কুকুরছানা খুনের বিচার চাইছেন কোরপানের স্ত্রীও

চার বছর পরে ঘটনাস্থল ফের সেই এনআরএস হাসপাতাল। কুকুরছানা পিটিয়ে মারার অভিযুক্তরাও নার্সিং পড়ুয়া। মঙ্গলবারই টিভি দেখে এই ঘটনার কথা জেনেছেন অর্জিনা।

Advertisement

নুরুল আবসার

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:০৬
Share:

সন্তানদের নিয়ে কোরপান শাহের স্ত্রী। —ফাইল ছবি

চার বছর আগে এনআরএস হাসপাতালে স্বামীকে পিটিয়ে মারার বিচার চেয়েছিলেন। এ বার তিনি সরব হলেন ওই হাসপাতালেই ১৬টি কুকুরছানার খুনিদের শাস্তির দাবিতে।

Advertisement

২০১৪ সালে ১৫ নভেম্বর উলুবেড়িয়া বাণীতবলার শা’পাড়ার মানসিক প্রতিবন্ধী কোরপান শা-র মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল এসআরএস হাসপাতালের চারতলার ছাত্রাবাসে। টিভিতে কোরপানের জামার ছবি দেখে রাতেই তাঁর স্ত্রী আর্জিনা চলে আসেন এন্টালি থানায়। স্বামীর দেহ শনাক্ত করেন। ঘটনাটিতে রাজ্য জুড়ে তোলপাড় হয়। আর্জিনা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, তাঁর স্বামীকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, ‘চোর’ অপবাদ দিয়ে কোরপানকে পিটিয়ে মারে ডাক্তারির কয়েক জন ছাত্র এবং ছাত্রাবাসের কর্মীরা। মোট ১২ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ খুনের মামলা রজু করে। অভিযুক্তদের মধ্যে ১০ জন ডাক্তারি পড়ুয়া, ২ জন ছাত্রাবাসকর্মী। ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ১২ জনের বিরুদ্ধেই চার্জশিট দেয় পুলিশ। সেই মামলার রায়ের জন্য এখন অপেক্ষা করছেন আর্জিনা।

চার বছর পরে ঘটনাস্থল ফের সেই এনআরএস হাসপাতাল। কুকুরছানা পিটিয়ে মারার অভিযুক্তরাও নার্সিং পড়ুয়া। মঙ্গলবারই টিভি দেখে এই ঘটনার কথা জেনেছেন অর্জিনা। সন্ধ্যায় নিজের বাড়িতে বসে চোখের জল মুছে বলেন, ‘‘আমার স্বামী মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। পাগলই বলা চলে। পাগলরা কি কোনও অন্যায় করতে পারে? সেটা এক বারও মনে হল না ডাক্তারির ছাত্রদের?’’ কিছু ক্ষণ চুপ করে থেকে ধরা গলায় বললেন, ‘‘কুকুরছানা কী বা দোষ করতে পারে! নার্সদের মাথায় এটা ঢুকল না? সবাই তো জঘন্য খেলায় মেতেছে! এই মানুষ পিটিয়ে মারছে, এই আবার কুকুরছানা মারছে। অথচ তাঁদের হাতেই তো জীবের জীবন ফিরে পাওয়ার কথা, সেবা
পাওয়ার কথা।’’

Advertisement

আর্জিনার তিন ছেলে, দুই মেয়ে। ছোট ছেলের জন্ম হয় কোরপানের মৃত্যুর পাঁচ মাস পরে। স্বামীর মৃত্যুর পরে রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনী এবং সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কমিটি থেকে কিছু আর্থিক সহায়তা এসেছিল। কয়েক জন ব্যক্তিগত ভাবেও কিছু আর্থিক সহায়তা করেছিলেন। এখন পাঁচ ছেলে-মেয়েকে মা রিজিয়ার জিম্মায় রেখে ডোমজুড়ের অঙ্কুরহাটিতে একটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতে যান তিনি। ভোরে যখন কাজে যান, ছোট ছেলে তখন ঘুমিয়ে কাদা। সন্ধ্যায় যখন ফেরেন, সারা দিন অপেক্ষায় থাকা সাড়ে তিন বছরের ছেলে আর মায়ের কোল থেকে নামতেই চায় না। ছেলেকে কোলে নিয়ে নিজেকে সামলে আর্জিনা বলেন, ‘‘আমার স্বামীর খুনিদের শাস্তি চাই। কুকুরছানা খুনের দোষীদেরও কঠোর সাজা হওয়ার দরকার। কেউ যেন রেহাই না পায়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement