বাস্তুহারা: গড়বেতার শিবিরে ছোট আঙারিয়ার ঘরছাড়ারা। ছবি: দীপঙ্কর দে।
ছোট আঙারিয়া: বাতাসে পুজোর গন্ধ। কিন্তু ওঁদের মনে ভয়!
মাঠেঘাটে কাশ দুলছে। পুকুরে পদ্ম-শালুক। কাছের গ্রামে মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। বাইরে কাজে যাওয়া গ্রামবাসীরা ফিরছেন। কিন্তু ওঁরা এখন বে-ঘর। পুজোয় ফিরতে পারবেন কিনা, জানেন না।
কারা ওঁরা? এনামুল হক, গোপাল মণ্ডল, সুনীল মণ্ডল, সইদর খান, ফকির আহমেদরা...অন্তত ১২০ জন। যাঁদের একটা পরিচয়— তৃণমূল কর্মী। আর এক পরিচয়— ছোট আঙারিয়া ও সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা।
আরও পড়ুন: সন্ত্রাস প্রশ্নে তৃণমূলকে হুঁশিয়ারি কৈলাসের
সে-ই ছোট আঙারিয়া। ২০০১ সালের ৪ জানুয়ারি গড়বেতার যে গ্রাম রাতারাতি উঠে এসেছিল রাজ্য-রাজনীতির চর্চায়। তৃণমূল কর্মী বক্তার মণ্ডলের বাড়িতে সে দিন আগুন লাগিয়ে, গুলি করে, মুণ্ডচ্ছেদ করে খুন করা হয়েছিল পাঁচ তৃণমূল কর্মীকে। অভিযুক্ত ছিলেন সিপিএম নেতা তপন ঘোষ, সুকুর আলি-সহ আট জন। মামলা এখনও বিচারাধীন।
কিন্তু সেই বাম আমলেও এনামুল, সইদরদের ঘরছাড়া হতে হয়নি। অথচ, এই ঘোর তৃণমূল জমানাতে তাঁরা ঘরছাড়া! কেউ সপরিবারে দেড় মাস, কেউ দু’মাস, কেউ বা আরও বেশি। কেউ দিল্লিতে আস্তানা গেড়েছেন, কেউ মুম্বইয়ে, কেউ আবার পাশের জেলায় গোপন শিবিরে। অথচ, তপন, সুকুর-সহ সিপিএম নেতাকর্মীরা ছোট আঙারিয়ায় দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ব্যবসা করছেন। কিন্তু কেন এমন উলট-পুরাণ?
ঘরছাড়ারা দুষছেন সিপিএমের ‘হার্মাদ’দের। তাঁদের অভিযোগ, এলাকায় বালি-খাদান, পাথর খাদান এবং মোরাম-খাদানের ব্যবসার দখল নিতে সিপিএমের লোকজনই তাঁদের গ্রামছাড়া করেছে। জীবিকাও হারিয়েছেন তাঁরা। ওই সব খাদানই ছিল তাঁদের রুজি-রুটির ভরসা। এনামুল বলেন, ‘‘আমাদের দল রাজ্যে ক্ষমতায়। অথচ, আমরাই গ্রামছাড়া। গ্রামে করে-কম্মে খাচ্ছে সিপিএমের লোকেরা। গ্রামে যে ফিরব, দল বা প্রশাসনের কোনও সাহায্য পাচ্ছি না। জানি না, কী হবে! তবে কালীঘাটে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে সব বলব। সুব্রত বক্সীকে চিঠি দিয়েছি।’’
শুধু দলের স্থানীয় নেতৃত্ব বা প্রশাসনকেই নয়, ওই ঘরছাড়া তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা দুষছেন পুলিশের একাংশকেও। সইদরের দাবি, ‘‘সিপিএমের লোকেরা পিস্তল হাতে পুলিশের একাংশের মদতে আমাদের গ্রামছাড়া করল। পুলিশ আমাদের গ্রামে ফিরে আসার জন্য আশ্বস্ত করল। কিন্তু গত অগস্টে ঢোকামাত্র মিথ্যা অস্ত্র্ মামলায় ফাঁসিয়ে আমাকে ২৬ দিন হাজতবাস করাল।’’ এই ঘোর তৃণমূল জমানায় এনামুল-সইদরদের অভিযোগ এবং দাবি কতটা বিশ্বাসযোগ্য?
পুলিশের খাতায়, সইদর-সহ ঘরছাড়াদের কয়েকজন ‘দুষ্কৃতী’। দলের ব্লক সভাপতি শ্যামাপদ ঘোষও তাঁদের ‘দুষ্কৃতী’ বলে দাবি করে সমস্যা মেটানোর দায় পুলিশ প্রশাসনের উপরে চাপিয়েছেন। কিন্তু তাতে যে সমস্যা মিটবে না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত সইদর-এনামুলরা। তাঁরা মনে করছেন ‘পোস্ত’র বখরার গোলমাল সহজে মেটার নয়।
(চলবে)