একটি বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে বিমান বসু, সীতারাম ইয়েচুরি ও সূর্যকান্ত মিশ্র। বুধবার ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে সুদীপ আচার্যের তোলা ছবি।
বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে পথে নামতে সিপিএমের কোনও অসুবিধা নেই বলে বুঝিয়ে দিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। এক দিকে কেন্দ্রীয় কমিটির ফরমান এবং অন্য দিকে বামফ্রন্ট শরিকদের প্রবল আপত্তির জেরে রাজ্য সিপিএমের নিচু তলায় বিভ্রান্তি এখন চরমে।
কয়েক দিন আগেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে কংগ্রেসের ডাকা মিছিলে গিয়ে দলের নির্দেশ অমান্য করায় প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করা হয়েছে সিপিএমের বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্যকে। এমতাবস্থায় ইয়েচুরি ফের নির্বাচনী সমঝোতা এবং গণতন্ত্র বাঁচানোর লড়াইকে আলাদা করে দেখাতে চেয়েছেন। ঠিক যে কথা বারবার বলে আসছেন সূর্যকান্ত মিশ্রেরা।
আলিমুদ্দিনে বুধবার দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইয়েচুরি। কেন্দ্রীয় কমিটির ফরমান মেনে রাজ্য সিপিএমের নির্বাচনী কৌশলে ‘সংশোধনে’র পথ বার করতে আগামী ১০ জুলাই কলকাতায় আসছেন এক ঝাঁক পলিটব্যুরো সদস্য। ফের প্রকাশ কারাটদের মুখোমুখি হয়ে কী ভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হবে, তার সূত্রই এখন সন্ধান করছেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। পরে কংগ্রেস নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ইয়েচুরি বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্রের উপরে আক্রমণ এবং সন্ত্রাসের মোকাবিলায় যথাসম্ভব বৃহত্তম ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটি এই নিয়ে কোনও সংশয় রাখেনি। এই বৃহত্তম ঐক্যের মধ্যে কংগ্রেসও আছে।’’ কিন্তু বাম শরিকেরা তো কোনও ক্ষেত্রেই কংগ্রেসকে মানতে নারাজ! ইয়েচুরির জবাব, ‘‘বামফ্রন্ট নামে একটা স্থায়ী মঞ্চ আছে, তার চেয়ারম্যান আছেন। বামফ্রন্টের নিয়মিত বৈঠক হয়। কী করণীয়, সেখানেই ঠিক করতে হবে।’’
নির্বাচনে বঙ্গ সিপিএমের নেওয়া কৌশল যে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির মতের সঙ্গে ‘সঙ্গতিপূর্ণ’ হয়নি, তা-ও এ দিন ফের উল্লেখ করেছেন ইয়েচুরি। তাঁর কথায়, ‘‘কোথায় কৌশলের ভুল হয়েছিল, এখন কী করা হবে, সে সব ঠিক করার ভার কেন্দ্রীয় কমিটি দিয়েছে পলিটব্যুরোকে। কলকাতায় ১০ তারিখ পলিটব্যুরো সদস্যেরা এসে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।’’ সিপিএম সূত্রের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় কমিটি এক বার যে অবস্থান নিয়েছে, একটা রাজ্য কমিটির পক্ষে এখন তা উল্টে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই রাজ্য কমিটির ১০ তারিখের বৈঠকে মূলত পলিটব্যুরোর নেতারাই রাজ্য নেতৃত্বকে নানা পরামর্শ দেবেন। আর আলিমুদ্দিনের চেষ্টা থাকবে রাজ্য কমিটির কিছু সদস্যকে দিয়ে কিছু প্রশ্নে পলিটব্যুরোর ব্যাখ্যা চাওয়ার। যেমন, কলকাতায় প্লেনাম চলাকালীন কারাট কেন বলেছিলেন রাজনীতিতে অসম্ভব বলে কিছু হয় না, প্লেনামের প্রস্তাবেই বা কেন কংগ্রেসের জন্য দরজা বন্ধ করে না দিয়ে ‘নমনীয়তা’র কথা রাখা হয়েছিল— এ সব প্রশ্ন পলিটব্যুরোর কাছে তুলতে চায় আলিমুদ্দিন।
বিতর্ক বা বিভ্রান্তি যা-ই চলুক, বঙ্গ সিপিএমের সুর এখনও ‘মানুষের জোটে’র পক্ষেই। দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যবাবু যেমন এ দিন টুইটে অভিযোগ করেছেন, পশ্চিম মেদিনীপুরের পুরুন্ডায় আদিবাসীদের ১৩টা বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। সরকারি মদতে সন্ত্রাস-রাজ রোজ তীব্রতর হচ্ছে। সূর্যবাবুর মন্তব্য, ‘‘মানুষকে একজোট হয়েই এর প্রতিরোধ করতে হবে।’’
ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে এ দিন ন্যাশনাল বুক এজেন্সির ৭৭তম বর্ষপূর্তির (অনিবার্য কারণে ৭৫ বছরের অনুষ্ঠান হয়নি) অনুষ্ঠানে বক্তা ছিলেন ইয়েচুরি, সূর্যবাবু ও বিমান বসু। নয়া উদারনৈতিক অর্থনীতি ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে মগজের লড়াই ধারালো করতে হলে যুক্তির হাতিয়ারে শান দেওয়ার পক্ষেই সেখানে সওয়াল করেছেন ইয়েচুরি। জার্মানিতে হিটলার জমানার নানা দৃষ্টান্ত টেনে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, এ দেশেও এখন লড়াইটা আসলে চলছে যুক্তির সঙ্গে কুযুক্তির।