ফুটপাথে ধারাস্নান। ছবি: সুদীপ আচার্য।
কলকাতা চ্যালেঞ্জ জানাল বাঁকুড়াকে! গো-হারান হারিয়ে দিল ঝাড়খণ্ডের রাঁচিকেও!
মঙ্গলবার কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া দফতরের আশঙ্কামতো বুধবার তা প্রায় এক ডিগ্রি বেড়ে পৌঁছে গেল ৪০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সেখানে বাঁকুড়া ৪২.৬ ডিগ্রি। রাঁচি মাত্র ৩৬ ডিগ্রি।
কলকাতার প্রায় ৪১ ডিগ্রির পাশে রাঁচির ৩৬ ডিগ্রি বড় বেমানান! আবহবিদদের মতে, আবহাওয়ার এই আচরণ অস্বাভাবিক। কেন? গ্রীষ্মের স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী উত্তর ভারত যত তপ্ত হয়, সেই গরম বাতাস মধ্য ভারত হয়ে ঢুকে পড়ে পূর্ব ভারতে। অর্থাৎ বিহার, ঝাড়খণ্ড যত বেশি তপ্ত হবে, পশ্চিমবঙ্গে তত বাড়বে গরম। শীতের মতো কলকাতার গরমও অনেকটা নির্ভর করে ঝাড়খণ্ডের তাপমাত্রার উপরে।
এ বার পরিস্থিতিটা অনেকটাই আলাদা। কারণ, এ বার কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকার তাপমাত্রা যখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, তখন রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ডের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকছে এই সময়ের স্বাভাবিকের নীচে। আবহবিদেরা বলছেন, জম্মু-কাশ্মীরের পশ্চিমী ঝঞ্ঝার ফলে এ বার এপ্রিল মাসের প্রথম তিন সপ্তাহে উত্তর ভারত ও মধ্য ভারতে বৃষ্টি হয়েছে। সেই বৃষ্টির রেশ এসে পড়েছে ঝাড়খণ্ডেও। তাই উত্তর ভারতের মতো বাড়তে পারেনি মধ্য ও পূর্ব ভারতের একটা বড় অংশের তাপমাত্রা। তবে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার ফলে বৃষ্টির অনুকূল যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, তা ঝাড়খণ্ডে এসেই শেষ হয়ে গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে পৌঁছতে পারেনি ।
আবহবিদেরা বলছেন, বাতাসে জলীয় বাষ্পের অভাবে তাপমাত্রা বেড়েছে কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায়। ঝাড়খণ্ড লাগোয়া এলাকার তাপমাত্রা সেই অনুপাতে বাড়েনি। তাই কলকাতা ও বাঁকুড়ার মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ফারাকটা তেমন আর নেই। তবে মধ্য ভারত ও ঝাড়খণ্ডের উপরে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাব ইতিমধ্যেই কমতে শুরু করেছে। ফলে সেখানে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়বে। আর তখনই আবহাওয়ার স্বাভাবিক নিয়ম ফিরে আসবে। কলকাতাকে অনেক পিছনে ফেলে রাঁচি কিংবা বাঁকুড়ার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছে যাবে ৪৪-৪৫ ডিগ্রিতে। আর সেই পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা কিংবা কালবৈশাখী তৈরির সম্ভবনাও বেড়ে যাবে।
বাঁকুড়াকে শুধু ধরে ফেলাই নয়, এপ্রিল মাসের তৃতীয় সপ্তাহের কলকাতা প্রতিযোগিতায় নেমেছে দিল্লির সঙ্গে। এখানেও বইছে লু। মানুষকে রাস্তায় বেরোতে হচ্ছে নাক-মুখ ঢেকে। ভরদুপুরে রাস্তাঘাট অনেকটাই সুনসান হয়ে পড়ছে। অতি প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বেরোচ্ছেন না কেউ। যাঁরা বেরোচ্ছেন, ছাতা
কিংবা টুপি ছাড়া একটু হাঁটলেই হাঁপিয়ে পড়ছেন। বাড়িতে থাকলে মিনিটে মিনিটে খেতে হচ্ছে জল। এমন গরম মার্চের শেষ ক’দিন দেখেছিল কলকাতা। মাস খানেক পরে ফের তা-ই ফিরে এল।
আবহবিদেরা বলছেন, ২০০৯ এবং ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে বেশ কয়েক দিন কলকাতার তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪১ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। তবে ওই দিনগুলির থেকে কলকাতার গত দু’দিনের পরিস্থিতি কিছুটা আলাদা। কারণ, ২০০৯ এবং ২০১০ সালে এপ্রিলে ঝাড়খণ্ড এবং ঝাড়খণ্ড সংলগ্ন জেলাগুলির তাপমাত্রাও সমান তালে বেড়েছিল। এ বারেরটা তাই ব্যতিক্রম।
আবহাওয়ার স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী যেখানে দিনের তাপমাত্রা খুব বেশি বাড়ে, সেখানে রাতে তাপমাত্রা দ্রুত কমে যায়। যেমন হয় উত্তর ভারতের ক্ষেত্রে। কলকাতায় কিন্তু তা হচ্ছে না। দিনের বেলা তাপমাত্রা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও, রাতে তাপমাত্রা কমার হার একেবারেই কম। এটাও আবহাওয়ার স্বাভাবিক নিয়মের পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন আবহবিদদের একাংশ।
কেন রাতে সে ভাবে নামছে না কলকাতার তাপমাত্রা?
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানাচ্ছেন, গুজরাত, রাজস্থান কিংবা উত্তর ভারতের মাটির চরিত্র কলকাতার থেকে আলাদা। কলকাতার মাটিতে বালির পরিমাণ কম। উত্তর ভারতের মাটিতে বালির পরিমাণ বেশি। মাটিতে বালি যত বেশি থাকে, সেই মাটি তত তাড়াতাড়ি তাপ শোষণ করে। সন্ধ্যার পরে বালিমাটি থেকে তাপ দ্রুত নির্গত হয়ে বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে চলে যায়। ফলে দ্রুত ঠাণ্ডা হয়ে যায় মাটি।
শুধু তা-ই নয়, গোকুলবাবুর কথায়: “কলকাতা সমুদ্রের খুব কাছে হওয়ায় এখানে রাতের দিকে বঙ্গোপসাগরের জলকণা-পূর্ণ হাওয়া স্থলভূমির দিকে ধেয়ে আসে। বাতাসে জলীয় বাষ্প ঢুকলেই মাটি থেকে তাপ বিকিরণের হার অনেকটা কমে যায়। কলকাতায় রাতের তাপমাত্রা দ্রুত না কমার এটাও একটা কারণ।”
এই অস্বাভাবিক আবহাওয়া থেকে কবে মুক্তি পাবে কলকাতা?
গোকুলবাবু বলেন, “আপাতত আরও দু’দিন এ রকম শুকনো গরম থাকবে কলকাতায়। তবে তাপমাত্রা আর বাড়বে না বলেই আমাদের ধারণা।”
তবে বৃষ্টি এখনও দূর-অস্ত্!
অলঙ্করণ: প্রবাল ধর
তৃণমূলের সাইট হ্যাক
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা
হ্যাক করা হল তৃণমূলের সরকারি ওয়েবসাইটের একটি অংশ। এই ওয়েবসাইটে ‘চেয়ারপার্সন স্পিকস’ বলে একটি অংশে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য তুলে ধরা হয়। বুধবার রাতে সেই অংশটিতে গিয়ে দেখা যায়, হ্যাক করার কথা ঘোষণা করে অবিলম্বে বাংলাদেশকে তিস্তার জল দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। গভীর রাতে বিষয়টি নজরে আসায় তৃণমূল নেতৃত্বকে যোগাযোগ করা যায়নি।