পড়শি রাজ্য ঝড়খণ্ড ও কেন্দ্রীয় সংস্থা ডিভিসি-র ছাড়া জলে পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা বানভাসি হয় বলে প্রায় প্রতি বছরই অভিযোগ ওঠে। এই পরিপ্রেক্ষিতে এ বার জল ছাড়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রকের কড়া নিয়ন্ত্রণ দাবি করল পশ্চিমবঙ্গ।
সোমবার কলকাতায় পূর্বাঞ্চলের পাঁচটি রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্রের জলসম্পদ প্রতিমন্ত্রী অর্জুনরাম মেঘওয়ালের সম্মেলনে এই দাবি তোলেন বাংলার সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি জানান, পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে সব পড়শি রাজ্যের বৃষ্টির জলও বয়ে যায়। তার উপরে এ রাজ্যের বক্তব্য না-শুনে ঝাড়খণ্ড তেনুঘাট ব্যারাজ থেকে জল ছাড়ে। বিশেষত ডিভিসি-র ছাড়া জলে ভেসে যায় বাংলা। ফি-বছরের এই সমস্যা থেকে বাংলাকে বাঁচাতে ‘ইউনিফায়েড কন্ট্রোল’ বা সমন্বয়-ভিত্তিক যৌথ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করে জল ছাড়া নিয়ন্ত্রণের দাবি জানান রাজীববাবু।
সমবেত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কমিটিতে এ রাজ্যের সেচ দফতর, ডিভিসি, ঝাড়খণ্ড, বিহার ছাড়াও কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রক থাকবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই ব্যবস্থার বিষয়ে ১৫ দিনের মধ্যে বৈঠকে বসার জন্য যুগ্মসচিবকে নির্দেশ দেন অর্জুনরাম। জলাধার থেকে পলি তোলার ক্ষেত্রে ডিভিসি-র বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ এনেছে রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় জলসম্পদ-কর্তারা ডিভিসি-র কাছে জানতে চান, বিশ্ব ব্যাঙ্কের তহবিল থেকে তাদের ১১৫ কোটি দেওয়া হলেও এই কাজে মাত্র ৩৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে কেন? এ বার দ্রুত পলি তোলার কাজ হবে বলে জানিয়েছেন ডিভিসি-কর্তৃপক্ষ।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে কেন্দ্রীয় অনুদান মিলছে না বলে অভিযোগ তোলেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী এবং অন্যান্য কর্তা। অভিযোগ, ২০১৫-য় কেন্দ্র ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের ছাড়পত্র দিয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ওই প্রকল্পে এক টাকাও মেলেনি। আবার বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে কেন্দ্রের ৫০ শতাংশ অনুদান দেওয়ার কথা থাকলেও বকেয়া রয়েছে ২৩০ কোটি টাকা। ‘কমন বর্ডার এরিয়া’র কাজে বকেয়া ৯৫ কোটি। কবে বকেয়া টাকা মিলবে, এ দিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে তা জানতে চান রাজীববাবু।
পরে অর্জুনরাম বলেন, ‘‘রাজীববাবু যে-সব বিষয়ের কথা তুলেছেন, তার বেশির ভাগই কেন্দ্রের অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গে যুক্ত। সেই মন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলে টাকা দেওয়ার চেষ্টা করব।’’ সব রাজ্যের জল সংক্রান্ত সমস্যার নিষ্পত্তির জন্য একাধিক নয়, একটি মাত্র কেন্দ্রীয় ট্রাইব্যুনাল গড়া হবে বলেও জানান অর্জুনরাম।
রাজীববাবুর অভিযোগ, কেন্দ্রের বঞ্চনায় গঙ্গা-পদ্মা ভাঙন ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। মুর্শিদাবাদের নাড়ুখাঁকি, অর্জুনপুরে গঙ্গার ভাঙনে বিএসএফের ফাঁড়ি পর্যন্ত তলিয়ে গিয়েছে। ২০০৫ সালে চুক্তি হয়েছিল, ওই সব ‘কমন বর্ডার এরিয়া’র ১২০ কিলোমিটার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ফরাক্কা ব্যারাজ প্রজেক্ট অথরিটির। কিন্তু ঠিকমতো কাজ না-হওয়ায় মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও নদিয়ার একাংশ মিলিয়ে ২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ অঞ্চলে ৩৭টি ভাঙনপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করেছে সেচ দফতর। এ বার বর্ষার আগে কাজ না-হলে ওই জায়গায় ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে সেচমন্ত্রীর আশঙ্কা। সেই পরিস্থিতি যাতে না-হয়, তার জন্য আগাম মোকাবিলার কাজ করতে হবে। সেচকর্তাদের আবেদন, রাজ্যকে সেটা করতে হলে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হোক।