মঙ্গলবার সকাল থেকেই পারদ চড়ছিল। সন্ধে হতেই শহরের বুকে আছড়ে পড়ল দামাল কালবৈশাখী। ১৩ মিনিটের ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেল মহানগর। বাদ গেল না জেলাগুলিও। গ্যালারির পাতায় দেখুন, শহরজুড়ে ঝড়ের তাণ্ডবের নানা ছবি।
একটি নয়, পর পর দু’টি বৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডব দেখা যায় মঙ্গলবার। রাত ৭টা ৪২ মিনিট নাগাদ ঘণ্টায় ৮৪ কিলোমিটার বেগে প্রথম ঝড়টি তাণ্ডব শুরু করে মহানগরে। তার ঠিক ১৩ মিনিট পরই হানা দেয় দ্বিতীয়টি। এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯৮ কিলোমিটার। সেই সঙ্গে তুমুল বৃষ্টি।
বৈশাখীর তাণ্ডবে রাজ্যজুড়ে মৃত্যু হয়েছে মোট ১৩ জনের। কলকাতা ছাড়াও হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়ায় দেখা গিয়েছে ঝড়ের দাপট। মাত্র ১৩ মিনিটের ঝড়ে বিপর্যস্ত হয়ে যায় জনজীবন। কলকাতা ও সল্টলেকের বিভিন্ন রাস্তায় অন্তত দেড়শো গাছ ও গাছের ডাল ভেঙে পড়ে।
শুধু ঝড় নয় সেই সঙ্গে দোসর ছিল মুষলধারায় বৃষ্টি। শহর ও শহরতলির বিভিন্ন জায়গায় জল জমে আর গাছ পড়ে স্তব্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। ব্যাহত হয় ট্রেন পরিষেবা। দীর্ঘক্ষণ বন্ধ থাকে মেট্রোও। রাত পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন জায়গা বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না।
রে়ড রো়ড, বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড, লেনিন সরণির মতো শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় গাছ ভেঙে পড়ে যান চলাচল ব্যাহত হয়। ফেয়ারলি প্লেস, পার্ক স্ট্রিট, এন্টালি, শোভাবাজার থেকে সল্টলেক— একের পর এক জায়গায় গাছ পড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায় মহানগর।
বেহালার পর্ণশ্রী রোড, লেনিন সরণি-সহ শহরের নানা জায়গায় গাছ পড়ে মৃত্যু হয় বেশ কয়েক জনের। বালিগঞ্জ বিজন সেতুতে ঝড়ে ল্যাম্পপোস্ট উল্টে বিপত্তি হয়। মুর অ্যাভিনিউতেও ঝড়ের দাপটে ভেঙে পড়ে ল্যাম্পপোস্ট।
হাওড়ায় শুধু বেলুড়েই মৃত্যু হয়েছে চার জনের। ছিঁড়ে পড়া বিদ্যুতের তারের সংস্পর্শে তারাচাঁদ গাঙ্গুলি স্ট্রিটে ৪৫ বছরের এক সাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। বেলুড়ের গাঙ্গুলি স্ট্রিটেও তার ছিঁড়ে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। তা ছাড়া বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েও মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।
দুর্যোগের ফলে বিপর্যস্ত হয় ট্রেন পরিষেবাও। পূর্ব রেলের হাওড়া-বর্ধমান কর্ড এবং মেন লাইন ছাড়াও দক্ষিণ-পূর্ব রেলে ব্যাহত হয় ট্রেন চলাচল। লিলুয়ায় গ্রিডের সংযোগ বিকল হয়, গাছ পড়ে যায় হিন্দমোটরে। শিয়ালদহ মেন এবং শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার বিভিন্ন জায়গায় ট্রেন আটকে পড়ে।
শহরের নানা জায়গায় ওভারহেড তার ছিঁড়ে রাস্তায় আটকে পড়ে একাধিক ট্রাম। দমদমে মেট্রো পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। খোলা জায়গায় মেট্রো লাইনের উপর ভেঙে পড়ে গাছ। শহর জুড়ে থামকে যায় ট্রাফিক।
ঝড়ের দাপটে কলকাতা বিমানবন্দরের একটি বিমানের মুখ ঘুড়ে গিয়ে সেটি ধাক্কা মারে ল্যাম্পপোস্টে। অন্য একটি ছোট ‘সেসনা’ বিমানেরও মুখ ঘুরে যায়। নামতে না পেরে কলকাতার আকাশে চক্কর কাটে ১০টি বিমান।
দুর্যোগে শহরের নানা জায়গায় ব্যাহত হয় বিদ্যুৎ পরিষেবা। রাত ৮টা থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকে বিধাননগর হাসপাতাল। ঝোড়ো হাওয়ায় হাজরা চিত্তরঞ্জন হাসপাতালের ভিতর ভেঙে পড়ে অ্যালুমিনিয়ামের গ্লাস প্যানেল।