েও সবিস্তার তথ্য চেয়ে পাঠায়।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কামাল জানান, দিল্লির কাছ থেকে এ বিষয়ে এখনও কোনও তথ্য মেলেনি, ঠিক যেমন বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণ নিয়েও তাঁরা দিল্লি থেকে সরকারি ভাবে এখনও কোনও খবর পাননি। খাগড়াগড়ে বিস্ফোরক তৈরির সময়ে এক বা একাধিক বাংলাদেশি নাগরিক মারা গিয়েছেন এবং তারা জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-র সদস্য, এখবর সংবাধমাধ্যম থেকে জানতে পেরেছে ঢাকা। তার পরে গত কাল বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসে একটি নোট পাঠিয়ে এ বিষয়ে সবিস্তার তথ্য জানানোর আর্জি জানায়। মন্ত্রী জানান, যত ক্ষণ না দিল্লি কিছু জানাচ্ছে, সরকারি ভাবে তাঁরা কিছুই জানেন না। নিহতদের সম্পর্কে তথ্য পেলে বাংলাদেশ পুলিশের জঙ্গি দমন শাখাও তাদের পরিচিতি ও যোগাযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে পারে। কামাল বলেন, খবরটি যথেষ্ট উদ্বেগের। বাংলাদেশের নিরাপত্তার স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণও। ঢাকা চায়, এ ধরনের কার্যকলাপ ভারত সরকার কড়া হাতে দমন করুক। সে কাজে সব রকম সহযোগিতা করবেন তাঁরা।