প্রতীকী ছবি।
থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত এক শিশুকন্যার মা-কে ‘ডাইনি’ অপবাদে গ্রামছাড়া করতে চাইছেন তাঁরই পড়শিদের একাংশ।
হুগলির হরিপালের বাসুদেবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা ওই মহিলা পঞ্চায়েত প্রধান ও প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। পুলিশি প্রহরায় বুধবার ওই পরিবারটিকে তাঁদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। পরিবারটির নিরাপত্তার বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে পুলিশকে।
সাঁওতালি ভাষায় মাধ্যমিক পাশ করেছেন ওই মহিলা। এখন পেশায় তিনি খেতমজুর। স্বামী ও পাঁচ বছরের শিশুকন্যাকে নিয়ে রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামে থাকেন তিনি। মহিলা জানিয়েছেন, ন’মাস বয়েসে তাঁর মেয়ের থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়ে। তখন থেকেই শিশুটিকে নিয়ে কখনও চুঁচুড়া ইমামবাড়া, কখনও চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালে যেতে হয়েছে তাঁকে। এই নিয়েই এলাকার কিছু মানুষ তাঁকে নানা অপবাদ দিতে শুরু করে বলে অভিযোগ।
সম্প্রতি তাঁদের পড়শির দেড় বছরের একটি শিশু ‘ব্রেন টিউমার’-এ আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এর পরেই তাঁদের উপর অত্যাচার চরমে ওঠে বলে অভিযোগ করেছেন মহিলা। বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে ওই পরিবার আদিবাসীদের একটি সংগঠনকে সব জানান।
সংগঠনের প্রতিনিধিরা গ্রামে আসেন। এসে সবাইকে বোঝানো শুরু করেন, ডাইনি বলে আদপে কিছুই নেই। এর পরে কিছু দিনের জন্য অত্যাচার বন্ধ হলেও সম্প্রতি ফের তা শুরু হয়েছে বলে ওই পরিবারের দাবি।
ওই গ্রামে মোট ৩০টির মতো সাঁওতাল পরিবার বাস করেন। অভিযোগ, এঁদের বেশিরভাগই চান, ওই পরিবার যেন গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যান।কিন্তু লড়াই ছাড়েননি ওই মহিলা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমার বাপ-মায়ের ভিটে। অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে আমি কেন গ্রাম ছাড়ব? কী দোষ আমার আর অসুস্থ মেয়েটার? কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে ওরা আমার উপর যতই অত্যাচার করুক, পুলিশ আর প্রশাসন যদি আমার পাশে থাকে, আমি কোনও মতেই গ্রাম ছাড়াব না।’’
ওই এলাকার বিডিও তপন হালদার জানিয়েছেন, পরিবারটিকে প্রশাসন সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দেবে। ইতিমধ্যেই পুলিশকে সেই মর্মে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। পরিবারটিকে গ্রামে ফিরিয়ে দিয়ে আসা হয়েছে।