তোপের মুখে নেতা-কর্তারা

প্রকল্পে গতি নেই কেন, মঞ্চেই ক্ষোভ মুখ্যমন্ত্রীর

উত্তরবঙ্গের তিন জেলায় ‘জল ধরো জল ভরো’ ও ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের অগ্রগতির কাজ খতিয়ে দেখতে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি সূত্রের খবর, সেই সঙ্গে, কেন দীর্ঘ দিন ধরে তিন জেলার বিভিন্ন এলাকায় রাজ্য সড়ক বেহাল হয়ে রয়েছে, সেই প্রশ্নও তোলেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

গৌর আচার্য

সোনাপুর (উত্তর দিনাজপুর) শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৬ ০১:৩৮
Share:

প্রশাসনিক বৈঠকে নেতা, মন্ত্রী ও পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী। — নিজস্ব চিত্র

উত্তরবঙ্গের তিন জেলায় ‘জল ধরো জল ভরো’ ও ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের অগ্রগতির কাজ খতিয়ে দেখতে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

সরকারি সূত্রের খবর, সেই সঙ্গে, কেন দীর্ঘ দিন ধরে তিন জেলার বিভিন্ন এলাকায় রাজ্য সড়ক বেহাল হয়ে রয়েছে, সেই প্রশ্নও তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার দুপুরে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া থানার সোনাপুর এলাকার মহাত্মা গাঁধী হাইস্কুল মাঠে উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদহ জেলার পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তিন জেলার বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকেরা উন্নয়ন প্রকল্পের খতিয়ান পেশ করেন।

সূত্রের খবর, সেখানে আধিকারিকদের বক্তব্য শেষ হওয়ার পর, মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘‘তিন জেলায় ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্পের কাজ ভাল হয়নি। মনে রাখবেন, জল আমাদের সম্পদ! তাই বৃষ্টির জলকে ধরে রেখে চাষের কাজে লাগাতে হবে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, তিন জেলার বেশ কিছু পঞ্চায়েতের ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের তহবিলে টাকা থাকলেও শ্রমিকেরা ১০০ দিনের কাজ পাচ্ছেন না। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, যে সমস্ত পঞ্চায়েতে টাকা রয়েছে, সেই সব পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ যাতে খুব তাড়াতাড়ি শ্রমিকদের ১০০ দিনের প্রকল্পের কাজে লাগান, তা জেলাশাসকেরা দেখতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে কথা হয়েছে, কেন্দ্র ওই প্রকল্পে টাকা বরাদ্দ বন্ধ করে দিয়েছে। তাই যে সমস্ত পঞ্চায়েতের তহবিলে ওই প্রকল্পের টাকা নেই, রাজ্য সরকারের অন্য কোনও তহবিলের টাকায় সেই সব পঞ্চায়েতকে শ্রমিকদের ১০০ দিনের কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

Advertisement

এ দিনের প্রশাসনিক বৈঠকে দুই দিনাজপুর ও মালদহ জেলার একাধিক রাজ্য সড়ক বেহাল হয়ে থাকার কথা জানতে পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিন জেলার প্রশাসনিক আধিকারিকদের অবিলম্বে রাস্তাগুলি মেরামত করার নির্দেশ দেন তিনি।

গত সোমবার কংগ্রেস পরিচালিত মালদহ জেলা পরিষদের সভাধিপতি সরলা মুর্মু সহ কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের ২১ জন সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। তার ফলে জেলা পরিষদের ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এ দিন সরলাদেবী প্রশাসনিক বৈঠকে হাজির ছিলেন। তাঁর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী আলাদা করে মিনিট দশেক কথাও বলেন। সরলাদেবী মুখ্যমন্ত্রীর কাছে মালদহ জেলায় বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক মেরামত ও গঙ্গা ভাঙন রুখতে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। মুখ্যমন্ত্রী সরলাদেবীকে লিখিত ভাবে তাঁর দফতরে সেই দাবি পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

হেমতাবাদ ব্লক তৃণমূল সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় দত্ত উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্যের মাধ্যমে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিত ভাবে হেমতাবাদ ব্লকে একটি কলেজ তৈরির দাবি জানিয়েছেন। মৃত্যুঞ্জয়বাবুর দাবি, ‘‘হেমতাবাদে কলেজ না থাকায় প্রতি বছর উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়ার পরে ব্লকের শতাধিক পড়ুয়া স্নাতক স্তরে রায়গঞ্জ ও কালিয়াগঞ্জ ব্লকের বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হতে বাধ্য হন। ফলে পড়ুয়াদের হয়রানি বাড়ছে।’’ প্রশাসনিক বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘তিন জেলায় উন্নয়নের অনেক দাবি রয়েছে। রাজ্য সরকার সবই বিবেচনা করবে।’’

এ দিন প্রশাসনিক বৈঠকের পরে তৃণমূল পরিচালিত উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ গৌতম পাল, জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্য মোশারফ হোসেন ও কালিয়াগঞ্জ পুরসভার তৃণমূল চেয়ারম্যান কার্তিকচন্দ্র পালের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী আলাদা করে কিছু ক্ষণ কথা বলেন। গৌতমবাবু, মোশারফবাবু ও কার্তিকবাবুর দাবি, জেলা পরিষদ ও পুরসভার উন্নয়নের কোনও প্রস্তাব থাকলে তা বিভাগীয় দফতরের কাছে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement