দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রেণু। ডান দিকে, রেণু হাতের কাটা অংশ। নিজস্ব চিত্র।
কেটে দেওয়া হাত কি আবার জোড়া যাবে? নাকি জীবনভর থাকতে হবে ওই অবস্থাতেই? পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের বাসিন্দা রেণু খাতুনের ঘটনায় উঠে আসছে এই প্রশ্নও। আপাতত দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রেণু। ওই হাসপাতালেই নার্স হিসাবে কাজ করতেন তিনি। সরকারি চাকরি পাওয়ার পর শনিবার ইস্তফাও দিয়েছেন।
শনিবার রাতে রেণুর স্বামী শের মহম্মদ শেখ ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর ডান হাত কেটে দেন বলে অভিযোগ। ঘটনার পর রেণুকে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করান তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন। সেখান থেকে তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। এর পর রেণুর পরিবারের লোকজন তাঁকে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করান। রেণুর হাতের কাটা অংশটিও ওই বেসরকারি হাসপাতালেই রয়েছে। ঘটনার পর কেটে গিয়েছে ৩৬ ঘণ্টা সময়। এ সব ক্ষেত্রে সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা। প্লাস্টিক সার্জারির চিকিৎসক অনুপম গোলাসের কথায়, ‘‘কাটা হাতটি কী ভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে তার উপর নির্ভর করছে ওই অংশটি জোড়া লাগানো যাবে কি না। শনিবার ঘটনাটি ঘটে থাকলে এবং সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ না করা হলে কাটা হাতে পচন ধরে যাওয়া স্বাভাবিক। সে ক্ষেত্রে ওই অংশ জোড়া লাগানো সম্ভব নয়।’’
প্রায়ই একই সুর এসএসকেএমের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান গৌতম গুহেরও। তিনি বলছেন, ‘‘হাতের কাটা অংশটি সংরক্ষণ করা গেলে ৬-৮ ঘণ্টার মধ্যে জোড়া লাগাতে হবে। প্রথমে কাটা হাতটিকে প্লাস্টিকে মুড়ে সেটা অন্য একটি পাত্রে বরফের মধ্যে রেখে সংরক্ষণ করতে হবে। তবে ওই ঘটনা যদি শনিবার হয়ে থাকে তা হলে কাটা হাত জোড়া লাগানো প্রায় অসম্ভব।’’
দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও কাটা হাত জোড়া লাগানো সম্ভব বলে মনে করেন অনুপম। তাঁর বক্তব্য, ‘‘শরীরের কোনও অঙ্গ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পরের ৬ ঘণ্টা সময়কে ‘গোল্ডেন পিরিয়ড’ হিসাবে ধরা হয়। কম তাপমাত্রায় সঠিক ভাবে কাটা অঙ্গ সংরক্ষণ করলে সেই সময়টি আরও বাড়ানো যায়। আমি ৩৬ ঘন্টা পরেও একটি কাটা কব্জির সফল অস্ত্রোপচার করেছিলাম। কিন্তু সেই সময় ওই কাটা অংশটিকে ভাল ভাবে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছিল।’’ রেণুকে পিজির মতো সরকারি হাসপাতালে সময়মতো আনা হলে তাঁর কাটা ডান হাত জোড়া লাগানো সম্ভব হত বলেও মনে করেন অনুপম।