Biman Bose

আন্দোলন চাই, গুরুত্ব বাড়ুক ‘ইয়ং ব্রিগেডে’র, জোর সওয়াল বিমানের

বিমানবাবু মনে করিয়ে দিয়েছেন, ২০১৫ সালে দলের সাংগঠনিক প্লেনামে সিদ্ধান্ত ছিল, সমর্থক-কর্মীদের মধ্যে থেকে সদস্য করার ক্ষেত্রে কমবয়সিদের গুরুত্ব দেওয়া হবে।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৩৭
Share:

বিমান বসু। —ফাইল চিত্র।

বয়স-নীতি মেনে দলের শীর্ষ স্থানীয় সব কমিটি থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন আগেই। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তরুণ প্রজন্মকে আরও বেশি দায়িত্ব দেওয়ার পক্ষেও সওয়াল চালিয়ে যাচ্ছেন অশীতিপর সিপিএম নেতা বিমান বসু। তাঁর মতে, গত শতাব্দীর ষাটের দশকের মতোই এখন দলের ‘ইয়ং ব্রিগেড’কে বড় ভূমিকা নিতে হবে। সময় এসেছে ‘নতুন ইতিহাস রচনা’ করার দায়িত্ব নেওয়ার। আর সেই কাজে দলের তরুণ অংশ যাতে এগিয়ে যেতে পারে, তার জন্য দলের অভ্যন্তরে তাদের আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে বলে মনে করছেন প্রবীণ বাম নেতা।

Advertisement

সংগঠনে কোনও স্তরেই পুরনো নেতারা যাতে পদ বা কমিটি আঁকড়ে না থেকে যান, দলের ভিতরে বরাবরই সেই বার্তা দিয়ে এসেছেন বিমানবাবু। এ বার দলীয় একটি প্রকাশনারই শারদ-সংখ্যায় ‘নতুন প্রজন্মের কমিউনিস্টদের দায়িত্বশীল ভূমিকা’র কথা তুলে ধরেছেন তিনি। কমবয়সি ছেলে-মেয়েদের সিপিএমের সংগঠনে টেনে আনা বা সদস্য করার ক্ষেত্রে যে এখনও অনেক ঘাটতি রটে গিয়েছে, সেই আত্মসমালোচনার সুরও উঠে এসেছে তাঁর কলমে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, দলের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক তরুণ প্রজন্মকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা ফের সামনে নিয়ে এসেছেন এমন সময়ে, যখন আগামী নভেম্বরের গোড়াতেই সিপিএমের রাজ্য কমিটির বর্ধিত বিশেষ অধিবেশন বসছে। সূত্রের খবর, আগামী ৩ থেকে ৫ নভেম্বর হাওড়ায় প্রায় সাড়ে তিনশো প্রতিনিধির উপস্থিতিতে সিপিএমের ওই বিশেষ অধিবেশনে অন্যতম মুখ্য আলোচ্য বিষয় হতে চলেছে সাংগঠনিক পরিস্থিতি ও তার পর্যালোচনা।

দেশ ও রাজ্যের সমকালীন পরিস্থিতি এবং অতীতের উদাহরণ টেনে শারদ-সংখ্যার ওই নিবন্ধে বিমানবাবু বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, এখন আন্দোলন-সংগ্রামের ধার বাড়ানোর উপযুক্ত সময়। সেই সূত্রেই তাঁর বক্তব্য, ‘এই উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আমাদের পক্ষ থেকে গ্রামীণ ক্ষেত্রে কৃষক ও ক্ষেতমজুর, অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের আন্দোলন এবং শ্রমিক-কর্মচারী ও শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত মানুষজনের লড়াই-সংগ্রাম প্রসারিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল রাজ্যে ছাত্র-যুবদের পরিকল্পিত লড়াই-সংগ্রাম। পার্টির সপ্তম কংগ্রেস (১৯৬৪) পরবর্তী সময়ে যে ভাবে তৎকালীন আন্দোলন-সংগ্রামে ইয়ং ব্রিগেড ভূমিকা পালন করেছিল, এখনকার সময়েও সম্ভবত তাদের সে রকম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। আর এ কাজ করতে হলে পার্টির অভ্যন্তরে তুলনামূলক ভাবে কমবয়সি কমরেডদের একটু বেশি গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে’।

Advertisement

বিমানবাবু মনে করিয়ে দিয়েছেন, ২০১৫ সালে দলের সাংগঠনিক প্লেনামে সিদ্ধান্ত ছিল, সমর্থক-কর্মীদের মধ্যে থেকে সদস্য করার ক্ষেত্রে কমবয়সিদের গুরুত্ব দেওয়া হবে। মহিলাদের বেশি বেশি করে দলে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। প্রবীণ নেতার কথায়, ‘যা আমরা কার্যকরী করার থেকে এখনও অনেক দূরে অবস্থান করছি। এখন আমাদের পার্টিতে প্রয়োজন অনেক বেশি কমবয়সি যুবক-যুবতী। বাধার পাহাড় ডিঙোতে চাই যৌবনদীপ্ত অভিযান। আর এই অভিযান সফল ভাবে পরিচালনা করতে প্রয়োজন বয়স্ক কমিউনিস্টদের পরামর্শে ইয়ং কমিউনিস্টদের লাগাতার লড়াই-সংগ্রাম’।

দলে নিজেকে পরামর্শদাতার ভূমিকাতেই নিয়ে গিয়েছেন বিমানবাবু। সময়-সুযোগ পেলেই তরুণদের তিনি নানা প্রয়োজনীয় বার্তা দেন। তবে ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে আসা এক জন কমিউনিস্ট হিসেবে পুরনো আমলের সঙ্গে এখনকার পরিস্থিতির ফারাকও ব্যাখ্যা করেছেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান। তাঁর যুক্তি, পঞ্চাশ বা ষাটের দশকে যখন উত্তাল কৃষক বা খাদ্য আন্দোলন হয়েছে, ছাত্র সংগ্রাম হয়েছে, তখনও দাবি-দাওয়া নিয়ে সেই সমস্ত আন্দোলন সমাজের সব অংশেরই মনোযোগ টানতে পেরেছিল। উদারীকরণের অর্থনীতির প্রভাব তখন ছিল না। এখন সাধারণ ভাবে মানুষের মধ্যে আত্মকেন্দ্রিকতা বেশি, তার প্রভাব সামাজিক পরিমণ্ডলেও পড়েছে।

তবু এই পরিবর্তিত এবং কঠিন পারিপার্শ্বিকের মধ্যেও ‘কিন্তু কিন্তু মনোভাব’ ছেড়ে আন্দোলন গড়ে তোলার ‘চ্যালেঞ্জ’ নিতে নতুন প্রজন্মকে আহ্বান জানিয়েছেন বর্ষীয়ান বাম নেতা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement