প্রাথমিকের এই মামলাতেই প্রথম সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। — ফাইল ছবি।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের থেকে প্রাথমিকের দু’টি মামলা নিয়ে বিচারপতি অমৃতা সিন্হাকে দেওয়া হল। প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতির মূল মামলা ছিল এই দু’টি। মূল মামলাকারী সৌমেন নন্দী এবং রমেশ মালিক। প্রাথমিকের এই মামলাতেই প্রথম সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের আগে প্রাথমিকের মামলার বিচার করতেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা।
প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে দু’টি মামলার একসঙ্গে শুনানি চলেছে। ২০২২ সালের জুলাই মাসে ওই মামলার শুনানি হয়েছিল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। একটির মামলাকারী রমেশ মালিক এবং অন্যটির সৌমেন নন্দী। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী, অবসরপ্রাপ্ত সিবিআই কর্তা উপেন বিশ্বাস ২৩ জুলাই ২০২২ সালে মুখবন্ধ খামে কোর্টে কিছু নথি জমা দিয়েছিলেন। বিচারপতি সেই নথি সিবিআইয়ের কাছে পাঠিয়ে দেন। রমেশের আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত একটি অতিরিক্ত হলফনামা জমা দিয়েছিলেন। তাতে নিয়োগ দুর্নীতিতে নতুন কিছু তথ্য কোর্টকে জানানো হয়।
বিশেষজ্ঞ কমিটির সভা কী ভাবে ডাকা হত, তার কার্যবিবরণীতে সদস্যেরা সই করতেন কি না, ভুল প্রশ্নের জন্য ১ নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্ত কী হয়েছিল, তা দেবজ্যোতিবাবুর কাছে জানতে চেয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। দেবজ্যোতিবাবুর পরে পঞ্চাননবাবুকেও কাঠগড়ায় তুলে বয়ান লিপিবদ্ধ করেছিলেন বিচারপতি। শেষে তিনি সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই মামলা দু’টি এখন শুনবেন বিচারপতি সিন্হা।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর সোমবার সকালে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছ থেকে মামলার ফাইল ফেরত চায় কলকাতা হাই কোর্ট। আদালতের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের কার্যালয় থেকে এসেছে এই নির্দেশ।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতেই এই পদক্ষেপ। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছিল বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস নিয়োগ সংক্রান্ত দু’টি মামলা সরিয়ে নেওয়ার জন্য। সোমবার সেই নিয়োগ মামলার ফাইলই চেয়ে পাঠানো হয়েছে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে। প্রাথমিকের নিয়োগ দুর্নীতিতে সৌমেন নন্দী এবং রমেশ মালিকের মামলার ফাইল চেয়ে পাঠানো হয়েছে বিচারপতির কাছে।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের (বাঁ দিকে) থেকে প্রাথমিকের দু’টি মামলা নিয়ে বিচারপতি অমৃতা সিন্হাকে (ডান দিকে) দেওয়া হল।
গত শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট ওই নির্দেশ দেয়। টিভিতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার সংক্রান্ত বিতর্কেই নিয়োগ সংক্রান্ত দু’টি মামলা সরানোর নির্দেশ এবং তাঁর দেওয়া দু’টি নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। এ বার ওই মামলার ফাইল ফেরত চাওয়া হল বিচারপতির কাছ থেকে।
শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ জানার পর অবশ্য বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, তাঁর ধারণা, ধীরে ধীরে সমস্ত মামলাই সরিয়ে নেওয়া হবে তাঁর এজলাস থেকে। তবে একই সঙ্গে বিচারপতি জানিয়েছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ তিনি যথাযথ ভাবে পালন করবেন। শুক্রবার রাতে হাই কোর্ট চত্বরে দাঁড়িয়ে বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের ওই নির্দেশকে স্বাগত জানিয়ে বলেছিলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট যুগ যুগ জিয়ো’। তবে একই সঙ্গে, ‘আজ আমার মৃত্যুদিন’ বলে আক্ষেপ করতেও শোনা যায় তাঁকে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘আমি কোনও ব্যক্তিগত স্বার্থ নিয়ে এই মামলার বিচারের দায়িত্ব নিইনি। তবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমি বরাবর সরব হয়েছি। বিচারক হিসাবে যত দিন আছি, তত দিন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলব। যখন থাকব না, অন্য কাজ করব, তখনও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হব।’’