বিক্ষোভকারী চাকরিপ্রার্থীরা। ফাইল চিত্র।
শুধু র্যাঙ্ক অদলবদল করা বা পাশ না-করা প্রার্থীকে চাকরি দেওয়াই নয়, শূ্ন্যপদ এবং কত জনকে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হবে, তার অনুপাতিক হারও ঠিক রাখা হয়নি। এবং সেখান থেকেও নিয়োগে বেনিয়ম হয়েছে বলে এসএসসি আন্দোলনকারীদের অভিযোগ।
এসএসসির নিয়ম অনুযায়ী, কোনও বিষয়ে যদি ১০০টি শূন্যপদ থাকে, তা হলে ১৪০ জনকে ডাকা যাবে। ১০০টি শূন্যপদের জন্য আনুপাতিক হার ঠিক রাখতে গেলে মেধা তালিকায় প্রথমে থাকা ১০০ জনকে ডাকার পরে ওয়েটিং লিস্ট থেকে ৪০ জনকে ডাকার কথা। অভিযোগ, এই নিয়মকে লঙ্ঘন করে ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রার্থী বাছাই করা হয়েছে কোথাও দ্বিগুণ, কোথাও তিন গুণ, কোথাও বা চার গুণ। চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, ইন্টারভিউয়ের জন্য বাছাই করার আনুপাতিক হারের নিয়ম ভাঙার পর দেখা গিয়েছে, এমন সব প্রার্থী চাকরি পেয়েছেন, যাঁদের চাকরি পাওয়ার কথাই নয়। কারণ, আনুপাতিক হারের নিয়ম মানলে ওয়েটিং লিস্টে থাকা ওই সব প্রার্থী ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকই পেতেন না।
চাকরিপ্রার্থীরা জানান, ইন্টারভিউয়ে ডাকার সময় নিয়ম মানা হচ্ছে না বলে তাঁদের সন্দেহ হওয়ায়, তাঁরা প্রতিটি বিষয়ের পূর্ণাঙ্গ মেধা তালিকা দাবি করেন। সেই নিয়ে মামলাও হয়। এসএসসি পূর্ণাঙ্গ মেধা তালিকা দিলেও প্রার্থীদের নম্বর দেয়নি। শুধু প্রার্থীদের নাম ও রোল নম্বর দেয়। প্রার্থীরা জানাচ্ছেন, সেই মেধা তালিকা দেখেই তারা বুঝতে পারেন, ইন্টারভিউয়ে ডাকার ক্ষেত্রে আনুপাতিক হার মানা হয়নি।
চাকরিপ্রার্থী ইলিয়াস বিশ্বাস জানান, ইতিহাসে ওবিসি এ ক্যাটেগরি মেল- ফিমেল নবম-দশমে শূন্যপদ ছিল ৭২টি। আনুপাতিক হার মানতে গেলে ওয়েটিং লিস্ট থেকে রাখার কথা ছিল ২৮ জন প্রার্থীকে। কিন্তু দেখা গেল, সেই জায়গায় ওয়েটিং লিস্ট থেকে ডাকা হয়েছে ১৮৩ জনকে। তাঁর আরও হিসেব, ইতিহাসেরই মেল-ফিমেল জেনারেল ক্যাটেগরিতে নবম-দশমে ২১৯টি শূন্যপদ ছিল। সেখানে নিয়মমাফিক ওয়েটিং লিস্ট থেকে ডাকার কথা ছিল ৮৮ জনকে। কিন্তু দেখা গিয়েছে ওয়েটিং লিস্ট থেকে ডাকা হয়েছে ১৩৬ জনকে। চাকরিপ্রার্থীদের প্রশ্ন, তা হলে কী করে তাঁরা বুঝবেন, যে ওয়েটিং লিস্টে থাকা শেষের দিকে থাকা প্রার্থীই ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে আগে চাকরি পেয়ে যাচ্ছেন না?
উচ্চ-প্রাথমিক, গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নবম থেকে দ্বাদশ সব প্রার্থীদের একটাই প্রশ্ন, প্রার্থীদের নম্বর-সহ মেধা তালিকা কেন প্রকাশ করে না এসএসসি? কেন প্রার্থীর অ্যাকাডেমিক নম্বর, লিখিত পরীক্ষার নম্বর, ইন্টারভিউয়ের নম্বর আলাদা করে প্রকাশ করে না তারা? উচ্চ প্রাথমিকে আদালতের নির্দেশে নম্বর-সহ মেধা তালিকা প্রকাশ হতেই কিন্তু বেনিয়ম স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
উচ্চ প্রাথমিকের এক চাকরিপ্রার্থী সুশান্ত ঘোষ বলেন, “আদালতের নির্দেশে ২০১৯ সালের ৪ অক্টোবর নম্বর-সহ আমাদের মেধা তালিকা প্রকাশ করেছিল এসএসসি। সেই তালিকায় দেখলাম, লিখিত পরীক্ষার নম্বর হেরফের করা হয়েছে। বেশির ভাগেরই নম্বর বেড়ে গিয়েছে। কারও হয়তো বেড়েছে ১০ তো কারও বেড়েছে ৫০। এসএসসি জানায়, রিভিউ-এর ভিত্তিতেই নম্বর হেরফের। কিন্তু প্রার্থীরা এসএসসির এই উত্তরে সন্তুষ্ট না হয়ে মামলা করেন। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে হাই কোর্ট ২০২০ সালের ১১ ডিসেম্বর মেধা তালিকা বাতিল করে ফের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে বলে। যদিও সেই নিয়োগ প্রক্রিয়াও এখনও শেষ হয়নি।”
যদিও এসএসসির বর্তমান চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার বলেন, ‘‘এ বার মেধা তালিকা প্রকাশিত হলে পূর্ণাঙ্গ মেধা তালিকাই বার করা হবে। সেখানে নম্বর বিভাজনও থাকবে। তবে সিবিআই তদন্তের কারণে এসএসসি অফিসের ডেটা রুম বন্ধ থাকায় কাজের গতি কিছুটা কমার সম্ভাবনা তো থাকছেই।’’
এসএসসির বেনিয়মের অভিযোগ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর মতামত জানতে চাইলে তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএসের উত্তর দেননি। তবে তিনি আগেই বলেছিলেন, প্রতি বছর এসএসসি পরীক্ষার প্রক্রিয়া চলছে। নবম থেকে দ্বাদশের জন্য এবং কর্মশিক্ষা, শারীরশিক্ষার জন্য অতিরিক্ত শূন্যপদও তৈরি করা হয়েছে। অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি হলে আন্দোলনকারীদের চাকরির সুরাহা হবে বলেই সরকারের দাবি। তবে চাকরিপ্রার্থীদের মতে, নিয়োগপত্র না পাওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ-আন্দোলন চলবে। কারণ, তাঁরা আগেও অনেক প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন।
তীব্র গরমে নবম-দ্বাদশের বিক্ষোভ মঞ্চে বসে হাতপাখা নাড়তে নাড়তে চাকরিপ্রার্থীদের কয়েক জন বলেন, ‘‘টাকা দিইনি বলে কি আমাদের চাকরি হবে না? রাস্তায় বসে আন্দোলন করে যেতে হবে? আমরা সিবিআইকে সব কথা খুলে বলতে তৈরি।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।