নিহতের বাবা-মা। অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
রাতদুপুরে বিয়েবাড়িতে উচ্চগ্রামে ‘ডিজে বক্স’ বাজানোর প্রতিবাদ করায় খুন হলেন এক যুবক। তাঁকে বাঁচাতে গেলে বাবা, মা, ভাইকেও কুপিয়ে মারার চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা।
বৃহস্পতিবার রাতে মুর্শিদাবাদের ফরাক্কায় বিন্দুগ্রামের সদগোপপাড়ায় ঘটনাটি ঘটে। মৃতের নাম মিঠুন মণ্ডল (৩১)। তাঁর বাবা সুধীর মণ্ডল ও মা মালতীকে জঙ্গিপুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ভাই বিফলের অবস্থা গুরুতর। তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার এক জন গ্রেফতার হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, আততায়ীরা বর-কনের আত্মীয় নয়। স্থানীয় কিছু যুবক বিয়ে উপলক্ষে ‘বক্স’ বাজিয়ে হুল্লোড় করছিল। মধ্যরাতেও তা থামেনি। বরের বাবা দ্বিজেন মণ্ডল বলেন, “বারবার বলেছিলাম, বিয়েতে বাজনা এসেছে, বক্স আনতে হবে না। কেউ শোনেনি।” বিয়েবাড়ির সামনেই মিঠুনের বাড়ি। তিনি বেঙ্গালুরুতে মজুরের কাজ করতেন। বিফলও সেখানেই কাজ করেন। ভোটের আগের দিন গ্রামে এসেছিলেন তিনি। বুধবার আসেন মিঠুন। বক্সের গানের ঠেলায় তাঁর দুই শিশু ঘুমোতে না পেরে কান্নাকাটি করছিল। মিঠুন গিয়ে ছেলেদের বক্সের আওয়াজ কমাতে বলেন। বচসা বেধে যায়। তারই মধ্যে কয়েক জন ছুটে গিয়ে হাঁসুয়া আর লাঠি নিয়ে মিঠুনের উপরে চড়াও হয়।
বাড়ির দরজার সামনে বসে ছিলেন মিঠুনের মা-বাবা। কয়েক জন ছেলেকে হাঁসুয়া দিয়ে কোপাচ্ছে দেখে তাঁরা ছুটে যান। তাঁদেরও গায়ে কোপ পড়ে। ওই বিয়েবাড়ি যাওয়ার জন্যই তৈরি হচ্ছিলেন বিফল। তিনিও ছুটে যান। তাঁকেও হাঁসুয়া দিয়ে কোপায় খুনিরা। গ্রামের এক বৃদ্ধ বলেন, “খুনোখুনির পরেও ছেলেগুলো বক্স থামাতে চাইছিল না। দ্বিজেনবাবু গিয়ে জোর করে বক্স বন্ধ করে দেন।’’
রক্তাক্ত অবস্থায় বাবা-মা আর দুই ছেলেকে প্রথমে ফরাক্কার বেনিয়াগ্রাম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালের পথে মারা যান মিঠুন। পলাতক অভিযুক্তদের এক জনকে পরে পাকড়াও করা হয়। পুলিশ সুপার সি সুধাকর জানান, মিঠুনের স্ত্রী মমতা মণ্ডল সাত জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেছেন। ধৃতের নাম শশাঙ্ক মণ্ডল, তাকে জেরা করে বাকিদের নাগাল পাওয়ার চেষ্টা চলছে।