West Bengal SSC Recruitment Case

সরকারের একাংশ বাঁচাতে চাইছে পার্থদের? কোন চার কারণে জামিন দিতে রাজি নন বিচারপতি সিংহ রায়

পার্থ-সহ মোট ন’জনের জামিনের আবেদনের শুনানি ছিল বুধবার। বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের জামিন মঞ্জুর করলেও তাঁর সঙ্গে একমত হতে পারেননি বিচারপতি অপূর্ব সিংহ রায়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:৪৭
Share:

(বাঁ দিকে) প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অপূর্ব সিংহ রায় (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

নিয়োগ মামলায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ পাঁচ জনকে জামিন দিতে রাজি হননি কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অপূর্ব সিংহ রায়। ডিভিশন বেঞ্চের অপর বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এই মামলায় সকলের জামিন মঞ্জুর করেছিলেন। কিন্তু বিচারপতি সিংহ রায় তাঁর সঙ্গে একমত হতে না পারায় নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে। পার্থদের জামিনের আবেদনের মামলাটি এ বার হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে যাবে। সেখান থেকে ফয়সালার জন্য তৃতীয় বেঞ্চে মামলাটি পাঠাবেন প্রধান বিচারপতি। কী কারণে পার্থদের জামিন মঞ্জুর করতে রাজি হলেন না বিচারপতি সিংহ রায়? কেনই বা জামিন মঞ্জুর করলেন বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়? উঠে এসেছে পর্যবেক্ষণে।

Advertisement

পার্থ-সহ মোট ন’জনের জামিনের আবেদনের শুনানি ছিল বুধবার। সিবিআইয়ের করা মামলায় জামিন চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন পার্থ। বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেন। কৌশিক ঘোষ, শেখ আলি ইমাম, সুব্রত সামন্ত রায় এবং চন্দন ওরফে রঞ্জন মণ্ডলের জামিন মঞ্জুর করেন বিচারপতি সিংহ রায়ও। এই চার জনের ক্ষেত্রে দুই বিচারপতি একমত হওয়ায় সিবিআইয়ের মামলায় তাঁরা জামিন পেয়েছেন। কিন্তু জামিন পাননি পার্থ, সুবীরেশ ভট্টাচার্য, অশোক সাহা, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, শান্তিপ্রসাদ সিন্‌হারা।

কেন পার্থদের জামিনের বিষয়ে বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ভিন্নমত বিচারপতি সিংহ রায়?

Advertisement

প্রথমত, বিচারপতি সিংহ রায়ের পর্যবেক্ষণ, ‘‘এই সংক্রান্ত মামলার তথ্য দেখে মনে হচ্ছে, রাজ্য সরকারের একাংশ অভিযুক্তদের পরোক্ষ ভাবে বাঁচাতে চাইছে। এই অবস্থায় তাঁরা জামিন পেলে তা খুবই দুর্ভাগ্যের হবে।’’ কেন এ কথা বলছেন বিচারপতি? এই মামলায় সিবিআই আদালতে জানিয়েছিল, পার্থদের মামলার ট্রায়াল শুরু করা যাচ্ছে না। পার্থ প্রাক্তন মন্ত্রী। তাঁর বিরুদ্ধে ট্রায়াল শুরু করার জন্য রাজ্যপালের অনুমতি প্রয়োজন হয়। তা মিলেছে ইতিমধ্যেই। একই ভাবে বাকি অভিযুক্তেরা রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাই তাঁদের ক্ষেত্রে ট্রায়ালের জন্য প্রয়োজন হয় মুখ্যসচিবের অনুমতি। সেই অনুমতি এখনও মেলেনি, আদালতে জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় সংস্থা। এর ভিত্তিতেই বিচারপতি জানিয়েছেন, সরকারের একটি অংশ অভিযুক্তদের আড়াল করতে চাইছে বলে তাঁর মনে হচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, বিচারপতি সিংহ রায় জানিয়েছেন, নিয়োগ মামলায় কেউ তাঁকে এমন কোনও তথ্য দেখাতে পারেননি, যাতে মনে হচ্ছে যে, সিবিআই ট্রায়াল শুরু করতে অযথা দেরি করছে। ফলে কেন্দ্রীয় সংস্থার দেরির কারণে পার্থেরা জেলে, তা মনে করছেন না বিচারপতি।

তৃতীয়ত, বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, সমগ্র নিয়োগ দুর্নীতির মাস্টারমাইন্ড এই পাঁচ জন। তাঁদের দ্বারাই দুর্নীতি সংঘটিত হয়েছে। প্রসন্নকুমার রায়, জীবনকৃষ্ণ সাহারা নিয়োগ মামলায় জামিন পেয়েছেন বটে। কিন্তু তাঁরা সাধারণ অভিযুক্ত। তাঁদের সঙ্গে পার্থদের তুলনা করলে চলবে না।

চতুর্থত, পার্থ-সহ যে পাঁচ জনকে জামিন দেওয়া হয়নি, তাঁরা এখনও প্রভাবশালী। তাঁরা জামিন পেলে নিয়োগ মামলার তথ্যপ্রমাণ নষ্ট হতে পারে। সাক্ষীদের উপর প্রভাব খাটানোর সম্ভাবনাও রয়েছে। তাই সব দিক বিবেচনা করে এখনই তাঁদের জামিন মঞ্জুর করতে রাজি নন বিচারপতি সিংহ রায়। তিনি রায়ের এই কপি রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং ট্রায়াল কোর্টকে পাঠানোর জন্য হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে অনুরোধও করেছেন।

অপর দিকে, বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, অনির্দিষ্ট কালের জন্য কোনও ব্যক্তিকে আটকে রাখা তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করার অনুরূপ। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ যত গুরুতরই হোক না কেন, আদালতের সামনে বিচারপ্রক্রিয়ায় তা প্রমাণ করতে হবে। প্রমাণ না হওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তকে এত দীর্ঘ সময় কারাগারে বন্দি করে রাখা যায় না। দ্রুত বিচার যে কোনও ব্যক্তির মৌলিক অধিকার। এই যুক্তিতে পার্থদের জামিন মঞ্জুর করেছেন বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সেই সঙ্গে তিনি এ-ও জানিয়েছেন, তাঁর এই নির্দেশে সিবিআইয়ের তদন্ত কোনও ভাবে প্রভাবিত হবে না। সিবিআই তদন্ত চালিয়ে যাবে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নতুন করে কোনও তথ্য বা অভিযোগ পাওয়া গেলে সেই সংক্রান্ত জিজ্ঞাসাবাদ এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে পারবে কেন্দ্রীয় সংস্থা। অভিযুক্তদেরও সহযোগিতা করতে হবে তদন্তে। তবে তাঁদের জেল হেফাজতে রাখার আর প্রয়োজন নেই বলে মনে করেছেন বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement