সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাজ্যসভার তৃণমূল সদস্য মিঠুন চক্রবর্তীকে বৃহস্পতিবারেই তলব করেছিল কেন্দ্রীয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ওই তদন্ত সংস্থার সঙ্গে দেখা করার জন্য এ দিনই এক মাস সময় চেয়েছেন এই তারকা-সাংসদ।
মিঠুনবাবুর আইনজীবী এ দিন সল্টলেকে ইডি-র দফতরে হাজির হয়ে এই মর্মে আবেদন জানিয়েছেন। তিনি তদন্তকারীদের জানান, তাঁর মক্কেল গত ১৭ জুন ইডি-র নোটিস হাতে পেয়েছেন। কিন্তু তিনি এখন অভিনয়ের কাজে ব্যস্ত। তাই তিনি মাসখানেক সময় চান। এর মধ্যেই ইডি-র দফতরে এসে হাজিরা দেবেন সাংসদ-অভিনেতা। মিঠুনবাবুর এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইডি কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা অবশ্য সরকারি ভাবে এ দিন জানানো হয়নি। তবে ইডি-র এক তদন্তকারী বলেন, “বিষয়টি দফতরের কর্তাদের জানানো হয়েছে। তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেবেন।”
ওই অভিনেতা-সাংসদকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য তাঁর মুম্বইয়ের ঠিকানায় নোটিস পাঠিয়েছিল ইডি। নোটিসে বলা হয়েছিল, মিঠুনবাবুকে যোগাযোগ করতে হবে ইডি-র দিল্লি বা কলকাতার দফতরে। ইডি-র বক্তব্য, সারদার টাকা খরচের খতিয়ান পরীক্ষা করে জানা যায়, সারদার মিডিয়া গ্রুপের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে মিঠুনবাবুকে কয়েক কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। সারদার এক বৈদ্যুতিন চ্যানেলের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন ওই তারকা। সেই অনুষ্ঠানের জন্য কী ধরনের চুক্তি হয়েছিল, পারিশ্রমিক বাবদ মিঠুনবাবু ঠিক কত টাকা নিয়েছিলেন, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এ-সবই জানতে চান ইডি-র তদন্তকারী অফিসারেরা।
সারদা গোষ্ঠীর বিপুল অঙ্কের তছরুপের ব্যাপারে সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা এ দিন মূল অভিযুক্ত সারদা-প্রধান সুদীপ্ত সেন, তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ এবং অন্য অভিযুক্তদের জেরা চালিয়ে গিয়েছেন। সারদার প্রধান হিসেবরক্ষক অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তরুণ রায় নামে অন্য এক হিসেবরক্ষককেও এ দিন জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। তদন্তকারীরা জানান, ওই দু’জনের কাছ থেকে সারদার লেনদেনের বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়েছে। সিবিআই সূত্রের খবর, সুদীপ্ত অনেক বারই প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তিকে সরাসরি টাকা দিয়েছিলেন বলে জেরায় জানা গিয়েছে। কিন্তু সেই সব টাকা হিসেবের খাতায় তোলা হয়নি বলেও হিসেবরক্ষকেরা জানিয়েছেন। সুদীপ্ত সারদার মিডিয়া ব্যবসায় কত টাকা ঢেলেছিলেন, দুই হিসেবরক্ষকের কাছে তা-ও জানতে চেয়েছিলেন তদন্তকারীরা। সিবিআইয়ের এক কর্তা জানান, সুদীপ্ত এবং সারদার অন্যতম ডিরেক্টর মুখোপাধ্যায়ের মুখোমুখি বসিয়ে অজিতেশবাবু ও তরুণবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জেরায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গিয়েছে। সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রোজ ভ্যালিকে তিন মাসে ২০০০ কোটি ফেরাতে নির্দেশ
নিজস্ব প্রতিবেদন
লগ্নিকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা ২,০০০ কোটি টাকা তিন মাসের মধ্যে ফেরত দিতে রোজ ভ্যালিকে নির্দেশ দিল সেবি। রোজ ভ্যালি রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন্স-এর মাধ্যমে ওই টাকা তুলেছিল রোজ ভ্যালি। যে-প্রকল্পের মাধ্যমে ওই টাকা তোলা হয়েছে, সেটি ‘কালেকটিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিম’ বলে জানায় সেবি। এমন প্রকল্প বাজারে ছাড়তে হলে সেবির আগাম অনুমোদন প্রয়োজন, যা রোজ ভ্যালির ছিল না। এ দিন রোজ ভ্যালি গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান গৌতম কুণ্ডু ২,০০০ কোটি টাকা বাজার থেকে তোলার কথা অস্বীকার করে বলেন, “২০১০ সালে প্রকল্পটি বন্ধ করে দিই। তার পর এই প্রকল্পে টাকা তোলা হয়নি। ২০১১-র জানুয়ারিতে সেবি আমাদের শো-কজ করে। তাতে বলা হয় আমরা ১২৭৪ কোটি টাকা তুলেছি। তিন বছরে আমরা লগ্নিকারীদের সিংহভাগ টাকাই ফেরত দিয়েছি। আজকের দিন পর্যন্ত হিসাব ধরলে আর ১৭৫ কোটি টাকা ফেরত দিতে হবে। সেবির নির্দেশ মতো তিন মাসেই টাকা ফেরত দিয়ে দেব।” সেবির নির্দেশে বলা হয়েছে, তিন মাসে এই টাকা ফেরত না দেওয়া হলে সংস্থার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে টাকা মেটানোর ব্যবস্থা করা হবে।