উল্লাস: মৃত বাঘের সঙ্গে নিজস্বী। বাগঘোরায়। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
মরেও রক্ষা নেই। শুক্রবার দুপুর। পশ্চিম মেদিনীপুরের বাগঘোরার জঙ্গলে রয়্যালবেঙ্গলের মৃত্যুসংবাদ তত ক্ষণে চাউর হয়ে গিয়েছে। বনকর্মীরা পৌঁছনোর আগেই ঘটনাস্থলে হাজার খানেকের ভিড়। হাতে হাতে মোবাইল ক্যামেরা। বাঘের দেহ উদ্ধারেও বাধা দিল উৎসাহীরা। দাবি উঠল, ‘গ্রামের মানুষ আগে বাঘ দেখবে, তার পর বাঘের দেহ এলাকা থেকে যাবে।’ এক যুবক তো স্লোগান দিতে শুরু করল, “লালগড় পারেনি, গোয়ালতোড় পারেনি, বাগঘোরাই পেরেছে বাঘ মারতে। আমরা ছাড়া বাঘটাকে কেউ মারতেই পারত না।”
বনকর্তারা যখন নিজেরা আলোচনা করছেন, এ ভাবে জাতীয় পশু হত্যায় জেলার মাথা কতটা হেঁট হল, তখন বাগঘোরার বাসিন্দারা কিন্তু গর্বিত। বাঘের দেহ নিয়েও চলল টানাহ্যাঁচড়া। মৃত বাঘ দেখা যাবে না বলে জানিয়েছিলেন এক বনকর্মী। স্থানীয়দের একাংশ তাঁকে মারধর করে। জখম হয়ে এলাকা ছাড়েন তিনি। এর পর আর না বলার ঝুঁকি নেননি বনকর্তারা। ঘটনাস্থলে ছিলেন দুই মহিলা রেঞ্জার। পরিস্থিতি দেখে তাঁরাও পিছু হটেন। শেষমেশ বনকর্মীরা আশ্বাস দেন, বাঘটাকে গাড়িতে তুলে বাগঘোরার মাঠে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে সবাই মৃত বাঘ দেখতে পারবে।
শুরুতে বাঁশে বেঁধে বাঘের দেহ জঙ্গল থেকে বের করে আনা হয়। পরে বন দফতরের গাড়িতে তোলা হয় দেহ। চারদিকে তখন জনতার উল্লাস। গাড়ি দেখেই বাগঘোরার মাঠে ভিড়ের বাঁধ ভেঙেছে। সকলে বাঘের ছবি মোবাইল ক্যামেরায় বন্দি করতে চায়। প্রথমে গাড়ির ভিতরে ছিল বাঘের দেহ। পরে জনতার দাবি মেনে দেহটি গাড়ির ছাদে তোলা হয়। করতালির শব্দে তখন কান পাতা দায়। কয়েকজন আবার গাড়ির ছাদে উঠে বাঘের মৃতদেহের সঙ্গে নিজস্বী তোলে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে সেই ছবি। এমনকি ফেসবুকের ‘ট্রেন্ডিং’ তালিকাতেও ছিল রয়্যালবেঙ্গলের মৃত্যুর খবর। ছবি তোলার ফাঁকে বছর চব্বিশের সনাতন মাহাতো বলছিলেন, “বাঘ দেখছি এই প্রথম। হোক না মরা। তাই ছবিটা তুলে রাখলাম।” বন দফতরের কর্তা আর কর্মীরা তখন দৃশ্যতই অসহায়। পরে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বনকর্তারা। পুলিশ এসেও গোড়ায় কিছু করতে পারেনি। শেষে অনেক চেষ্টায় ভিড় ঠেলে বাঘের দেহ সমেত গাড়িটিকে মাঠ থেকে বার করা হয়।
আরও পড়ুন:
গ্রামকে জুজু দেখিয়েই বিপদ, উৎসবের ‘শিকার’ লালগড়ের বাঘ
বাঘের দেহ নিয়ে এমন উল্লাস দেখে অনেকেই হতবাক। এই ব্যর্থতা কি বন দফতরের নয়? জেলার এক বনকর্তার স্বীকারোক্তি, “দায় আমাদেরও। আমরা এখনও জঙ্গলমহলের সব মানুষকে বন্যপ্রাণ রক্ষায় সমান সচেতন করতে পারিনি।”