ছবি পিটিআই।
যত দিন পর্যন্ত বাজার স্বাভাবিক না হচ্ছে, তত দিন ভর্তুকিতে পেঁয়াজ বিক্রি চালিয়ে যাবে রাজ্য। এখন আর শুধু সুফল বাংলার গাড়ি থেকে নয়, জেলায়-জেলায় রেশন দোকান এবং স্বনির্ভর দলের মাধ্যমেও পেঁয়াজ বিক্রি করা হবে। শনিবার নবান্ন সূত্রে এ কথা জানানো হয়েছে।
সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন, বাজারদর স্বাভাবিক না-হওয়া পর্যন্ত সরকারকে ভর্তুকিতে পেঁয়াজ বিক্রি করে যেতে হবে। এক সরকারি কর্তা জানান, এখন প্রতি কিলোগ্রামে অন্তত ৫০ টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। অর্থ দফতর এ নিয়ে কার্পণ্য করছে না।
প্রায় ৯০০ রেশন দোকান এবং ৩০০ স্বনির্ভর দলের মাধ্যমে জেলায় জেলায় ৫৯ টাকা কিলোগ্রাম দরে পেঁয়াজ বিক্রি চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে এখনও সব রেশন দোকান পেঁয়াজ বিক্রিতে রাজি হচ্ছে না। দিন দুয়েকের মধ্যে এ নিয়ে খাদ্য দফতরের সঙ্গে উদ্যানপালন দফতরের সমঝোতা হতে পারে বলে নবান্নের একটি সূত্র দাবি করেছে।
সম্প্রতি রাজস্থান থেকে পেঁয়াজ এসে পৌঁছেছে রাজ্যে। এ মাসের শেষের দিকে কেন্দ্রীয় সরকার ইজ়রায়েল এবং মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানি করছে। আগেই কেন্দ্রের কাছে ৮০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ চেয়ে রেখেছিল রাজ্য। সেই পেঁয়াজ আসা শুরু হলে রাজ্যের বাজারেও সঙ্কট অনেকটা কাটবে বলে মনে করছে নবান্ন। বছরে রাজ্যে ৮০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। তার অর্ধেকের কাছাকাছি এখানেই উৎপাদন হয়। বাকিটা বাইরের রাজ্য থেকে আমদানি করতে হয়। প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘নাশিক থেকেই বেশির ভাগ পেঁয়াজ আসে। কিন্তু এখন সেখান থেকে পেঁয়াজ আসবে না। ফলে অন্য জায়গা থেকে পেঁয়াজ আনার চেষ্টা চলছে।’’
রাজ্যে বছরে ৮ লক্ষ ২০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ প্রয়োজন হয়। উদ্যানপালন দফতরের দাবি, আগে রাজ্যে মাত্র দু’লক্ষ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হত। তা ক্রমে ক্রমে সাড়ে ছ’লক্ষ মেট্রিক টনে পৌঁছেছে। কিন্তু এ বার অনিয়মিত বৃষ্টির ফলে বর্ষাকালীন পেঁয়াজের ফলন প্রায় হয়নি। অক্টোবরের বৃষ্টিতে মার খেয়েছে সামগ্রিক পেঁয়াজের ফলনও। ফলে রাজ্যের সিংহ ভাগ চাহিদা মেটাতে পেঁয়াজ আমদানির উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। রাজ্যের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার পেঁয়াজ-সঙ্কটের ব্যাপারে অনুমান করতে পারেনি। ফলে আমদানির ব্যাপারে কোনও আগাম পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় উপভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রক নেয়নি। বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার পরে আমদানিতে জোর দিয়েছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় সরকার যে পেঁয়াজ আমদানি করছে, তার থেকে মাত্র ৮০০ মেট্রিক টন নিতে চেয়েছে রাজ্য। নবান্নের কর্তাদের একাংশের মতে জোগানের সংকট যেখানে বছরভর চলবে, সেখানে ৮০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজে চাহিদা মিটবে কি না, তা বলা মুশকিল।
এ দিকে প্রতিটি ব্লকে বিডিও-র নেতৃত্বে টাস্ক ফোর্স গঠন করে বাজারে বাজারে হানা দিচ্ছেন সরকারি আধিকারিকেরা। শুক্রবারেই ক্যানিং বাজারে হানা দেন বিডিও নিলাদ্রি শেখর দে। সেই মুহূর্তে সেখানে ১৪০ টাকা কিলো দরে পেঁয়াজ বিক্রি হলেও আধিকারিকদের হানার খবর পেয়ে তা এক ধাক্কায় ১২০ টাকায় নেমে আসে। একই ছবি দেখা গিয়েছে শনিবার সকালে গোসাবা বাজারে। সেখানে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হলেও পরে তা ১২০ তে
নেমে আসে। বাসন্তী বাজারে পেঁয়াজ কেজি প্রতি ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। টাস্ক ফোর্সের হানার খবর পেয়ে দাম ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা প্রতি কেজিতে নেমে গিয়েছিল।