বছর কয়েক আগে রাজ্যে অন্য চেহারা নেয় রামনবমীর মিছিল। ফাইল চিত্র
করোনা পরিস্থিতির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে রাজ্যে জাঁকজমক করে রামনবমী পালন করতে পারেনি বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। এ বার করোনা সংক্রমণ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসার পরে আগামী ১০ এপ্রিল রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বড় আকারে রামনবমী পালন ও শোভাযাত্রায় উদ্যোগী হয়েছে পরিষদ। ইতিমধ্যে সব জেলা সংগঠনকে এই বিষয়ে নির্দেশও পাঠানো হয়েছে বলে পরিষদ সূত্রে খবর। সেই নির্দেশে বলা হয়েছে, বিভিন্ন জায়গায় সংগঠনের শক্তি অনুযায়ী কর্মসূচি ছোট বা বড় হতে পারে কিন্তু রাজ্যের সব ব্লকেই যেন রামনবমী পালন হয়। তিথি মেনে যেমন ১০ এপ্রিল অনুষ্ঠান হবে তেমনই পরের কয়েকটা দিনেও শোভাযাত্রা করা যেতে পারে বলে পরিষদের রাজ্য দফতর থেকে নির্দেশ গিয়েছে।
ইতিমধ্যেই যে সংগঠন রামনবমী পালনের তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে সে কথা জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সর্বভারতীয় নেতা শচীন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘‘গত দু’বছর রামনবমীতে করোনার কারণে বড় কোনও সমাবেশ বা শোভাযাত্রার আয়োজন করা যায়নি। তবে ঘরোয়া ভাবে অনেক জায়গাতেই অনুষ্ঠান হয়েছে। এখন পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক। তাই রাজ্যের সব ব্লকেই আমরা রামনবমী পালন করব। তার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।’’ একই সঙ্গে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে গেরুয়া শিবিরের অপর সংগঠন হিন্দু জাগরণ মঞ্চ। মঞ্চের রাজ্য মুখপাত্র পারিজাত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরাও প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি। সর্বত্রই রামনবমী ধূমধান করে পালন করব আমরা। তবে কিছু কিছু জায়গায় বড় মাপের আয়োজনে উদ্যোগী হয়েছি। খুব তাড়াতাড়ি তার বিস্তারিত জানা যাবে।’’ রাজ্যে যে সব জায়গায় মঞ্চ অতীতে বড় আকারের কর্মসূচি নিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম আসানসোলে অবশ্য এ বার মিছিল হবে না বলেই প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে। কারণ, রামনবমীর দু’দিন পরেই ১২ এপ্রিল আসানসোল লোকসভা আসনে উপনির্বাচন রয়েছে।
প্রসঙ্গত বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার আগে বাংলায় হিন্দু জাগরণ মঞ্চের মূল দায়িত্বে ছিলেন দিলীপ ঘোষ। সেই সময় থেকেই রাজ্যের কয়েকটি শহরে বড় আকারে রামনবমীর মিছিল শুরু হয়। দিলীপ রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি হওয়ার পরে ঘোষিত ভাবে না হলেও পদ্ম-শিবিরের অন্যতম বার্ষিক কর্মসূচি হয়ে ওঠে রামনবমী পালন। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সশস্ত্র মিছিল হওয়া নিয়ে নানা অভিযোগও ওঠে। বিজেপি শিবিরের অনেকেই মনে করেন, রাজ্যে দলের পক্ষে হিন্দুত্বের হাওয়া তৈরি করেছিল ওই কর্মসূচি। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোট কিংবা ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে যে হাওয়ার সুবিধা মিলেছিল। কিন্তু এখন সদ্য শেষ হওয়া পুরভোটে পর্যুদস্ত হওয়ার পরে বিজেপি-র সংগঠন যে চেহারা নিয়েছে তাতে রামনবমী পালন কতটা সফল করা যাবে তা নিয়ে চিন্তা রয়েছে গেরুয়া শিবিরে। যদিও বরাবরের মতো এই কর্মসূচি থেকে দূরত্ব রাখার পথেই হাঁটছে বিজেপি। দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রামনবমীতে বিজেপি-র কোনও কর্মসূচি নেই। এটা হিন্দু জনতার ভাববাগের বিষয়। তবে মানুষ যদি পুরুষোত্তম রামের সঙ্গে সব সময় বিজেপি-কে জড়ায় তবে সেটা আমাদের কাছে শ্লাঘার বিষয়। আর রামের মিছিল রামের দেশে হবে না তো কি বাবরের দেশে হবে?’’