এসজেডিএ তদন্ত

আড়াল করা হচ্ছে মূল অপরাধীদের, তোপ অশোকের

সারদা-কাণ্ড নিয়ে যখন তেতে উঠেছে ভোটের লড়াই, তখনই শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (এসজেডিএ) দুর্নীতি নিয়ে ফের সুর চড়াল বামেরা। সোমবার এসজেডিএ-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য দাবি করেন, ২০০ কোটি টাকার এসজেডিএ দুর্নীতি মামলায় শুধু কয়েক জন ইঞ্জিনিয়ার-ঠিকাদারকে ধরা হয়েছে, আড়াল করা হচ্ছে আসল দুষ্কৃতীদের। এ দিন শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডে দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে এসজেডিএ-কাণ্ডের সিবিআই তদন্তের দাবিতে সরব হন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোকবাবু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৩৮
Share:

সারদা-কাণ্ড নিয়ে যখন তেতে উঠেছে ভোটের লড়াই, তখনই শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (এসজেডিএ) দুর্নীতি নিয়ে ফের সুর চড়াল বামেরা। সোমবার এসজেডিএ-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য দাবি করেন, ২০০ কোটি টাকার এসজেডিএ দুর্নীতি মামলায় শুধু কয়েক জন ইঞ্জিনিয়ার-ঠিকাদারকে ধরা হয়েছে, আড়াল করা হচ্ছে আসল দুষ্কৃতীদের।

Advertisement

এ দিন শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডে দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে এসজেডিএ-কাণ্ডের সিবিআই তদন্তের দাবিতে সরব হন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোকবাবু। বাম আমলে দীর্ঘদিন এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান পদে থাকার সুবাদে অশোকবাবুর দাবি, “এসজেডিএ-র কোনও কাজ চেয়ারম্যান, টেন্ডার কমিটি, বোর্ড সদস্যদের না জানিয়ে হওয়া সম্ভব নয়। সেই কাজের টাকা নয়ছয় হলে সেটা দেখার কথা চেয়ারম্যান-সহ গোটা বোর্ডের। কেউ দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। কিন্তু এসজেডিএ দুর্নীতি মামলায় শুধু কয়েক জন ইঞ্জিনিয়ার-ঠিকাদারকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সংস্থার নীতি নির্ধারকদের আড়াল করার চেষ্টা হয়েছে বলে আমাদের সন্দেহ।”

অশোকবাবুর দাবি, এসজেডিএ-র প্রাক্তন সিইও গোদালা কিরণকুমারকে ধরার পর তৎকালীন পুলিশ কমিশনার কে জয়রামনকে যে ভাবে বদলি করা হয় তাতে তাঁদের সন্দেহ জোরদার হয়েছে। তাই তাঁরা সিবিআই তদন্ত দাবি করেন। অশোকবাবুর অভিযোগ, “এসজেডিএ-কাণ্ডে রাজ্য সরকারের তরফে এফআইআর হলেও সংস্থার তৎকালীন চেয়ারম্যান, টেন্ডার কমিটির কয়েকজন সদস্য, বোর্ডের সদস্যদের একাংশের ভূমিকা নিয়ে এফআইআরে প্রশ্ন তোলা হয়নি।” ৫ মে থেকে এসজেডিএ দুর্নীতিতে যুক্ত নেতা-কর্তাদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্ট।

Advertisement

উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী তথা এসজেডিএ-র বর্তমান চেয়ারম্যান গৌতম দেব বলেন, “এসজেডিএ-র দুর্নীতি নিয়ে রাজ্যই তো মামলা করেছে। তদন্তও হচ্ছে।” সেই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “এসজেডিএ-র ব্যাপারে বিরোধী পক্ষ চারটি মামলা করেছে। সেগুলি বিচারাধীন। তা নিয়ে কারও কিছু বলা ঠিক নয়। তা ছাড়া রাজ্যে নির্বাচনী বিধিনিষেধ লাগু রয়েছে। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী যে সব কথা বলছেন তার প্রেক্ষিতে তাঁকে আইনি চিঠি পাঠানো হবে।” অশোকবাবুর প্রতিক্রিয়া, “সারদা-কাণ্ড, টুজি কেলেঙ্কারি নিয়েও তো হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে। তা নিয়ে আলোচনা, মত প্রকাশ তো সকলেই করছেন। মন্তব্যও করছেন। এসজেডিএ নিয়ে কথা বলা বারণ হবে কেন?”

যাঁর আমলে দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ, এসজেডিএ-র সেই প্রাক্তন চেয়ারম্যান শিলিগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য অবশ্য অভিযোগ করেন, অশোকবাবু বিভ্রান্তি ছড়াতে চান। তিনি বলেন, “অশোকবাবুরা রাজনৈতিক ভাবে দেউলিয়া হয়ে নানা উস্কানিমূলক মন্তব্য করে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছেন। মনে রাখা উচিত শাসক দল তথা মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। আমি নিজে নদী সংস্কারের একটি কাজের অনিয়ম নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছিলাম।”

এসজেডিএ দুর্নীতিকাণ্ডের তদন্তে নেমে পুলিশ দফতরের তিন জন বাস্তুকার ও ঠিকাদার সংস্থার ১০ কর্তাকে ধরে। এঁদের অধিকাংশই এখন জামিনে মুক্ত। তৎকালীন সিইও গোদালা কিরণকুমার, তৎকালীন চেয়ারম্যান তথা শিলিগুড়ির বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য, এসজেডিএ বোর্ডের সদস্য তথা কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকার, প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মা এবং চন্দন ভৌমিককে পুলিশ জেরা করলেও কেউ গ্রেফতার হননি। অশোকবাবু বলেন, “এসজেডিএ দুর্নীতি সংক্রান্ত যে সমস্ত নথি রয়েছে, তা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেটকে (ইডি) জানানো হবে।” কেন অন্তত ২০০ কোটি টাকা নয়ছয় হয়েছে বলে বামেরা আশঙ্কা করছে, তা-ও ইডিকে জানানো হবে, বলেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement