প্রতীকী ছবি।
বেশ কিছু কাল ধরেই ক্ষোভ জমছিল তাঁদের ভিতরে। কোভিড আবহে সেটা ফেটে পড়ল। সরকারি নির্দেশের বিরুদ্ধে কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করে গ্রামীণ চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিলেন, চিকিৎসার প্রয়োজনে রোগীকে স্যালাইন, ইঞ্জেকশন, অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া, ক্ষত সেলাই করা— সবই তাঁরা করছেন, ভবিষ্যতেও করবেন।
বঙ্গে গ্রামীণ ডাক্তারদের সর্ববৃহৎ সংগঠন ‘রাজ্য পল্লি চিকিৎসক সংগঠন’-এর বক্তব্য, করোনা-কালে অধিকাংশ সরকারি হাসপাতাল পরিষেবা দিতে ব্যর্থ। মানুষ অসময়ে পল্লি চিকিৎসকদের কাছে পরিষেবা পান, তাই তাঁদের কাছে যাওয়ার অধিকার মানুষের আছে। আর সেই সব রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার অধিকার আছে গ্রামীণ ডাক্তারদেরও।
২০১৪-১৫ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ চিকিৎসকেরা ‘হাতুড়ে ডাক্তার’ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। এই পরিচিতি ‘অসম্মানজনক’ বলে অভিযোগ তুলে তাঁরা দীর্ঘ আন্দোলন চালান। ২০১৫ সালে সরকারের সঙ্গে তাঁদের আলোচনার ভিত্তিতে ঠিক হয়, এ বার থেকে হাতুড়ের বদলে তাঁরা গ্রামীণ চিকিৎসক বা ‘গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবক’ হিসেবে পরিচিত হবেন। সরকার তাঁদের প্রশিক্ষণ দেবে। তবে স্যালাইন, ইঞ্জেকশন, অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া, অস্ত্রোপচার, ক্ষত সেলাইয়ের মতো কাজ তাঁরা করতে পারবেন না। এই মর্মে নির্দেশিকাও দেয় সরকার।
রাজ্য পল্লি চিকিৎসক সংগঠনের (সদস্য অন্তত এক লক্ষ) সচিব অরুণকুমার ঘোষ জানান, সরকারি প্রশিক্ষণ এখন অত্যন্ত অনিয়মিত। গ্রামীণ চিকিৎসকেরা সামনের সারির কোভিড যোদ্ধা হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা অসুস্থ হলে বা মারা গেলে তাঁদের পরিবার সরকারি অর্থসাহায্য পান না। এমনকি পিপিই, গ্লাভস বা মাস্ক— কিছুই দেওয়া হয় না তাঁদের। ‘‘আমরা সরকারের কাছে আর কিছু প্রত্যাশা করি না। কিন্তু সরকারি নিষেধাজ্ঞাও মানতে পারছি না। আমরা ক্ষত সেলাই করছি, ইঞ্জেকশন, স্যালাইন, অ্যান্টিবায়োটিক দিচ্ছি এবং দেব।’’ সংগঠনের প্রেসিডেন্ট দিলীপকুমার পান জানান, পরিষেবা দিতে গিয়ে রাজ্যে করোনা-আক্রান্ত হয়ে অন্তত ২৪ জন গ্রামীণ চিকিৎসক মারা গিয়েছেন। আক্রান্ত অন্তত ২৫০। তাঁর কথায়, ‘‘সরকারি উপদেষ্টা দলের সদস্য অভিজিৎ চৌধুরী প্রতি সপ্তাহে টেলি-সম্মেলন করে আমাদের বলছেন ‘কোভিড যোদ্ধা’। করোনা রোধে সরকারের সঙ্গে কাজ করতে বলছেন। অথচ সরকারকে উনি এটা বলতে পারছেন না যে, আমাদেরও পিপিই, গ্লাভস, মাস্ক দেওয়া হোক, সরকারি স্বাস্থ্য বিমার আওতায় আনা হোক!’’
অভিজিৎবাবুর বক্তব্য, অধিকাংশ বড় ডাক্তার লুকিয়ে পড়েছেন। গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবকেরাই গ্রামে চিকিৎসা দিচ্ছেন। কিন্তু সরকার তো ওঁদের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারে না। আইনত ওঁরা অ্যান্টিবায়োটিক বা ইঞ্জেকশন দিতে পারেন না। ‘‘এটা সত্যি যে, করোনা-আবহে অনেক জায়গায় সরকারি পরিষেবা অপ্রতুল। আমি যদি কাউকে পরিষেবা দিতে না-পারি, অন্য জায়গা থেকে তাঁর পরিষেবা নেওয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়ার অধিকারও আমার থাকে না,’’ বলেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী।