ঠাসাঠাসি: মেট্রো-যাত্রার এই পরিচিত ছবির কথা ভেবেই দোলাচলে যাত্রীরা। ফাইল চিত্র
অর্ণব চট্টোপাধ্যায়
শিক্ষক
বার বার দূরত্ব-বিধি মেনে চলতে বলা হলেও দোকান, বাজারে সেই আগের মতোই ভিড় হচ্ছে। পুলিশ-প্রশাসনও কিছু করতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে মেট্রোয় কী ভাবে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা হবে, জানি না। আগে দিনের ব্যস্ত সময়ে দমদম থেকে মেট্রোর দরজা খোলা মাত্র জলের স্রোতের মতো যাত্রীরা উঠতেন। সকলের মতো আমিও তেমন ভাবেই উঠতাম। প্রথমে বাসে দূরত্ব-বিধি মানা হবে বললেও, এখন আর তা হচ্ছে না। সংক্রমণের আশঙ্কা না থাকলে গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য মেট্রোর মতো ভাল মাধ্যম হয় না। তবে এসিতে সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি, তাই কয়েকটা মাস নন এসি রেক বেশি চালালে ভাল হবে।
সৃজনী দাস
স্নাতক স্তরের ছাত্রী, বেথুন কলেজ
কলেজ যাওয়ার জন্য রোজ কুঁদঘাট থেকে গিরিশ পার্ক যেতাম। শহরের দক্ষিণ থেকে উত্তরে যাতায়াতের জন্য মেট্রোই সব চেয়ে ভাল মাধ্যম, ৩৫ মিনিটেই গিরিশ পার্ক পৌঁছতে পারি। কিন্তু এখন মেট্রো চালু হলে দূরত্ব-বিধি কতটা, কী ভাবে মেনে চলা হচ্ছে, তা বুঝতে সময় লাগবে। তাই মেট্রো চালুর পরে অন্তত মাসখানেক বিষয়টি নজরে রাখা দরকার। তবে আমার মনে হয় সব বিধি মেনে চলতে গেলে মেট্রোর সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। নয়তো বাসের মতো ভিড় হতে থাকবে।
তানিয়া চট্টোপাধ্যায়
বেসরকারি সংস্থার কর্মী
নোয়াপাড়া থেকে মেট্রোয় চেপে ধর্মতলায় অফিস যেতাম। এখন বাসে চেপে যেতে হচ্ছে। বাস কখন পাব, তার ঠিক থাকে না। অফিসে পৌঁছতে দেরি হলে অসুবিধায় পড়ছি। মেট্রো চালু হলে তাতেই যাব। অফিসটা অন্তত ঠিক সময়ে পৌঁছনো যাবে। সরকারি বাসে রুটের মধ্যে কোনও স্টপ থেকে যাত্রী তোলা হচ্ছে না। বেসরকারি বাসে যেটুকু ভিড় হচ্ছে, তাতেও সংক্রমণের আশঙ্কা ষোলো আনাই রয়েছে। তাই মেট্রোয় সংক্রমণের ভয় পেলে আর চলবে না, পেটের দায় যে রয়েছে।
আরও পড়ুন: এক দিনে সুস্থ সবচেয়ে বেশি, করোনা সংক্রমণের হার ৭.০৯ শতাংশ
সন্দীপ ভট্টাচার্য
বিমা সংস্থার এজেন্ট
সপ্তাহে অন্তত চার দিন নোয়াপাড়া থেকে পার্ক স্ট্রিট যেতে হয়। আগে মেট্রোয় যেতাম, এখন উপায় না থাকায় বাসে যেতে হচ্ছিল। কিন্তু অধিকাংশ বেসরকারি বাসেই দূরত্ব-বিধি মানা সম্ভব হচ্ছে না, বেশ ভিড় থাকছে। আর সময়ও বেশি লাগছে। সেখানে মেট্রোয় অনেক কম সময়ে পার্ক স্ট্রিট পৌঁছতে পারব। এত দিন লকডাউনের ফলে এমনিতেই কাজকর্মের অবস্থা খারাপ। তাই সংক্রমণের কথা ভেবে আর বসে থাকলে চলবে না। সময়মতো কাজের জায়গায় পৌঁছনোর জন্য মেট্রোই ভরসা।
আরও পড়ুন: ‘আমার মানসিক সমস্যা! আসল তথ্য জানেন?’ বিস্ফোরক রত্না চট্টোপাধ্যায়
অঞ্জিতা পাল
স্নাতকোত্তরের ছাত্রী, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়
নোয়াপাড়া থেকে মেট্রোয় চেপে মহাত্মা গাঁধী রোডে গিয়ে নামলে অনেক কম সময়ে বরাহনগরের বাড়ি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছতে পারতাম। মেট্রো চালু হলে যাতায়াতে অনেক সুবিধা হবে ঠিকই। কিন্তু প্রশ্ন হল, এই পরিস্থিতিতে কি মেট্রো চালু করা ঠিক হচ্ছে? আমার ব্যক্তিগত মত, একদমই ঠিক হচ্ছে না। কারণ মেট্রোর কামরাগুলি বদ্ধ। সেখানে কে কত ক্ষণ মাস্ক পরে থাকতে পারবেন, তা বোঝা মুশকিল। আর দূরত্ব-বিধির কথা বলা হলেও, একটা সময়ের পরে বাসে তা মানা সম্ভব হয়নি। মেট্রোতেও কতটা বিধি মানা যাবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।
নিতাই সাহা
বেসরকারি সংস্থার কর্মী
মেট্রোয় কোনও ভাবেই দূরত্ব-বিধি মানা সম্ভব হবে না। মেট্রো চালু হবে শুনেছি, কিন্তু যাত্রীদের কী নিয়ম মেনে চলবে হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। রাস্তায় বেসরকারি বাসের সংখ্যা কম রয়েছে, কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে মানুষ মেট্রোকেই প্রাধান্য দেবেন। তাতে যে ভিড় হবে, সেটা আটকানো সহজ হবে না বলেই মনে হয়। চাঁদনি চকে অফিসে যাওয়ার জন্য প্রতিদিন দমদম থেকে মেট্রো ধরতাম। সকালে এবং সন্ধ্যায় দমদমে প্ল্যাটফর্মে যেমন ভিড় হয়, সেখানে দূরত্ব-বিধি মানা কখনওই সম্ভব হবে না।