টাকা লেনদেনের নারদ-ছবি সত্যি হয়ে থাকলে আদালত চোখ বুজে থাকতে পারে কি না, আগেই সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রে। বৃহস্পতিবার তিনি প্রশ্ন তুললেন, ‘‘রাজ্য সরকারই তো বলেছে, টাকা নেওয়ার ঘটনার তদন্ত হবে। আমরা যদি বলি, সরকার তদন্ত করলেও নিরপেক্ষ কোনও সংস্থাকে দিয়ে ওই ঘটনার তদন্ত হওয়া উচিত, তাতে অসুবিধা ঠিক কোথায়?’’
বিধানসভা ভোটের আগে নারদ নিউজের স্টিং অপারেশনের প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখানো হয়, তৃণমূলের কয়েক জন সাংসদ-নেতা টাকা নিচ্ছেন। তেমনই কয়েক জন নেতা-সাংসদের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন আদালতে দাবি করেন, স্টিং অপারেশনের ওই ছবি দুর্নীতি দমন আইনের আওতায় পড়ে না। সংবিধান ও ফৌজদারি আইন অনুযায়ী টাকা নেওয়ার প্রাথমিক তদন্ত সিবিআই-কে দিয়ে করানোও যায় না। আইন বলছে, পুলিশ যথাযথ তদন্ত না-করলে তবেই হাইকোর্ট বা শীর্ষ আদালত তদন্তভার সিবিআই-কে দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারে। তখনই নিরপেক্ষ সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত কেন নয়, প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি মাত্রে এবং তাঁর ডিভিশন বেঞ্চের অন্য বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মাত্রে জানিয়ে দেন, নারদ নিউজের কর্ণধার ম্যাথু স্যামুয়েল যদি খারাপ লোকও হন, তাঁর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার ছাড়পত্র মেলে না। ‘‘ম্যাথুকে নিয়ে কী করা উচিত, এখন সেই প্রশ্ন উঠছে না। তাঁর স্টিং অপারেশনের ভিডিও ফুটেজে যা দেখা গিয়েছে, সেটাই আমাদের এখনকার উদ্বেগের কারণ,’’ বলেন বিচারপতি মাত্রে।
কল্যাণবাবুর প্রশ্ন তোলেন, স্টিং অপারেশন তো হয়েছে ২০১৪ সালে। ম্যাথু কি তখন পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলেন? সাংবাদিক হয়ে তিনি কী ভাবে কোনও সাংসদ বা বিধায়ককে টাকা দিতে পারেন? এ ভাবে নেতাদের টাকা দেওয়ার পিছনে কী উদ্দেশ্য ছিল ওই সাংবাদিকের?
ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি তখনই মন্তব্য করেন, ম্যাথু খারাপ লোক হতেও পারেন। কিন্তু তাতে টাকা নেওয়ার ছাড়পত্র মেলে না। কল্যাণবাবুর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘ম্যাথু অপরাধ করেছেন কি না, সেটা এখন ভুলে যান। এই মামলার আবেদনকারীরা আপাতত জানতে চাইছেন, টাকা নেওয়ার ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হবে কি না।’’
কল্যাণবাবুর প্রশ্ন, যে-ঘটনায় এফআইআর-ই হল না, সিবিআই তার তদন্ত করতে পারে কী ভাবে? হুল-তদন্তে সিবিআই-কে ডাকলে সেটা সংবিধানসম্মত হবে না। তা ছাড়া ওই সাংসদ-নেতাদের যখন টাকা নিতে দেখা গিয়েছে, তখন কি তাঁরা সরকারি কাজে লিপ্ত ছিলেন? তা যদি না-হয়, কেন তার তদন্ত হবে? কীসের ভিত্তিতেই বা হবে? আদালত জানায়, বুধবার ফের শুনানি হবে।