সরকারি হোমে থাকা মহিলা আবাসিকদের নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর মন্তব্য করলেন এক বিচারক! লিলুয়া হোমের ভিতরে এক আবাসিকের ধর্ষণের মামলার রায় দিতে গিয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণ এমন চলতে থাকলে যৌনপল্লিতে পরিণত হবে সরকারি হোমগুলি!
ওই মামলায় অভিযুক্ত সুব্রত পন্থ নামে হোমের এক প্রাক্তন সাফাইকর্মীকে পাঁচ বছরের জেল এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দিয়েছেন হাওড়া প্রথম ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের ওই বিচারক মৌ চট্টোপাধ্যায়।
কী হয়েছিল ঘটনাটা?
আদালত সূত্রের খবর, ২০০১ সালের জুলাইয়ে লিলুয়া হোম কর্তৃপক্ষ জানতে পারেন, মূক বধির ওই তরুণী আবাসিক ছ’মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ধর্ষণের শিকার হয়েই লিলুয়া হোমে ঠাঁই হয়েছিল ওই তরুণীর। অভ্যন্তরীণ তদন্তে জানা যায়, হোমের সাফাইকর্মী সুব্রতই ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেছেন। সুব্রত নিজেও মূক-বধির। এর পরে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। আদালতের একটি সূত্র জানাচ্ছে, হোমের ভিতরে এমন একটি ঘটনা ঘটলেও আড়াই বছর বিষয়টি রাজ্য সমাজকল্যাণ দফতরের ভিতরেই আটকে ছিল। ২০০৩ সালের ১৭ নভেম্বর এ বিষয়ে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করার পর সুব্রতকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধর্ষণের জেরে ওই তরুণীর একটি পুত্রসন্তান হয়েছিল। ডিএনএ পরীক্ষায় তার সঙ্গে সুব্রতর সম্পর্কও মিলে যায়।
বিচার প্রক্রিয়া শুরুর পরে সুব্রত তাঁর আইনজীবীর মাধ্যমে জানায়, সে ওই তরুণীকে বিয়ে করতে রাজি। সেই মতো আদালত লিলুয়া হোমকে বিষয়টি জানায়। সে সময়ই লিলুয়া হোম কর্তৃপক্ষ জানান, সুব্রত এর আগে ওই হোমের আর এক মূক বধির তরুণীকে বিয়ে করেছিল। তাদের একটি মেয়েও রয়েছে। এর পরেই ফের সুব্রতর বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করে আদালত।
এই মামলায় সুব্রতর আইনজীবী দাবি করেছিলেন, ওই তরুণীর সম্মতিতেই তাঁর সঙ্গে সুব্রতর শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল। যদিও বিচারক জানান, হোমে থাকা কোনও আবাসিকের ক্ষেত্রে এমন সম্মতির প্রশ্নই ওঠে না। এই প্রসঙ্গেই বিচারক বলেন এমন চলতে থাকলে হোমগুলি তো যৌনপল্লিতে রূপান্তরিত হয়ে যাবে!
আইনজীবীদের একাংশের দাবি, কোনও হোমের আবাসিককে সেই হোমের কর্মী ধর্ষণ করলে সর্বোচ্চ ১০ বছরের জেল হতে পারে। তা হলে সুব্রতকে পাঁচ বছরের সাজা দেওয়া হল কেন? আইনজ্ঞদের মতে, সুব্রত প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণেই হয়তো সাজায় কিছুটা ছাড় পেয়েছে।
বস্তুত, লিলুয়া হোম থেকে আবাসিকদের পালানোর ঘটনা প্রায়ই ঘটে। গত বছরের জুলাইয়ে পনেরো দিনের মধ্যে তিন বার পালানোর ঘটনা ঘটেছিল। হোমের কর্মীদের প্রতি মারমুখীও হয়ে উঠেছিলেন কয়েক জন আবাসিক। সে সময় আবাসিকেরা হোমের পুরুষকর্মীদের বিরুদ্ধে অশ্লীল আচরণের অভিযোগ তুলেছিলেন। অনেকেই মনে করছেন, সুব্রতর ঘটনা সেই অভিযোগকেই ভিত্তি দিয়েছে।
বিচারকের এ দিনের মন্তব্যের পর উঠে এসেছে গুড়িয়া প্রসঙ্গও। ২০১২-এর জুনে হুগলির গুড়াপে একটি বেসরকারি হোমে গুড়িয়া নামে এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবতীর মৃত্যুর ঘটনাতেও হোমে যৌন নিগ্রহের বিষয়টি সামনে আসে। গুড়িয়ার দেহ উদ্ধারের পর তদন্তকারীরা জানতে পারেন, হোমের সম্পাদক উদয়চাঁদ কোনার ও তার কয়েক জন সহযোগী আবাসিক মহিলাদের ওপর নির্যাতন-ধর্ষণ চালাত। পরে দামোদরের চর থেকে আরও কয়েক জন মহিলা আবাসিকের দেহ উদ্ধার করা হয়।