পাঠ-তালিকার বাইরে থেকে প্রশ্ন কার ভুলে

মাধ্যমিকে এ বার হিন্দি পরীক্ষায় পাঠ্যক্রমের বাইরে থেকে ১২ নম্বরের প্রশ্ন আসার অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শুরু করল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। এই ব্যাপারে একটি দলও গঠন করা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৮ ০৫:০০
Share:

পরপর কয়েকটি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস বা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার অভিযোগকে ঘিরে হইচই চলছিল। তদন্তেরও ব্যবস্থা হয়েছে কয়েকটি ক্ষেত্রে। মাধ্যমিকে এ বার হিন্দি পরীক্ষায় পাঠ্যক্রমের বাইরে থেকে ১২ নম্বরের প্রশ্ন আসার অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শুরু করল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। এই ব্যাপারে একটি দলও গঠন করা হয়েছে।

Advertisement

সময়ের আগেই প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলা, প্রশ্ন ফাঁস, প্রশ্ন বেরিয়ে যাওয়ার অভিযোগ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। একই ভাবে প্রশ্ন উঠছে পাঠ্যক্রমের বাইরে থেকে প্রশ্ন আসায়। নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রম মেনেই ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকদের প্রশ্নপত্র তৈরি করার কথা। তাঁদেরও পরে সেটা চূড়ান্ত করার দায়িত্ব মডারেটরদের। প্রশ্ন উঠছে, ওই দায়িত্বপ্রাপ্তদের চোখ এড়িয়ে একটি বিষয়ে পাঠ্যক্রমের বাইরে থেকে ১২ নম্বরের প্রশ্ন এল কী ভাবে? সামগ্রিক ভাবে প্রশ্নপত্র তৈরির পদ্ধতি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষকদের একাংশ।

ওই সব প্রশ্নের সরাসরি জবাব এড়িয়ে পর্ষদের এক কর্তার আশ্বাস, যারা হিন্দি পরীক্ষায় বসেছিল, তাদের সকলকেই ওই ১২ নম্বর দিয়ে দেওয়া হবে। ‘‘তবে এটা মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়। তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট পেলে যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে,’’ বলেন ওই পর্ষদ-কর্তা।

Advertisement

মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ১২ মার্চ। হিন্দি প্রথম ভাষার পরীক্ষার পরেই শিক্ষাজগৎ থেকে অভিযোগ আসে, পাঠ্যক্রমের বাইরে থেকে প্রায় ৩১ নম্বরের প্রশ্ন করা হয়েছে। অভিযোগ খতিয়ে দেখে পর্ষদের দাবি, ছোট ও মাঝারি মিলিয়ে পাঠ্যক্রম-বহির্ভূত প্রশ্ন হয়েছে ১২ নম্বরের। তাই সব প্রধান পরীক্ষককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, পরীক্ষায় বসলেই সব ছাত্রছাত্রী ওই ১২ নম্বর পেয়ে যাবে। অঙ্কের ক্ষেত্রেও পাঁচ নম্বরের পাঠ্যক্রম-বহির্ভূত প্রশ্ন এসেছে বলে জানান বিভিন্ন প্রধান পরীক্ষক। পর্ষদের এক বৈঠকে এই বিষয়কে কেন্দ্র করে বাগ্‌বিতণ্ডাও হয়। কিন্তু পর্ষদ থেকে এই বিষয়ে কোনও সুস্পষ্ট নির্দেশিকা দেওয়া হয়নি।

প্রশ্নপত্র তৈরি

•কয়েক জন শিক্ষক পাঠ্যক্রম মেনে পৃথক প্রশ্নপত্র তৈরি করেন। • তা থেকে বাছাই করে তিন সেট প্রশ্নপত্র চূড়ান্ত করেন মডারেটরেরা।

প্রশ্ন যেখানে

•পাঠ্যক্রমের বাইরে থেকেও যে প্রশ্ন হচ্ছে, সেটা তাঁরা জানতে পারলেন কেন? • পাঠ্যক্রম সম্পর্কে তাঁদের আদৌ স্বচ্ছ ধারণা ছিল কি?

যত নম্বরের প্রশ্ন নিয়ে অভিযোগ, সকলকে তা পুরোপুরি দিয়ে দেওয়াটা সমস্যার কোনও সমাধানই নয় বলে শিক্ষা শিবিরের বড় অংশের অভিমত। তাঁদের বক্তব্য, প্রশ্নপত্র তৈরির পর্বে নিশ্চয়ই এমন কিছু শৈথিল্য থেকে যাচ্ছে, যার পরিণামে এমন ঘটনা ঘটছে। সেই ফাঁকফোকর বন্ধ করার বন্দোবস্ত হচ্ছে কি?

প্রশ্নপত্র তৈরির পদ্ধতি ব্যাখ্যা করে পর্ষদের এক কর্তা জানান, প্রথমে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পাঁচ জন শিক্ষককে বেছে নেওয়া হয়। তাঁরা পাঠ্যক্রম ও নম্বরের বিভাজনের ভিত্তিতে প্রশ্নপত্র তৈরি করেন। সেই সব প্রশ্নপত্র মুখবন্ধ খামে জমা দেন মডারেটরদের কাছে। মডারেটরেরা সেগুলি থেকে বাছাই কররে তিনটি সেটের প্রশ্নপত্র তৈরি করেন। সেগুলিই হয় চূড়ান্ত প্রশ্নপত্র।

প্রশ্ন উঠছে, ১২ নম্বরের প্রশ্ন যে পাঠ্যক্রমের বাইরে থেকে করা হয়েছে, ওই সব শিক্ষক বা মডারেটরদের কেউই কি সেটার লক্ষ করেননি? একসঙ্গ সকলে এতটা অসতর্ক হন কী ভাবে? পর্ষদের এক কর্তা বলেন, ‘‘এ ভাবে সকলের ভুল কী করে হল, সেটাই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’

বিতর্ক এ বার পিছু ছাড়ছে না মাধ্যমিকের। ময়নাগুড়ির সুভাষনগর হাইস্কুলে নির্ধারিত সময়ের আগে প্রশ্নপত্র খোলাকে কেন্দ্র করে রাজ্যে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে পর্ষদের যে-সভাপতির নেতৃত্বে মাধ্যমিক পরীক্ষা প্রহসনে পরিণত হল, তাঁকে রেখে দেওয়া সরকারের পক্ষে ক্ষতিকারক হবে,’’ বলছেন পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক ও শিক্ষা বিষয়ক কর্মচারী সমিতির সম্পাদক সুব্রত চক্রবর্তী। এবিটিএ-র সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এমন লোকেদের প্রশ্নকর্তা এবং মডারেটর করা হয়েছে, পাঠ্যক্রম সম্পর্কে যাঁদের কোনও ধারণাই নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement