সফ্‌টওয়্যারে নয়া প্রযুক্তি রুখবে গাড়ি জালিয়াতি

পুরনো গাড়ির মালিকানা পরিবর্তনের সময়ে জালিয়াতি রুখতে কেন্দ্রের নতুন সফটওয়্যার প্রয়োগ করা শুরু করল রাজ্য পরিবহণ দফতর। বাহন-৪ নামের নতুন সফট্ওয়্যারের মাধ্যমে দফতরের অসাধু চক্র ভাঙার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণও কমানো যাবে বলে মত দফতরের কর্তাদের।

Advertisement

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৭ ০১:০৪
Share:

পুরনো গাড়ির মালিকানা পরিবর্তনের সময়ে জালিয়াতি রুখতে কেন্দ্রের নতুন সফটওয়্যার প্রয়োগ করা শুরু করল রাজ্য পরিবহণ দফতর। বাহন-৪ নামের নতুন সফট্ওয়্যারের মাধ্যমে দফতরের অসাধু চক্র ভাঙার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণও কমানো যাবে বলে মত দফতরের কর্তাদের।

Advertisement

কী রকম জালিয়াতি? দফতরের এক কর্তা জানান, পুরনো গাড়ি হাত বদলের সময়ে গাড়ির বয়স নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যাপক জালিয়াতি হয়। অভিযোগ, কোনও ব্যক্তি পুরনো গাড়ি বিক্রি করার সময়ে পরিবহণ দফতরের কয়েক জনকে হাত করে তার বয়স কমিয়ে দিতেন। যেমন, গাড়িটি বারো বছরের পুরনো হলে দফতরের কয়েক জনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বয়স কমিয়ে সাত করা যেত। ফলে ওই ব্যক্তি যেমন গাড়ির দাম বেশি পেতেন, তেমনই প্রতারিত হতেন ক্রেতা। কিছু দিন গাড়ি চলার পরেই দেখা যেত ইঞ্জিন থেকে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। তিন বছর পার হওয়ার পর থেকে যে হারে ওই গাড়ি থেকে দূষণ ছড়াত তার প্রভাব পড়ত পরিবেশেও। ধোঁয়া পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়েও তাজ্জব হয়ে যেতেন অনেকে। কিন্তু এই নতুন সফটওয়্যারের ফলে সেই সম্ভাবনা থাকবে না বলে জানান দফতরের এক কর্তা।

পরিবহণ দফতরের সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মালিকানা পরিবর্তনের সময়ে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে বাহন-৪ এর সাহায্য নেওয়া হয়েছে। কলকাতা মেট্রোপলিটন এলাকায় পরীক্ষামূলক ভাবে ওই সফ্‌টওয়্যার চালুও হয়ে গিয়েছে। এখন কিছু সাময়িক অসুবিধা রয়েছে। আশা করি দ্রুত তা কাটিয়ে উঠে এপ্রিল মাস থেকেই গোটা রাজ্যে এই ব্যবস্থা চালু করা যাবে।’’

Advertisement

কী ভাবে হবে গোটা প্রক্রিয়াটি? পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, যে কোম্পানি গাড়ি তৈরি করবে তারা গাড়ির বয়স-সহ সমস্ত বিবরণ গুগল-এর ‘ক্লাউড ডেটা স্টোরেজ’ এ লিখে দেবে। গাড়ির মালিকের নাম লিখে দেবেন গাড়ির ডিলার। এর পরে সেই তথ্য চলে আসবে বাহন-৪ সফটওয়্যারে। কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের থেকে ওই বিবরণ একই ভাবে রাজ্যের পাবলিক ভেহিকল ডিপার্টমেন্ট বা পিভিডি-তে চলে আসবে। পুরনো গাড়ির মালিক পরিবর্তনের সময়ে স্যাশে নম্বর ওই সফট্ওয়্যারের দিলেই গাড়ির সমস্ত বিবরণ দেখা যাবে। পরিবহণের কোনও কর্মচারীই সেটা পরিবর্তন করতে পারবেন না। ফলে কোনও ভাবে গাড়ির বয়স বা কোনও কিছুর তথ্যই গোপন করা সম্ভব হবে না। এর ফলে পুরনো ইঞ্জিন থেকে ব্যাপক হারে কার্বন মনোক্সাইড বের হওয়ার সম্ভাবনা কমবে।

এই সফট্ওয়্যারটি প্রথমে কসবা ও পরে বেলতলা পিভিডি-তে পরীক্ষামূলক ভাবে চালু হয়েছে। ধাপে ধাপে সমস্ত আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরে তা পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তবে অনলাইন এই ব্যবস্থার কুফলও কিছু মিলছে। এক কর্তার কথায়, ‘‘মাঝে মধ্যে গাড়ি তৈরির কোম্পানি গাড়ির বিবরণ দেওয়ার সময়ে ভুল করে ফেলেছেন। কয়েক ধাপ পার হয়ে বেলতলা পিভিডি-র কর্মীরা সেই ভুল ধরতে পেরেছেন। এ ক্ষেত্রে গাড়ির বিমার টাকা পেতে অসুবিধা হতে পারে।’’ তবে আশ্বাস দিয়ে ওই কর্তা বলেন, ‘‘বাহন-৪ সফট্ওয়্যারেই কোনও কিছু ভুলের রিপোর্ট পাঠানোর জায়গা রয়েছে। সেখানে তা জানানো যায়।’’ তার পরে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক থেকে সেই বিবরণ ঠিক করা হবে। ফলে সাময়িক ভুল হলেও পরে তা শুধরে নেওয়ার পথও রয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement