টেস্ট কিটের বিকল্প পরিকল্পনা— ‘ট্রুন্যাট’। ফাইল চিত্র।
টেস্ট কিটে ত্রুটি থাকায় বাতিল হয়ে গিয়েছে র্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্টের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ চিহ্নিত করার পরিকল্পনা। কিন্তু দ্রুত পরীক্ষা না করিয়ে উপায়ও নেই। অতএব বিকল্প পরিকল্পনা— ‘ট্রুন্যাট’। এই পদ্ধতিতে খুব দ্রুত অনেকের নমুনা পরীক্ষা করে ফলাফল জেনে নেওয়া সম্ভব বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এই ট্রুন্যাট পদ্ধতি বিকল্প হিসেবে কতটা উপযুক্ত? এই পরীক্ষা কী পদ্ধতিতে হবে? ফলাফলই বা কতটা যথাযথ আসবে? বিশেষজ্ঞ থেকে চিকিৎসক—সকলেই কিন্তু মনে করছেন, বেশ কার্যকরী হবে ট্রুন্যাট পদ্ধতি। তবে এই পদ্ধতিতে কারও রিপোর্ট পজিটিভ এলেই তাঁকে পজিটিভ বলে ধরে নেওয়া হবে না, এমনটাও স্থির হয়েছে।
কী পদ্ধতিতে হবে এই ট্রুন্যাট টেস্ট?
যে ভাবে এত দিন লালারসের নমুনা পরীক্ষা করা হত, সেই আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতেই পরীক্ষা হবে ট্রুন্যাটেও। কিন্তু অনেক সহজে পরীক্ষাটা হবে এবং অনেক দ্রুত ফলাফল জানা যাবে।
আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে পরীক্ষা কী ভাবে হয়?
নাক এবং মুখের ভিতর থেকে লালারসের নমুনা নেওয়া হয়। সেই নমুনায় কোভিড-১৯-এর আরএনএ-কে চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয় পলিমারেস চেন রিঅ্যাকশন নামে এক বিক্রিয়ার সাহায্যে। যদি লালারসের নমুনায় কোভিডের আরএনএ থেকে থাকে, তা হলে ওই বিক্রিয়ায় সেই আরএনএ-র সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং সহজেই ভাইরাসটির উপস্থিতি বুঝে নেওয়া যায়। আর যদি লালারসের নমুনার মধ্যে ওই আরএনএ না-থেকে থাকে, তা হলে তার সংখ্যাবৃদ্ধির প্রশ্ন নেই।
যে ভাবে এত দিন লালারসের নমুনা পরীক্ষা করা হত, সেই আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতেই পরীক্ষা হবে ট্রুন্যাটেও
এখন প্রশ্ন হল, ল্যাবে গিয়ে পরীক্ষা করালে যে পদ্ধতিতে হবে, ট্রুন্যাটেও যদি সেই পদ্ধতিই অবলম্বন করা হয়, তা হলে সময় কম লাগবে কেন?
বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস’-এর সিনিয়র প্রফেসর সুমন্ত্র চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘পরীক্ষার পদ্ধতিটা এক হলেও পরীক্ষায় ব্যবহৃত যন্ত্র আলাদা। ল্যাবে যে ধরনের যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জাম ব্যবহার করে পরীক্ষা হয়, সেগুলো এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। সকলকে ল্যাবে নিয়ে গিয়েই পরীক্ষাটা করাতে হবে অথবা লালারস সংগ্রহ করে ল্যাবে নিয়ে যেতে হবে। সেটা সময় সাপেক্ষ। তা ছাড়া ল্যাবের ওই যন্ত্রে ফলাফলটা আসতেও একটু বেশি সময় লাগবে। কিন্তু ট্রুন্যাট পদ্ধতিতে যে যন্ত্র ব্যবহার করা হবে, তা পোর্টেবল। অর্থাৎ যে কোনও এলাকায় তা নিয়ে যাওয়া যাবে, প্রায় দরজায় দরজায় গিয়ে পরীক্ষা করে আসা যাবে। ৪৫ মিনিটের মধ্যে ফলাফলও পাওয়া যাবে।’’
এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা হলে কী সুবিধা?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন— যদি কোনও এলাকায় কারও মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ে, তা হলে দ্রুত জেনে নেওয়া দরকার যে, সেখানে আর কারও মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছে কি না। সে ক্ষেত্রে তো ওই এলাকার সব লোককে ধরে ধরে ল্যাবে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তার বদলে যদি একটা পোর্টেবল ল্যাবকেই ওই এলাকায় হাজির করা যায়, তা হলে দ্রুত অনেক লোকের নমুনা সংগ্রহ করে, তা পরীক্ষা করে, ফলাফল জেনে নেওয়া অনেক সহজ। ট্রুন্যাট পদ্ধতিতে আসলে সেটাই হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন।
ট্রুন্যাট পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা যদি এত সহজ হয় এবং এত দ্রুত যদি তার মাধ্যমে সংক্রমণ চিহ্নিত করা সম্ভব হয়, তা হলে ল্যাবগুলো রাখার প্রয়োজন কী?
ট্রুন্যাট পদ্ধতিতে লালারস পরীক্ষা করার প্রশিক্ষণ যাঁরা পেয়েছেন, তাঁরা বলছেন, এই পদ্ধতিতে যে পরীক্ষা হয়, তা ১০০ শতাংশ ক্ষেত্রে সঠিক ফলাফল দেবে, এমনটা না-ও হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ভুয়ো পজিটিভ ফলাফল আসে। তবে ফলাফল নেগেটিভ এলে, তা ভুল হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম থাকে। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ট্রুন্যাটে যাঁদের টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ আসবে, তাঁরা সংক্রামিত নন ধরে নেওয়া হবে। আর যাঁদের রিপোর্ট পজিটিভ আসবে, তাঁদের আগে কোয়রান্টিনে বা আইসোলেশনে পাঠিয়ে দিয়ে দ্বিতীয় বার পরীক্ষা করা হবে। এই দ্বিতীয় পরীক্ষাটা করানো হবে ল্যাবেই। সেখানেও যদি রিপোর্ট পজিটিভ আসে তা হলেই সংক্রমণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
এই পদ্ধতি বা পরিকল্পনা কি সঠিক?
অধ্যাপক সুমন্ত্র চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘হ্যাঁ, এটাই ঠিকঠাক পরিকল্পনা। ট্রুন্যাটে রিপোর্ট নেগেটিভ এলে চিন্তা নেই। আর রিপোর্ট পজিটিভ এলে দ্রুত ল্যাবে পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে। খুব তাড়াতাড়ি যত বেশি সম্ভব টেস্ট করিয়ে ফেলার জন্য এর চেয়ে ভাল পরিকল্পনা কমই হয়।’’ তবে ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেসের ওই সিনিয়র প্রফেসরের পরামর্শ, ‘‘দুটো তথ্যকে লিঙ্ক করা জরুরি। অর্থাৎ ট্রুন্যাটে যাঁদের রিপোর্ট পজিটিভ এল, তাঁদের কত জনের রিপোর্ট পরে ল্যাবের পরীক্ষাতেও পজিটিভ এল, সেই তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে রেকর্ডে থাকা জরুরি। তা হলেই পরবর্তী কালে কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। ট্রুন্যাটের পজিটিভ রিপোর্টের কত শতাংশ সত্যিই পজিটিভ হয়, সে বিষয়ে ধারণা আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে।’’