নওশাদ সিদ্দিকি। —ফাইল চিত্র।
ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন এক তরুণী। ওই তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে বৌবাজার থানায় ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)-এর বিধায়ক নওশাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের হয়েছে। অভিযোগের তদন্ত করবে বৌবাজার থানার পুলিশ। এ প্রসঙ্গে নওশাদ যদিও জানিয়েছেন, অভিযোগের কপি তিনি পাননি। নওশাদ বিষয়টিকে তাঁর বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের ‘ষড়যন্ত্র’ হিসাবেই দেখছেন। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেছেন, ‘‘সময় এলেই মুখ খুলব।’’
এফআইআরে অভিযোগকারিণী জানিয়েছেন, দেড় বছর আগে তাঁকে বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে নিজের অফিসে আটকে রেখে ধর্ষণ করেছেন নওশাদ। পরে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েও বেশ কয়েক বার সহবাস করেছেন আইএসএফ বিধায়ক। অভিযোগ, এর পর অভিযোগকারিণী বিয়ের জন্য চাপ দিলে তাঁকে এড়িয়ে যেতে থাকেন নওশাদ। বিধায়ক কখনও নিজে, কখনও সহকারীদের দিয়ে তরুণীকে হুমকি দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগকারিণী জানিয়েছেন।
বুধবার নিউ টাউন থানায় প্রথম অভিযোগ দায়ের করেন ওই তরুণী। থানা থেকে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছিলেন, ‘‘এখনই কিছু বলতে চাইছি না। যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁকে জিজ্ঞেস করুন। জিডি (জেনারেল ডায়েরি) করেছি। শারীরিক হেনস্থা করা হয়েছে। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভঙ্গ করেছেন নওশাদ সিদ্দিকি।’’ এর পরেই বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (নিউটাউন) একটি চিঠি-সহ তরুণীর অভিযোগ বৌবাজার থানায় পাঠিয়ে দেন। সেখানেই এফআইআর হয়। নিউটাউন থানায় অভিযোগকারিণী যখন যান, তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত। তৃণমূলের তরফে ভাঙড়ে পঞ্চায়েত ভোট প্রচারের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। তিনি কেন থানায় উপস্থিত, প্রশ্ন করা হলে সব্যসাচী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘এই তরুণীর তরফে আমাদের কাছে অভিযোগ জানানো হয়। ওঁর ভাই এসে বলেন। এঁরা তো সাধারণ মানুষ। কোন থানায় যেতে হবে, কী করতে হবে, এগুলো জানেন না বলে নিউটাউনে এসেছিলেন। এমনিতে তিনি এয়ারপোর্ট থানার অন্তর্গত এলাকায় থাকেন। উনি আমার কাছে আসেন। ভারতের আইনে রয়েছে, কোনও মহিলা যে কোনও নিকটতম থানায় গিয়ে অভিযোগ করলে, যে থানার অভিযোগ, পুলিশ সেখানে পৌঁছে দেবে। আমার নিকটতম থানা যে হেতু নিউটাউন, তাই এখানে আসি।’’
এ ব্যাপারে নওশাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আনন্দবাজা অনলাইন। তিনি বলেন, ‘‘এখনও আমার কাছে কোনও অভিযোগের কপি আসেনি। পুলিশের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়নি। দেখি, কী অভিযোগ করেছে আমার বিরুদ্ধে।’’ গোটা বিষয়টি নিয়ে নওশাদ আঙুল তুলেছেন রাজ্য সরকারের দিকে। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্য সরকার আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করেছে। কখনও খুনের চেষ্টা, কখনও অস্ত্রসমেত খুন— বিভিন্ন মামলা দায়ের করেছে। এমনকি, ৪২ দিন জেলেও রেখেছিল। এটা ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই নয়। সময় এলে এ নিয়ে মুখ খুলব। অপেক্ষা করছি।’’
আগামী শনিবার পঞ্চায়েত ভোট। তার আগে ভাঙড়ের বিধায়কের বিরুদ্ধে এই অভিযোগের প্রভাব কি পড়বে ব্যালটবাক্সে? জবাবে নওশাদ বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে কিছুটা ধাক্কা খাবে। কিন্তু ভোটাররা মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছে যে সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দেবে। অভিযোগ দেওয়া যায়, কিন্তু সত্যতা প্রমাণ করতে হবে।’’