আইনের ফাঁসে পড়ে আবার তৃণমূলকে দুষলেন গুরুঙ্গ

Advertisement

কিশোর সাহা ও রেজা প্রধান

শিলিগুড়ি ও দার্জিলিং শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৪ ০২:৪১
Share:

মোর্চায় যোগদানকারী তৃণমূলকর্মীদের সঙ্গে বিমল গুরুঙ্গ। মঙ্গলবার দার্জিলিঙের মালিধুরায়। ছবি: রবিন রাই।

আইনের ফাঁস যত শক্ত হচ্ছে, ততই তৃণমূলের উপরে চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করছেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ।

Advertisement

মদন তামাঙ্গের দেহরক্ষীকে খুনের চেষ্টার মামলায় ‘ফেরার অভিযুক্ত’ হিসেবে বাড়িতে আদালতের নোটিশ পড়েছে। এক মাসের মধ্যে আদালতে আত্মসমর্পণ না-করলে সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার ফের তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন গুরুঙ্গ। মঙ্গলবার দার্জিলিঙের মালিধুরায় মোর্চা সভাপতি অভিযোগ করেন, “তৃণমূলের মতো এত প্রতিহিংসাপরায়ণ, দুর্নীতিগ্রস্ত দল আমি আগে দেখিনি। ছলে-বলে পাহাড়ে কর্তৃত্ব কায়েম করতে চাইছে তৃণমূল। এটা পাহাড়বাসী সফল হতে দেবেন না।”

আদালত সূত্রের খবর, গুরুঙ্গ ও তাঁর দলের লোকজনদের অনেকেই একাধিক জামিন-অযোগ্য ধারার মামলায় অভিযুক্ত। সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করা, পুলিশকে খুনের চেষ্টা, থানা জ্বালানো-সহ নানা মামলায় শতাধিক মোর্চা নেতা-কর্মীর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের বিধি অনুযায়ী, ভোট প্রক্রিয়া শুরু হতেই দেশের প্রতিটি থানার ফেরার আসামিদের কেন ধরা যাচ্ছে না, তা নিয়ে কার্যত রোজই জেলা প্রশাসনকে কমিশনের কাছে রিপোর্ট দেওয়াটা বাধ্যতামূলক।

Advertisement

সেই রিপোর্টে ফেরার আসামিদের বাড়িতে নোটিস পাঠানো, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে কিনা, তা-ও নিয়মিত জানাতে হয়।

ওই কাজে কোনও গাফিলতি ধরা পড়লে সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে কমিশনের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। গাফিলতি প্রমাণ হলে তাঁদের শাস্তিও দিতে পারে কমিশন। সে কারণেই গুরুঙ্গদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া জোরদার হয়েছে বলে এ দিন জানিয়েছেন ভোট প্রক্রিয়ায় যুক্ত আধিকারিকদের কয়েক জন।

এই অবস্থায় গুরুঙ্গও কমিশন বা প্রশাসনের বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য না-করে তৃণমূলের বিরুদ্ধেই বারবার ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। মদন তামাঙ্গ হত্যা ও তাঁর দেহরক্ষীকে খুনের চেষ্টার মামলায় গ্রেফতারি এড়াতেই কি রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছেন গুরুঙ্গ? জবাবে গুরুঙ্গ বলেন, “আইন-আদালতকে আমরা মর্যাদা দিই। রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে নানা মামলা থাকেই। আমরাও আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই এগোচ্ছি।”

উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী তথা তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির চেয়ারম্যান গৌতম দেব মোর্চার সমালোচনাকে এখনই গুরুত্ব দিতে নারাজ। তিনি বলেন, “তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী সততার প্রতীক। এটা গোটা দুনিয়া জানে। কাজেই আমরা ওই ধরনের মন্তব্যকে গুরুত্ব দিচ্ছি না।” গৌতমবাবু জানান, নির্বাচন কমিশন যে বিধি বলবৎ করেছে, তা মেনে চলতে হবে পুলিশ-প্রশাসনকে। তাঁর কথায়, “কেউ যদি নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে, নির্বাচন কমিশনের উপরে মনে করে, দিনের পর দিন মিথ্যে কথা বলে, তা হলে আমাদেরও যথাযথ পদক্ষেপ করতে হবে।”

