পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। ছবি: পিটিআই।
মহারাষ্ট্রের রাজ্যপালকে সংযত থাকার বার্তা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তা হলে পশ্চিমবঙ্গ-সহ অন্যান্য বিরোধী-শাসিত রাজ্যের রাজ্যপালদের ক্ষেত্রেও তিনি একই অবস্থান নিচ্ছেন না কেন? প্রশ্ন বিরোধী শিবিরের।
গত সপ্তাহে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরেকে চিঠি লিখে আক্রমণ করেছেন রাজ্যপাল ভগত সিংহ কোশিয়ারি। লকডাউন উঠে যাওয়ার পরেও রাজ্যে একাধিক মন্দির বন্ধ কেন, প্রশ্ন তুলে তিনি লেখেন, ‘হঠাৎ ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে গেলেন নাকি? তকমাটা তো আপনি বরাবর ঘৃণা করতেন!’ এর পরে এক সাক্ষাৎকারে শাহ বলেন, ‘‘উনি (কোশিয়ারি) প্রসঙ্গক্রমে এই কথাটা বলেছেন। কিন্তু আমার মনে হয়, এই শব্দচয়ন না করলেই ভাল করতেন।’’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই মন্তব্য নিয়েই মঙ্গলবার কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি অন্যান্য রাজ্যপাল, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের ক্ষেত্রেও একই কথা বলতেন, ভাল হত।’’
আরও পড়ুন: কাগজ নয়, বিজেপিকে বাইরের রাস্তা দেখাব, সিএএ মন্তব্যে নড্ডাকে তোপ মহুয়ার
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় নিয়মিত প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে বা মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে রাজ্য সরকারের কাজের সমালোচনা করেন। পশ্চিমবঙ্গ থেকে তৃণমূলের সমর্থনে জেতা রাজ্যসভার সাংসদ সিঙ্ঘভির মতে, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে ভাষার প্রয়োগ মহারাষ্ট্রের তুলনায় অনেক বেশি সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে।’’
তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও এ নিয়ে আক্রমণ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। তিনি বলেন, ‘‘এখানে আগামী বছর নির্বাচন। তাই রাজ্যপাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশে অসাংবিধানিক আচরণ করছেন। মহারাষ্ট্রের ক্ষেত্রে যে-ভাষা বা মনোভাব নিয়ে শাহের আপত্তি, এখানে তাতেই মদত দিচ্ছেন।’’
আরও পড়ুন: ২২ বছর পর সেই ভয়ঙ্কর দৈত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস অর্জন করেছিলাম
রাজনৈতিক সূত্র অবশ্য বলছে, শাহ আসলে শিবসেনাকে সদর্থক বার্তা দিতে চেয়েছেন। কারণ, মহারাষ্ট্রে বিজেপি ফের শিবসেনার সঙ্গে মিলে সরকার গড়তে চায়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এমন কোনও দায় নেই। তাই রাজ্যপাল যেমন নিয়মিত রাজ্যের সমালোচনা করছেন, অমিত নিজেও তা-ই করছেন। পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমালোচনা করে শনিবারই তিনি বলেন, সেখানে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবি যুক্তিসঙ্গত।
সোমবার এক সাক্ষাৎকারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফের বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের হত্যা, তার পর বিরোধী দলকেই সেই মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া, খোলা রাস্তায় শুটআউট, সব জেলায় বোমার কারখানা, আমপানের ত্রাণেও তোষণ, করোনা-বিরোধী ব্যবস্থা ভঙ্গুর— সব দিক থেকে প্রশাসন ভেঙে পড়েছে। দেশের আর কোনও রাজ্যে বোধহয় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এত খুন সাম্প্রতিক অতীতে হয়নি।’’