—ফাইল চিত্র।
স্বাধীনতা দিবসে রাজ্যের কুচকাওয়াজে এ বার ‘মুখ’ হয়ে উঠলেন রাজ্যের মহিলারা!
কলকাতা পুলিশের প্রমীলা বাহিনী এ বার শুধু প্যারে়ডেই থেমে থাকেনি। মোটরসাইকেলে চেপে তাক লাগানো ‘স্টান্ট’ দেখিয়েছেন মহিলা পুলিশকর্মীরা। ট্যাবলোয় নজর কে়ড়েছে কন্যাশ্রী, সবুজসাথীর মেয়েরা। বুধবার বৃষ্টিস্নাত সকালে পতাকা তুলে যিনি অভিবাদন নিয়েছেন, তিনিও মহিলা! মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রজাতন্ত্র দিবসে সেনার তত্ত্বাবধানে কুচকাওয়াজ হয়। রাজ্যে পালাবদলের পরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে স্বাধীনতা দিবসেও কুচকাওয়াজ শুরু করে রাজ্য। এ বার সেখানে মূল আকর্ষণই ছিল কলকাতা পুলিশের প্রমীলা বাহিনী। ঘটনাচক্রে, চূড়ান্ত মহড়ার দিন মোটরবাইক নিয়ে পড়ে চোট পেয়েছিলেন এক মহিলা কনস্টেবল। ‘‘কিন্তু সেই ঘটনা যে মনোবলে চিড় ধরায়নি, সেটাই এ দিন প্রমাণ করল আমাদের মেয়েরা,’’ বলছেন এক প্রবীণ পুলিশকর্তা।
সম্প্রতি স্কুটি চেপে অলিগলিতে ‘রোমিও’ ধরার বাহিনী আত্মপ্রকাশ করেছে কলকাতায়। এ দিন কুচকাওয়াজে ছিলেন তাঁরাও। নিয়ম মেনেই ছিল ঘোড়সওয়ার পুলিশ, ট্র্যাফিক পুলিশ-সহ অন্যান্য বাহিনী। কন্যাশ্রী, সবুজসাথীর পাশাপাশি খাদ্যসাথীর মতো নানা সরকারি প্রকল্পের ট্যাবলোও ছিল, হাজির ছিলেন কলকাতার
নামী সঙ্গীতশিল্পীরা।
লালবাজারের কর্তাদের অনেকেই বলছেন, পুলিশ মানেই একটা পুরুষতান্ত্রিক ধারণা সমাজে অনেকের মনেই রয়েছে। সেই চিরাচরিত ধারণাকে বদলানোর পিছনে এ দিন প্রমীলা বাহিনীর প্রদর্শন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। বস্তুত, এ বার প্রজাতন্ত্র দিবসেও সামরিক, আধা-সামরিক বাহিনীর প্রমীলা সদস্যেরা সামনের সারিতে ছিলেন। সেটাই আরও জোরাল হল ‘বাহাত্তুরে’ স্বাধীনতার সকালে।
এ দিন সকালে রেড রোডে যেন খণ্ডচিত্রে রাজ্যটাই ধরা পড়েছে। উত্তর থেকে দক্ষিণ, বিভিন্ন জেলা থেকে নানা ধরনের শিল্পীরা এসেছিলেন। তবে নজর কেড়েছে দার্জিলিঙের নেপালি ছেলেদের ‘কুকরি’ নৃত্য। এ দিনের অনুষ্ঠানে রাজ্য মন্ত্রিসভার পাশাপাশি কলকাতার অবস্থিত বিদেশি দূতাবাসের শীর্ষকর্তারা এবং রাজ্য প্রশাসনের কর্তারাও
হাজির ছিলেন।
শুধু রেড রোড নয়, ৭২-তম স্বাধীনতা দিবসের উদ্যাপন গোটা কলকাতা জুড়েই হয়েছে। বুধবার মধ্যরাত থেকেই বিভিন্ন পাড়ায় উদ্যাপন হয়েছে। এ দিন সকাল থেকেই পাড়ায়-পাড়ায় তেরঙ্গা উঠেছে, রাস্তা সেজেছে পতাকার সারিতে। কিছু ক্লাব এই উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রাক-পুজো জনসংযোগের কাজও সেরে ফেলেছে। দুপুরে একপশলা বৃষ্টির পরে আকাশে নীল রং ধরতেই দেখা গিয়েছে ঘুড়ির ঝাঁক। শহর ও শহরতলির বিভিন্ন পা়ড়ায়-পাড়ায় তখন পেটকাটি, চাঁদিয়াল, মোমবাতিদের তুমুল লড়াই। এবং অবশ্যই ছিল তেরঙা ঘুড়ি! ফিরোজা রঙের আকাশে সেই দৃশ্য দেখে তখন কে বলবে, বেয়া়ড়া নিম্নচাপের দৌলতে মুখ ভার ছিল কলকাতার!
স্বাধীনতা দিবস পালন হয়েছে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সরকারি ও রাজ্য সরকারি দফতরেও। সকালে কলকাতায় নৌসেনা ঘাঁটি ‘আইএনএস নেতাজি সুভাষ’-এ কুচকাওয়াজ হয়েছে। পরে বাহিনীর কর্মী-অফিসারদের উপকূলীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আরও তৎপর হতে বলেন পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত নৌসেনা আধিকারিক কমোডোর সুপ্রভকুমার দে। ফেয়ারলি প্লেসে পূর্ব রেলের সদর দফতর, গার্ডেনরিচে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সদর দফতর এবং জওহরলাল নেহরু রোডে মেট্রো রেলের সদর দফতরে পতাকা উত্তোলন করেছেন রেলের পদস্থ কর্তারা। জাতীয় পতাকা তোলা হয়েছে নবান্ন ও মহাকরণের সামনেও।