আলিপুর আদালতে মাতঙ্গ সিংহ। শনিবার রণজিৎ নন্দীর তোলা ছবি।
মুখে ‘মেডিকেটেড মাস্ক’। কালো হাফ হাতা টি-শার্ট বুক অবধি তুলে পেটে অস্ত্রোপচারের গভীর দাগও দেখালেন বিচারককে। তবুও জামিন পেলেন না সারদা কাণ্ডে ধৃত প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাতঙ্গ সিংহ।
শনিবার আলিপুর আদালতের বিচারক তাঁকে চার দিন (১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিলেন। ৩১ জানুয়ারি গ্রেফতার হওয়ার দিনই মাতঙ্গকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার তাঁকে জেলে পাঠানো হয়। ফলে এ দিনই প্রথম তাঁকে আদালতে তোলা হয়।
এ দিন শুনানির শুরুতেই সিবিআইয়ের আইনজীবী পার্থসারথি দত্ত অভিযোগ করেন, সারদা গোষ্ঠীর থেকে প্রচুর আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন মাতঙ্গ। তাই অভিযুক্তকে সাত দিন নিজেদের হেফাজতে রেখে জেরা করে আরও তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করতে চায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। কিন্তু মাতঙ্গের আইনজীবী সব্যসাচী বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযুক্তের জামিনের আবেদন জানিয়ে বলেন, তাঁর মক্কেলকে এসএসকেএম হাসপাতালে রেখে চিকিৎসকদের উপস্থিতিতে
জেরা করা হোক। তদন্তে তিনি সব রকম সহযোগিতা করেছেন। আগামী দিনেও করতে চান। তাই তাঁকে জামিন দেওয়া হোক।
এর পরে সব্যসাচীবাবু বিচারককে জানান, তাঁর মক্কেল মাতঙ্গ কিছু বলতে চান। মাতঙ্গ বিচারককে জানান, সারদা-তদন্তে রাজ্য সরকারের গড়া শ্যামল সেন কমিশনে হাজিরা দিয়ে তিনি ১৫ লক্ষ টাকা ফিরিয়ে দিয়েছেন। প্রয়োজনে তিনি আরও টাকা ফেরত দিতে রাজি আছেন।
এর পরেই মাতঙ্গ তাঁর অসুস্থতার কথা তুলে ধরেন বিচারকের কাছে। বিচারককে তাঁর পেটের অস্ত্রোপচারের দাগ দেখিয়ে জানান, লন্ডনের একটি হাসপাতালে কয়েক বছর আগে তাঁর লিভার প্রতিস্থাপন হয়েছে। তিনি এখনও অসুস্থ। তাঁর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও খুব কম। সামান্য সংক্রমণ থেকেই তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাঁকে নিয়মিত জীবনদায়ী ওষুধ খেতে হয়। বিচারকের কাছে মাতঙ্গ তাই আর্জি জানান, জামিন না দেওয়া হলেও তাঁকে জেল হেফাজতে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক।
বিচারক অবশ্য মাতঙ্গের কোনও আর্জিই মানেননি। তাঁকে সিবিআই হেফাজতে পাঠিয়েছেন। তবে বিচারক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছেন, মাতঙ্গের চিকিৎসার সব রকম ব্যবস্থা করতে হবে। সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা যখন জেরা করবেন, তখন সেখানে হাজির থাকতে পারবেন তাঁর আইনজীবী।
এ দিকে, এ দিনই সারদা মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত রাজ্যের মন্ত্রী মদন মিত্রের ‘রুটিন’ স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানো হল এসএসকেএম হাসপাতালে। মিনিট ৪৫ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, মন্ত্রীর তেমন কোনও সমস্যা নেই। তাই তাঁকে ভর্তি করারও প্রয়োজন নেই।
এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ সাদা বোলেরো গাড়িতে এসএসকেএমের উডবার্ন ওয়ার্ডে আনা হয় মদনবাবুকে। লিফট খারাপ থাকায় সিঁড়ি দিয়েই উপরে ওঠেন তিনি। হাসপাতাল সূত্রের খবর, সিঁড়ি দিয়ে তিনতলায় পৌঁছে হাঁফাতে থাকেন মন্ত্রী। মদন মিত্রের মেডিক্যাল বোর্ডের অন্যতম চিকিৎসক রাজেন্দ্র পাণ্ডে জানান, মদনবাবুর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। এক সপ্তাহ পরে ফের তাঁর পরীক্ষা হবে।
হাসপাতাল থেকে বেরনোর সময় সাংবাদিকরা মন্ত্রীকে জানান, তাঁর বিরুদ্ধে জেলে থেকে নেশা করার অভিযোগ উঠেছে। জবাবে মদনবাবু বলেন, “যারা সাপ্লাই করছে, তারাই বলতে পারবে।” তবে কি তিনি ওই খবরের সত্যতা মেনে নিচ্ছেন? এ বার কিছুটা মেজাজ হারিয়ে প্রশ্নকর্তাকে বিরক্ত মন্ত্রী বলেন, “তোমার বাড়ির আত্মীয়স্বজন আছে। তাঁদের জিজ্ঞাসা করো। তোমার বাড়িতে যাঁরা বয়স্ক ব্যক্তি আছেন, তাঁরাই বলে দেবেন, কারা সাপ্লাই করছে।”