বস্তুত আইনি প্রক্রিয়া জোরদার হওয়ায় মোর্চা নেতাদের অনেকেই উদ্বিগ্ন। গুরুঙ্গ-পত্নী আশাদেবী, রোশন গিরি, হরকাবাহাদুর ছেত্রী-সহ দলের প্রথম সারির একাধিক নেতাকেও খুনের চেষ্টার মামলায় ফেরার ঘোষণা করা হয়েছে। ভোটের মুখে তাঁদের গ্রেফতার করা হবে কিনা, তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে মোর্চা নেতাদের। মোর্চার এক নেতা জানান, এই অবস্থায় রাজ্যের শাসকদলকে দোষারোপের রাস্তায় যাওয়া ঠিক কৌশল কিনা, তা নিয়েও দলে মতপার্থক্য রয়েছে। কিন্তু গুরুঙ্গ ও তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুগামীরা পরিস্থিতির রাজনৈতিক মোকাবিলার উপরেই জোর দিয়েছেন।

সেই সঙ্গে নানা এলাকায় মোর্চা ছেড়ে তৃণমূলে সামিল হওয়া পাহাড়ের নেতা-কর্মীদের দলে ফেরানোর প্রক্রিয়ার উপরে জোর দিয়েছেন গুরুঙ্গরা। এ দিনই গুরুঙ্গ দাবি করেছেন, পাহাড়ের নানা এলাকার ৪০০ জন তৃণমূল নেতা-কর্মী ফের মোর্চায় যোগ দিয়েছেন। যদিও তৃণমূলের পাহাড় শাখার মুখপাত্র বিন্নি শর্মার অভিযোগ, “লেনদেনের শর্তেই তৃণমূল ছেড়ে রঞ্জিত আলে এবং তার অনুগামীরা মোর্চায় যোগ দিয়েছেন।” মাস দু’য়েক আগে রঞ্জিত মোর্চা ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন।

অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ, সিপিআরএম-সহ পাহাড়ের মোর্চা-বিরোধী দলগুলিও পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছে। গোর্খা লিগ যেমন বারবারই গুরুঙ্গকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি তুলছে।

তবে পাহাড়ের আবেগের বিষয় মাথায় রেখে এ দিন মোর্চা, গোর্খা লিগ, সিপিআরএম একযোগে জেলা প্রশাসনের ডাকা সর্বদল বৈঠক বয়কট করেছে। পাহাড়ের দলগুলির অভিযোগ মূলত দু’টি। প্রথমত, পাহাড়ের তিন মহকুমার লোকসভা ভোটের গণনা এ বার শিলিগুড়িতে করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দার্জিলিং জেলা প্রশাসন। যা তাদের পছন্দ নয়। দ্বিতীয়ত, সর্বদল বৈঠক জেলাশাসকের নামে ডাকা হলেও এ দিন তিনি অনুপস্থিত ছিলেন।

এ ব্যাপারে দার্জিলিঙের জেলাশাসক পুনিত যাদব বলেন, “দার্জিলিঙের যে কলেজে এত দিন গণনা হতো, তার কর্তৃপক্ষ এ বার আপত্তি করেছেন। তাই স্বীকৃত সব জাতীয় দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেই সমতলে ভোটগণনা কেন্দ্র সরাতে হয়েছে। আর এ দিন সর্বদল বৈঠক ডেকেছিলেন এসডিও। আমি তো নির্বাচন কমিশনের কাজে চোপড়ায় রয়েছি।”

এ দিন কালিম্পঙে মোর্চার ৩৫ জন নেতা-কর্মী সিপিএমে যোগ দিয়েছেন বলে দলের তরফে দাবি করেছেন জেলার কার্যকরী সম্পাদক জীবেশ সরকার। তাঁর দাবি, “মোর্চা ছেড়ে ৩৫ জন সিপিএমে যোগ দেওয়ায় ফল আরও ভাল হবে।” সেই সঙ্গে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য মোর্চা সভাপতির তৃণমূলের সমালোচনার প্রসঙ্গে বলেছেন, “বিমল গুরুঙ্গ শত্রু-মিত্র বোঝেন না। সেটা বুঝলে এমন হতো না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement