Tangra triple murder Case

‘কাকা মুখে বালিশ চেপে রেখেছিল, মরার ভান করি’, শিশু সুরক্ষা কমিশনকে বলল ট্যাংরার কিশোর

ট্যাংরার কিশোর প্রতীপ, তার বাবা প্রণয় এবং কাকা প্রসূনকে আপাতত এনআরএস হাসপাতালে রাখা হয়েছে। সেখানেই কিশোরের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের প্রতিনিধিরা।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৫:০৭
Share:
ট্যাংরার ১৪ বছরের প্রতীপ দে শিশু সুরক্ষা কমিশনের কাছে সে দিনের ঘটনা বর্ণনা করেছে।

ট্যাংরার ১৪ বছরের প্রতীপ দে শিশু সুরক্ষা কমিশনের কাছে সে দিনের ঘটনা বর্ণনা করেছে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

ট্যাংরার দে পরিবারের জীবিত কিশোর প্রতীপ দে শিশু সুরক্ষা কমিশনের কাছে মা, কাকিমা এবং দিদির মৃত্যু নিয়ে মুখ খুলেছে। তার সঙ্গে এনআরএস হাসপাতালে দেখা করতে গিয়েছিলেন শিশু সুরক্ষা কমিশনের পরামর্শদাতা অনন্যা চক্রবর্তী এবং অন্য প্রতিনিধিরা। অনন্যা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে জানান, কাকা প্রসূন তাকে মারার চেষ্টা করেছিলেন বলে দাবি কিশোরের। মারার জন্য তার মুখে বালিশ চাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল। বাঁচার আশায় মরে যাওয়ার ভান করে বেশ কিছু ক্ষণ পড়ে ছিল প্রতীপ। তার পর তার কাকা তাকে ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যান।

Advertisement

হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়ার পর প্রতীপের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা এখনও অনিশ্চিত। কোনও আত্মীয় তার দায়িত্ব নিতে চাননি। সূত্রের খবর, ভদ্রেশ্বরের এক পরিবার তাকে দত্তক নেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছে। শিশু সুরক্ষা কমিশনকে প্রতীপ জানিয়েছে, সে দাবা খেলতে পারে। পারিবারিক ব্যবসায় যে মন্দা দেখা দিয়েছে, কয়েক মাস আগেই তা প্রতীপ টের পেয়েছিল। সে ভেবেছিল, দাবার টুর্নামেন্ট খেলে অর্থ উপার্জন করে পরিবারের দুঃখ ঘোচাবে। কিন্তু তার আগেই সপরিবার মৃত্যুর পরিকল্পনা তার কানে আসে। বাড়ির বড়দের একসঙ্গে বসে এ বিষয়ে কথা বলতে শুনেছিল সে। দাবি, সেই আলোচনায় তাকে থাকতে দেওয়া হয়নি। ঘর থেকে বার করে দেওয়া হয়েছিল।

অনন্যা এনআরএস চত্বরে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘আমি প্রতীপের সঙ্গে কথা বলেছি। ও আমাকে জানিয়েছে, ওর মা, কাকিমা এবং দিদিকে ওর কাকা খুন করেছেন। ওকেও মারার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু মারতে পারেননি। প্রথমে বাকিদের মতো ওকেও ঘুমের ওষুধ মেশানো পায়েস খাওয়ানো হয়। পরে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে ওর কাকা ওকে মারতে আসেন। কিন্তু ওর শক্তি বেশি ছিল। শরীরচর্চা করত। তাই ওকে মারতে পারেননি। ও শ্বাস বন্ধ করে মড়ার মতো ভান করে কিছু ক্ষণ পড়ে ছিল। তাতে ওর কাকা ভাবেন, ও মারা গিয়েছে। তখন ওকে ছেড়ে দেন। যে ভাবে ওর মা, কাকিমাকে মারা হয়েছে, সে ভাবে ওকেও মারার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু ও ভীষণ ভাবে প্রতিরোধ করেছে। তার পরেই ওর মুখে বালিশ চাপা দেওয়া হয়।’’ কিশোর জানিয়েছে, যোগব্যায়ামের অভ্যাস থাকার কারণে শ্বাস বন্ধ করে রাখার পদ্ধতি তার জানা ছিল।

Advertisement

অনন্যা আরও বলেন, ‘‘প্রতীপের বাবা এবং কাকা মিলে ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু মা-কাকিমা তাতে শেষ মুহূর্তে ছাদে যেতে রাজি হননি। তখন বাবা এবং কাকা মিলে জোর করে তাঁদের মেরেছেন। প্রতীপ যখন দেখল যে ও বেঁচে আছে, বাকিদের খুঁজতে ও উপরে গেল। দেখল, মা-কাকিমা, দিদি নিথর অবস্থায় পড়ে আছেন। আরও উপরে গিয়ে দেখল, বাবা-কাকা আত্মহত্যা করবে বলে ঠিক করেছেন। ওঁরা কিশোরকেও রাজি করায়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কেন তুমি রাজি হলে?’ তখন প্রতীপ বলে, ‘আমি যাদের ভালবাসি, তারা সবাই তো চলে গিয়েছে। আমি আর বেঁচে থেকে কী করব?’ বাবা আর কাকা মিলে ওর ব্রেনওয়াশ করেছিলেন। ওকে বোঝানো হয়েছিল, মৃত্যু ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।’’

ট্যাংরার প্রতীপ, তার বাবা প্রণয় এবং কাকা প্রসূনকে আপাতত এনআরএস হাসপাতালে রাখা হয়েছে। আলাদা আলাদা কক্ষে পুলিশি প্রহরায় আছেন তাঁরা। সেখানেই ১৪ বছরের প্রতীপের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের প্রতিনিধিরা। আনন্দবাজার অনলাইনকে অনন্যা বলেন, ‘‘গোটা ঘটনায় আমরা স্তম্ভিত। ধারদেনা যতই থাকুক না কেন, একটা গোটা পরিবারকে এ ভাবে শেষ করে ফেলার অধিকার কারও আছে বলে মনে হয় না।’’

প্রতীপ জানিয়েছে, প্রথমে তাকে ঘুমের ওষুধ মেশানো পায়েস খাওয়ানো হয়। কিন্তু তাতে তার শরীরে তেমন প্রভাব পড়েনি। এর পর তার হাত কাটা হয়। তাতে বাধা দিলে কাকা তার মুখে বালিশ চেপে ধরেন। যোগাভ্যাস এবং জিম করার ফলে বেশ কিছু ক্ষণ শ্বাস বন্ধ করে রাখতে পেরেছিল প্রতীপ। এক সময়ে কাকা ভাবেন, সে মারা গিয়েছে। প্রতীপের দাবি, এর পর তার বাবা এবং কাকা ছাদে উঠে যান। সেখান থেকে ঝাঁপ দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। পুলিশ সূত্রে খবর, কিশোরের হাত কাটার কথা প্রসূন নিজেও স্বীকার করেছেন।

গত বুধবার ট্যাংরার অটল শূর রোডের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় তিনটি মৃতদেহ। দে পরিবারের দুই বধূ রোমি দে, সুদেষ্ণা দে এবং কিশোরী প্রিয়ম্বদাকে খুন করা হয়েছে বলে জানা যায় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে। ওই দিনই ভোরে বাইপাসের ধারে একটি গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। তাতে ছিলেন দে পরিবারের দুই ভাই প্রণয়, প্রসূন এবং কিশোর প্রতীপ। পুলিশ জানতে পেরেছে, কিশোরকে গাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন দুই ভাই। কিন্তু প্রতীপ তাতে রাজি হয়নি। পুলিশি জেরার মুখে দুই ভাই দাবি করেছেন, আর্থিক সমস্যার কারণে তাঁরা সপরিবার আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। প্রতীপের দাবি অনুযায়ী, তার কাকা প্রসূন পরিবারের তিন সদস্যকে খুন করেছেন। এখনও দুই ভাইকে হেফাজতে নিয়ে পূর্ণাঙ্গ জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনি পুলিশ। তাঁরা সুস্থ হয়ে উঠলে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে এ বিষয়ে পুলিশ পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement