বাইরনের যোগদানের ফলে জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী জোট গঠন কি ধাক্কা খাবে? কারণ, মমতাও সম্প্রতি কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ায় ‘রাজি’ বলে জানিয়েছেন। —ফাইল চিত্র।
বাংলায় কংগ্রেসের একমাত্র বিধায়ক ছিলেন তিনি। বহু আলোচিত সাগরদিঘির সেই বিধায়কের তৃণমূলে যোগদানের প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর তা নিয়ে মুখ খুললেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানালেন এই যোগদানের বিষয়টি তাঁর গোচরেই ছিল না। মুখ্যমন্ত্রী এ-ও জানালেন, তিনি এই খবর জেনেছেন খবরের কাগজ দেখে। পাশাপাশিই বাইরনের কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে আসাকে ‘স্থানীয় ব্যাপার’ বলছেন তৃণমূল নেত্রী। এর নেপথ্যে কি জাতীয় রাজনীতির অঙ্ক? অ-বিজেপি জোটের কথা ভেবেই বাইরন বিশ্বাসের তৃণমূলে আসাকে লঘু করে দেখাতে চাইলেন মমতা?
মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে বাইরনকে নিয়ে প্রশ্ন করতেই মমতার জবাব, ‘‘আমি জানি না। এটা লোকাল ম্যাটার (স্থানীয় ব্যাপার)। স্থানীয় নেতৃত্বকে জিজ্ঞাসা করুন। আমার কিছু জানা নেই। আমি পেপারে সবটা পড়েছি।’’ এ নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া? মমতার নিজের কথায়, ‘‘আমি এগুলো করি না (দলবদলের বিষয়)। দলের বেশ কিছু সিস্টেম আছে। এগুলো ব্লক স্তরে হয়। ডোন্ট আস্ক মি (আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না)।’’
কিন্তু, অন্য দলের বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দেবেন, আর দলের সর্বময় নেত্রী মমতা কাছ সেই খবর থাকবে না, তাঁর অনুমতি নেওয়া হবে না, এটা তৃণমূলের দস্তুর নয়। তা হলে এ বার ব্যতিক্রম কেন? তৃণমূলের একাংশ বলছে, মমতা বিষয়টিকে ‘লঘু’ করে দেখাতে চেয়েছেন। কারণ, তিনি জানেন, তাঁর আহ্বানে যখন বিরোধী জোটের সলতে পাকানো শুরু হয়েছে, তখন বাইরনের দলবদল তাতে ‘নেতিবাচক’ প্রভাব ফেলতে পারে।
বাইরনের কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়ার পর লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে অ-বিজেপি জোটের ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। আগামী লোকসভা ভোটে দেশে বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধীদের সম্মিলিত প্রার্থী দেওয়া নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। কর্নাটকে কংগ্রেসের জয়ের পর তা আরও জোরদার হয়েছে। বিরোধী জোটের পক্ষে রয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা। অন্য দিকে আছে কংগ্রেস, বামও। আগামী ১২ জুন নীতীশ কুমার, তেজস্বী যাদবের বিহারে এই বিরোধী জোটের গুরুত্বপূর্ণ মহাবৈঠক বসতে চলেছে। সেখানে মমতা থাকবেন, চেষ্টা হচ্ছে কংগ্রেসকেও আনার। তার মধ্যে কংগ্রেস ছেড়ে বাইরনের তৃণমূলে যোগদানের কোনও প্রভাব কি ওই বৈঠকে পড়বে? এ নিয়ে অধীরের মন্তব্য বেশ ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’। তিনি বলেছেন, ‘‘সাগরদিঘির ফলে প্রমাণিত হয়েছে যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অপরাজেয় নন। তৃণমূলকেও হারানো যায়।’’ আর মঙ্গলবার জোট নিয়ে মমতা বলেন, ‘‘আমি মনে করি জাতীয় স্তরে আমরা সবাই এক। কিন্তু রাজ্য স্তরে যে প্রতিটি দলের কিছু বাধ্যবাধকতা থাকে, সেটা সবাইকে বুঝতে হবে। আমরা তো শুধু মেঘালয় আর গোয়া বিধানসভায় লড়েছি। কিন্তু কংগ্রেস হিমাচল প্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, গুজরাতে লড়েছে। আমরা তো কোনও অসুবিধা সৃষ্টি করিনি। বরং আমরা সাহায্য করেছি।’’ অর্থাৎ, তিনি জাতীয় স্তরে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের পক্ষে। কিন্তু অধীর যখন অভিযোগ করছেন বাইরনকে ‘ভাঙিয়ে’ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেতা জয়রাম রমেশ যখন এ নিয়ে টুইট করছেন তখন মমতা বিষয়টিকে ‘স্থানীয়’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। অন্য দিকে, তৃণমূলে যোগদানের ১ দিনের মধ্যেই রাজ্য পুলিশের বাড়তি নিরাপত্তা পেয়েছেন বাইরন।
নিরাপত্তা চেয়ে আদালতে গিয়েছিলেন, পেলেন তৃণমূলে এসে:
গত মার্চে সাগরদিঘির বিধায়ক হওয়ার পর থেকে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এই মর্মে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বাইরন। চেয়েছিলেন নিরাপত্তা। কংগ্রেসে থাকতে থাকতে যে ‘সুবিধা’ পাননি, তা তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পেলেন এই বিধায়ক। মঙ্গলবার সকাল থেকেই তাঁর শমসেরগঞ্জের বাড়িতে পুলিশি নিরাপত্তার বহর চোখে পড়েছে। বিধায়কের বাড়ির নিরাপত্তার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ২ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর এবং ৮ জন সশস্ত্র কনস্টেবল। আর বাইরনের দেহরক্ষী হিসেবে দেওয়া হয়েছে এক জন সাব-ইনস্পেক্টর, এক জন অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর এবং ৩ জন কনস্টেবল।
বাইরনে বিশ্বাস রাখা ভুল ছিল?
বাইরন তৃণমূলে যাওয়ার পর থেকে ক্ষুব্ধ সাগরদিঘির কংগ্রেস নেতৃত্ব। তাঁরা সরাসরি দায়ী করছেন অধীরকে। কেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বাইরনে আস্থা রাখলেন, তাই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। এ নিয়ে বিক্ষোভের মধ্যে অধীর বলছেন, তাঁর কাছে কান্নাকাটি করে বাইরন কথা দিয়েছিলেন যে তিনি কোনও অবস্থাতেই কংগ্রেস ছাড়বেন না। তার পরেও এই দলত্যাগ ব্যবসায়িক কারণে বলে দাবি করছেন অধীর।
বাইরনের ব্যবসায়ী পরিবার। কংগ্রেস বিধায়ক হওয়ার পর থেকে শাসকদলের তরফে তিনি নানা বাধা পাচ্ছিলেন। তাই তৃণমূলে গিয়েছেন বলে মনে করেন অধীর। তবে বাইরন বলছেন, ‘‘ফালতু কথা।’’
সব বিতর্ক অচিরে মিটবে!
কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে বাইরন নিজে বলছেন, কিছু দিন পরই তাঁকে নিয়ে এই সব আলোচনা থিতিয়ে যাবে। কারণ, তিনি স্বার্থসিদ্ধির জন্য নয়, সাগরদিঘির মানুষের জন্য কাজ করবেন বলে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।
এর মধ্যে মঙ্গলবার বিধায়ক পদ থেকে বাইরনের পদত্যাগের দাবিতে সাগরদিঘিতে পথে নেমেছেন কংগ্রেসের জোটসঙ্গী সিপিএম। ৩ মাস আগে কংগ্রেসের বাইরনের হয়ে ভোট চাইতে মিছিল করেছিল তারা। মঙ্গলবার মিছিলের স্লোগানে উঠল বাইরনের পদত্যাগের দাবি।