তির-ধনুক হাতে মনোনয়নের পথে সিপিএম। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
ধনুকের ছিলায় তির জুড়ে জনা পনেরো আদিবাসী হাঁটছেন মিছিলের পুরোভাগে। কাস্তে-হাতুড়ি-তারা, হাত চিহ্ন প্রতীকের পতাকা নিয়ে পিছনে এগোচ্ছেন সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লক, কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা। নলহাটি-১ ব্লক অফিসে মনোনয়নপত্র জমা দিতে।
বৃহস্পতিবার সকালে এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। বদলাল কিছুক্ষণেই।
বিরোধীদের অভিযোগ, তৃণমূল ‘আশ্রিত’ কয়েকশো দুষ্কৃতী বোমা, রড, লাঠি, ধারাল অস্ত্র নিয়ে মিছিলে হামলা চালায়। মিছিল ব্লক অফিসের কাছাকাছি পৌঁছতেই একের পর এক বিস্ফোরণে কাঁপে গোটা এলাকা। শুরু হয় ইটবৃষ্টি। প্রতিরোধে ইট-পাথর, তির ছোড়ে বিরোধীরাও। কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি সামলাতে নামে পুলিশ-বাহিনী। ঝামেলার মধ্যেই বাম ও কংগ্রেস প্রার্থীরা ব্লক অফিসের ভিতরে মনোনয়ন জমা দিতে ঢুকে যান। সেখানেও শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি। মাথা ফাটে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্র ডোমের। জখম হন কয়েক জন বামকর্মী। আহত হন নলহাটি থানার এক পুলিশকর্মীও। সিপিএম সূত্রে খবর, আশঙ্কাজনক অবস্থায় দলের কর্মী হীরু লেট রামপুরহাট হাসপাতালে ভর্তি।
নলহাটি-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি অশোককুমার ঘোষের পাল্টা দাবি, ‘‘বামেদের নেতৃত্বেই তৃণমূল কর্মীদের উপর সশস্ত্র আক্রমণ করা হয়। তৃণমূল তার প্রতিরোধ করেছে মাত্র। বাইরে যারা ছিল, তারা তৃণমূলের নয়।’’ তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘এ সব সংবাদমাধ্যমের অপপ্রচার।’’
নলহাটি ১ ব্লক অফিসের সামনে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটাচ্ছে পুলিশ। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
বীরভূমের পুলিশ সুপার নীলকান্তম সুধীর কুমারের দাবি, স্কুলের পিছনে একটি ফাঁকা মাঠে বোমা ফাটে। সেটা ব্লক অফিস থেকে কম করে ২০০ মিটার দূরে। আর বিরোধী দলের মিছিলে কেন তির-ধনুক ছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা। বৃহস্পতিবার নবান্নে তিনি বলেন, ‘‘এটা তো সামাজিক কোনও উৎসব নয় যে তির-ধনুক নিয়ে মিছিল করা হচ্ছে।’’ বিরোধীদের অবশ্য বক্তব্য, আদিবাসীদের কাছে সব সময়ই তির-ধনুক থাকে। এনে অন্যায় কিছু নেই।
তবে রক্ত ঝরলেও ‘শাসক দলের সন্ত্রাস’ উপেক্ষা করে মনোনয়ন জমা দিতে পারায় উজ্জীবিত বাম শিবির। রামচন্দ্রবাবু, বা ফরওয়ার্ড ব্লকের বীরভূম জেলা সম্পাদক দীপক চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫০ শতাংশের বেশি আসনে তাঁরা মনোনয়ন দিয়েছেন। অন্য সব আসনেও জমা দেবেন।