Narada Scam

স্পিকারের রক্ষাকবচ কি বিশেষ সুবিধা

প্রবীণ আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে হলেই ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৭ ধারায় সংশ্লিষ্ট কর্মীর কর্তৃপক্ষের অনুমতি প্রয়োজন হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:৩৯
Share:

—প্রতীকী ছবি।

নারদ মামলায় একাধিক বিধায়ক-সাংসদ অভিযুক্ত। কিন্তু চার্জশিট পেশ করতে গেলে লোকসভা ও বিধানসভার স্পিকারের অনুমতি প্রয়োজন। আপাতত সেই জটেই আটকে রয়েছে চার্জশিট পেশ। প্রশ্ন উঠেছে, অভিযোগের সারবত্তা থাকলে স্পিকারের অনুমতির প্রয়োজন হচ্ছে কেন? কেন সরাসরি চার্জশিট পেশ করতে পারছে না সিবিআই?

Advertisement

প্রবীণ আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে হলেই ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৭ ধারায় সংশ্লিষ্ট কর্মীর কর্তৃপক্ষের অনুমতি প্রয়োজন হয়। ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী, বিধায়ক, সাংসদেরাও সরকারি কর্মীদের তালিকায় রয়েছেন। তাই, এই রক্ষাকবচের আওতায় রয়েছেন তাঁরা। বিধায়ক এবং সাংসদেরা যেহেতু যথাক্রমে বিধানসভা এবং লোকসভার স্পিকারের অধীনে, তাই তাঁদের ক্ষেত্রে স্পিকারের অনুমতি প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে প্রাক্তন বিধায়ক ও সাংসদদেরও রক্ষাকবচ রয়েছে।’’

আইনজীবীরা জানান, ১৯৭৩ সালে ফৌজদারি কার্যবিধিতে এই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৯১ সালে তা একবার সংশোধিত করা হয়। কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী কল্লোল মণ্ডল বলেন, ‘‘সরকারি কর্মী এবং জনপ্রতিনিধিরা যাঁর অধীনে রয়েছেন, আদালতে মামলা গ্রহণের ক্ষেত্রে তার সম্মতি লাগে। চার্জশিট দিলে যেহেতু আদালতকে মামলা গ্রহণ করতেই হবে, তাই চার্জশিট দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়া হয়।’’ তবে এই রক্ষাকবচ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে আমজনতার মনে। অনেকেই বলতে পারেন, সংবিধান অনুযায়ী, আইনের চোখে সবাই সমান। তা হলে কি সরকারি কর্মী বা বিধায়ক-সাংসদেরা এ ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা(প্রিভিলেজ়ড লিটিগ্যান্ট) পাচ্ছেন না? বৈষম্য হচ্ছে না?

Advertisement

কল্লোলবাবুর ব্যাখ্যা, সরকারি কর্মীরা যেহেতু নানা ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাই এই রক্ষাকবচ দেওয়া হয়েছে। না হলে যে কেউ মামলা দায়ের করে দিতে পারেন। এই রক্ষাকবচ না থাকলে মামলায় জর্জরিত হয়ে গিয়ে তাঁরা হয়তো কাজই করতে পারবেন না। তাঁর বক্তব্য, মূলত তিনটি কারণে এই রক্ষাকবচ দেওয়া হয়েছিল। প্রথমত, আক্রোশের বশে ভুয়ো মামলা যাতে দায়ের না-হয়। দ্বিতীয়ত, সরকারি কর্মীকে কাজ করতে গিয়ে যাতে অহেতুক হেনস্থার শিকার না-হতে হয়। তৃতীয়ত, সরকারি কর্মী যেহেতু জনগণের কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাই তিনি হেনস্থার শিকার হলে জনগণের কাজ ব্যাহত হবে। সরকারি কাজ যাতে ব্যাহত না-হয় সেটা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ।

প্রশ্ন উঠেছে, তদন্তকারীদের কাছে প্রামাণ্য নথি থাকলে কী হবে? যদি কেউ অপরাধ করে থাকেন, স্পিকার অনুমতি না দিলে তিনি তো ছাড় পেয়ে যাবেন। কল্লোলবাবুর ব্যাখ্যা, প্রামাণ্য নথি যদি থাকে, তা হলে কর্তৃপক্ষ নিশ্চয় অনুমতি দেবেন। তাঁরা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবেন না, সেটাই তো স্বাভাবিক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement