অশোক খুনে অভিযুক্ত কারা জানতাম না: অনুব্রত

বীরভূমে তিনিই দলের শেষ কথা। আর সেই তিনিই কি না জানেন না, তাঁর অনুগত নেতা খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত কারা কারা! সোমবার সকালে এমনই দাবি করলেন অনুব্রত মণ্ডল। যে ভাবে খয়রাশোলে তৃণমূল নেতা অশোক মুখোপধ্যায়ের হত্যায় দলেরই বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীর নামে এফআইআর করা হয়েছে, তা জেনে তিনি ক্ষুব্ধ বলেও জানিয়েছেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

খয়রাশোল শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৩০
Share:

বীরভূমে তিনিই দলের শেষ কথা। আর সেই তিনিই কি না জানেন না, তাঁর অনুগত নেতা খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত কারা কারা!

Advertisement

সোমবার সকালে এমনই দাবি করলেন অনুব্রত মণ্ডল। যে ভাবে খয়রাশোলে তৃণমূল নেতা অশোক মুখোপধ্যায়ের হত্যায় দলেরই বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীর নামে এফআইআর করা হয়েছে, তা জেনে তিনি ক্ষুব্ধ বলেও জানিয়েছেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি। অনুব্রতর দাবি, “ওই ঘটনার সঙ্গে দলের সম্পর্কই নেই। তার পরও কেন দীপক ঘোষ বা বিশ্বজিৎদের নাম (খয়রাশোলের আর এক নিহত তৃণমূল নেতা অশোক ঘোষের ভাই ও ছেলে) অভিযুক্তের তালিকায় রাখা হল, তা বুঝতে পারছি না।”

অশোক মুখোপাধ্যায়ের হত্যাকাণ্ড দলেরই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের পরিণাম কি না, তা নিয়ে প্রথম থেকেই প্রশ্ন উঠেছে। অনুব্রত প্রথম থেকেই এই বক্তব্য নস্যাৎ করে দিয়েছেন। তার পরেও অশোক ঘোষের (এই নেতার খুনে মূল অভিযুক্ত ছিলেন অশোক মুখোপাধ্যায়ই) ভাই ও ছেলে-সহ এলাকার ৪৪ জন দলীয় নেতা-কর্মীর নামে মুখোপাধ্যায়-পরিবার অভিযোগ করায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্বই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, শীর্ষ নেতৃত্বের ‘অনুমোদন’ ছাড়া কি এমন অভিযোগ করা সম্ভব?

Advertisement

এ প্রশ্নের জবাবে এ দিন অনুব্রত বলেন, “আমি আপনার কাছ থেকেই ওঁদের নাম থাকার কথা জানলাম। কেন এমন হল, দলের তরফে তা অনুসন্ধান করে দেখতে হবে।” অশোক মুখোপাধ্যায়ের ভাই রজত মুখোপাধ্যায়ও দাবি করেছেন, “অভিযোগ জানানোর ক্ষেত্রে আমরা দাদার (অনুব্রত) সঙ্গে কথা বলিনি। এ ব্যাপারে দলের তরফে কোনও নির্দেশ ছিল না। নিজেরাই আলোচনা করে যা করার করেছি।”

রবিবার রাতে খয়রাশোল থানায় যে ৪৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই খয়রাশোলের প্রাক্তন ব্লক তৃণমূল সভাপতি অশোক মুখোপাধ্যায়ের বিরোধী হিসাবে এলাকায় পরিচিত। এবং সকলেই অশোক ঘোষের অনুগামী। অভিযোগের তালিকায় প্রথম নাম থাকা দীপক ঘোষই এখন খয়রাশোল এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতেন। এ ছাড়া নাম আছে অজিত ধীবর, শেখ জয়নাল (দু’জনেই খয়রাশোল পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য), স্বপন সেন, কার্তিক ঘোষ, শঙ্কর গড়াই, মধু বাউড়িদের মতো খয়রাশোলে দলের বিভিন্ন অঞ্চল সভাপতির। পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। কিন্তু ঘটনা হল, এফআইআরে এটাই উল্লেখ করা হয়নি যে, কাপড়ে মুখ ঢাকা আততায়ীরা মোটরবাইকে এসে হামলা চালিয়ে গিয়েছে! খুনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা কিন্তু মোটরবাইক চেপে আসা আততায়ীদের কথাই পুলিশকে জানিয়েছেন। পুলিশ সূত্রের খবর, পাঁচড়া গ্রামের বাজারে যেখানে খুন হয়েছিলেন অশোক মুখোপাধ্যায়, সেই জায়গায় সোমবার রাতে তদন্তে গিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন করে একই কথা জানতে পেরেছেন বীরভূমের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়াও।

এই অবস্থায় অশোক ঘোষের পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ হওয়াটা ‘ঠিক হয়নি’ বলেই মনে করছেন অনুব্রত। তাঁর ঘনিষ্ঠ জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলেন, “দল মনে করছে রাজনৈতিক উদ্দশ্যপ্রণোদিত ভাবেই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।” বিজেপি-র জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলের অবশ্য দাবি, এমনিতেই দুবরাজপুর-খয়রাশোলে খুন-পাল্টা খুনের রাজনীতি শাসক দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। তার উপর অশোক মুখোপাধ্যায়ের খুনের পরে ফের অবৈধ কয়লা কারবার ও তোলাবাজিতে তৃণমূলের যুক্ত থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে এসেছে।

দুধকুমারের কথায়, “এই পরিস্থিতিতে নিজের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ করতে দলের কোনও পক্ষের উপরেই যে তাঁর তেমন নিয়ন্ত্রণ নেই, এটা প্রমাণ করতে অনুব্রত উঠেপড়ে লেগেছেন বলেই মনে হচ্ছে। আসলে যুযুধান দুই অশোকের খুন হওয়ার পরে জেলা তৃণমূল সভাপতিই এখন খয়রাশোলের শেষ কথা!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement