বীরভূমের তৃণমূল নেতা অশোক মুখোপাধ্যায় খুনে জড়িত সন্দেহে চার সুপারি কিলারকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে ধৃতেরা তাদের কাছে জানিয়েছে, নিজের দাদার খুনের বদলা নিতে ওই ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে অশোকবাবুকে খুন করিয়েছেন দলেরই এক নেতা।
চলতি অগস্ট মাসে বীরভূমে আততায়ীদের গুলিতে খুন হন খয়রাশোল ব্লকের প্রাক্তন তৃণমূল সভাপতি অশোক মুখোপাধ্যায়। ওই ঘটনায় পুলিশ আগেই আট তৃণমূল কর্মী-সমর্থক-সহ ৯ জন ধরেছিল। রবিবার নতুন করে চার ভাড়াটে খুনিকে ধরে বীরভূম পুলিশ। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতেরা কবুল করেছে, গত বছর খুন হওয়া ওই ব্লকেরই তৃণমূল নেতা অশোক ঘোষের ভাই দীপক ঘোষই অশোক মুখোপাধ্যায়কে মারার জন্য তাদের সুপারি দিয়েছিলেন। অশোক ঘোষ খুনে মূল অভিযুক্ত ছিলেন অশোক মুখোপাধ্যায়ই। কিছু দিন আগেও এলাকায় দীপকবাবুই ছিলেন তৃণমূলের শেষকথা। কিন্তু, অশোক মুখোপাধ্যায় খুনে নাম জড়িয়ে যাওয়ার পর থেকেই তিনি ফেরার।
বীরভূমের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া এ দিন দাবি করেন, “পটনা-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ওই সুপারি কিলারদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের জেরা করে জানা গিয়েছে, দীপক ঘোষই খুন করানোর সুপারি দিয়েছিলেন। সুপারির অঙ্ক ৪-৫ লক্ষ টাকা।”পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃতেরা হল বাবলু শর্মা, অঞ্জু সাহু ওরফে পাপ্পু, বদুরুদ্দিন শেখ এবং দিলীপ কুমার। বাবলু বীরভূমেরই সাঁইথিয়ার বাসিন্দা। সঞ্জুর বাড়ি দুর্গাপুরে। বদরুদ্দিন ও দিলীপের বাড়ি যথাক্রমে ঝাড়খণ্ডের নিরসার হিরবাঁধ ও পটনার ফতেয়াগঞ্জে। তবে, আর এক সুপারি কিলার দ্বিজেন্দ্র রাম তাদের নাগাল এড়িয়ে পালিয়েছে বলে পুলিশের দাবি। আজ, সোমবার ধৃতদের আদালতে তোলা হবে।
খয়রাশোলে তৃণমূলের দুই প্রাক্তন ব্লক সভাপতি অশোক ঘোষ এবং অশোক মুখোপাধ্যায় গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। অবৈধ কয়লা কারবারের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে, সেটাই এই দ্বন্দ্বের নেপথ্য বলে তৃণমূল সূত্রেরই খবর। গত বছর ১২ অগস্ট গুলিতে খুন হন অশোক ঘোষ। ঠিক এক বছরের মাথায় চলতি ১৬ অগস্ট একই কায়দায় খুন হন অশোক মুখোপাধ্যায়ও। দু’টি হত্যাকাণ্ডেই নাম জড়িয়েছে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের।
দল ও স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, অশোক মুখোপাধ্যায় বরাবর অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত ছিলেন। আর অশোক ঘোষ ছিলেন তাঁর বিরোধী। অশোক ঘোষ খুনের পরেই গা ঢাকা দেন অশোক মুখোপাধ্যায়। কয়েক মাস পরে তাঁকে ব্লক সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে বিবদমান দুই গোষ্ঠীর (ঘোষ ও মুখোপাধ্যায়) নেতাদের নিয়ে পাঁচ সদস্যের কমিটি গড়ে ব্লকে দল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই কমিটির অন্যতম সদস্য দীপক ঘোষ। লোকসভা ভোটের ঠিক আগেই সিউড়ি আদালত থেকে আগাম জামিন পেয়ে এলাকায় ফেরেন অশোক মুখোপাধ্যায়। ধীরে ধীরে ফের যখন তাঁর প্রভাব বাড়ছে, তখনই খুন হয়ে যান অশোকবাবু।
নিহতের পরিবার অশোক ঘোষের ভাই দীপক ও ছেলে বিশ্বজিৎ ঘোষ-সহ দলেরই ৪৪ জন নেতা-কর্মীর (প্রত্যেকেই ঘোষ গোষ্ঠীর) বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। যদিও দীপকবাবু বা দলের কেউ এই হত্যাকাণ্ডে যুক্ত নন বলে প্রথম থেকেই দাবি করে আসছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। এ বার পুলিশই দীপকবাবুকে ওই খুনের ষড়যন্ত্রে জড়িত বলে দাবি করার পরে অনুব্রতর প্রতিক্রিয়া, “চার জনকে ধরা হয়েছে শুনেছি। কিন্তু দীপক ঘোষ নিয়ে পুলিশ কী বলছে, এ বিষয়ে না জেনে কিছু বলব না।” দীপকবাবুকে ফোন করা হলে তাঁর স্ত্রী মিঠু ঘোষ তা ধরে দাবি করেন, “স্বামী বাড়িতে নেই। তবে, তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ। বদলা নেওয়ার থাকলে তা আগেই ঘটত। আমরা আইনের দ্বারস্থ হতাম না। পুলিশ আমাদের পরিবারকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।”