প্রতীকী ছবি।
বেতন বাড়ছে পার্শ্বশিক্ষকদের। কিন্তু তাঁদের কী হবে? উদ্বেগে রয়েছেন রাজ্যের ৪৫ হাজার শিক্ষকের, যাঁরা মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র (এমএসকে), শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের (এসএসকে) সঙ্গে যুক্ত।
বর্তমানে রাজ্যের প্রাথমিক স্কুলগুলির পার্শ্বশিক্ষকেরা ৫ হাজার ৯৫৪ টাকা বেতন পান। হাইস্কুলগুলির পার্শ্বশিক্ষকদের বেতন ৮ হাজার ১৮৬ টাকা। মাসখানেক আগে পার্শ্বশিক্ষকদের রাজ্য সম্মেলনে তাঁদের বেতন বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সর্বশিক্ষা বিভাগ সূত্রের খবর, তার পরে পার্শ্বশিক্ষকদের বেতন অনেকটা বাড়ানোর প্রস্তাব হয়েছে। অর্থ দফতর প্রস্তাব মঞ্জুর করলেই প্রয়োজনীয় বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা শোনার পরেই এসএসকে, এসএমএসকে-এর শিক্ষকেরা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরে বেতন বাড়ানোর দাবিতে স্মারকলিপি দেন। স্কুলগুলি চালায় ওই দফতরই। খরচ সর্বশিক্ষা প্রকল্প থেকে দেয় কেন্দ্র সরকার। সেই টাকা শিক্ষা দফতর হয়ে আসে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরে। ওই টাকা থেকে এসএসকে ও এমএসকে শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরে এসএসকে-এর শিক্ষকেরা ৫৯০০ টাকা করে বেতন পান। প্রধান শিক্ষক পান ৬১০০ টাকা। এমএসকে-এর শিক্ষকেরা পান ৮৯৩০ টাকা করে। এমএসকে-এর প্রধান শিক্ষকের বেতন ১০ হাজার ৪০০ টাকা। প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির লিখিত প্রস্তাব পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর থেকে শিক্ষা দফতরে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি রাজ্য সরকার। ওই দু’ধরনের স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের যুগ্মসচিব স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এসএসকে-এমএসকে শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব রাজ্য সর্বশিক্ষা দফতরের পাঠিয়েছি। এখনও উত্তর আসেনি।’’ রাজ্য শিক্ষা দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, পঞ্চায়েত দফতরের চিঠি তাঁরা পেয়েছেন। তা শিক্ষামন্ত্রীর বিবেচনাধীন রয়েছে।
রাজ্যের ‘এসএসকে-এমএসকে যৌথ শিক্ষক সমিতি’র সভাপতি মহম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে বেতন বাড়েনি। স্কুলগুলি চলে সর্বশিক্ষা প্রকল্পের টাকায়। একই প্রকল্পের অধীনে পার্শ্বশিক্ষকদের বেতন বাড়ানো হচ্ছে। অথচ, আমাদের ক্ষেত্রে এখনও কিছু হল না। এই অল্প বেতনে সংসার চালানো অসম্ভব।’’
রাজ্যে এমএসকে-এর সংখ্যা ১৯০০। এসএসকে-র সংখ্যা ১৬ হাজার। ১১ লক্ষ পড়ুয়া পড়াশোনা করে দু’ধরনের স্কুলে। এসএসকেগুলিতে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ও এমএসকেগুলিতে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। গ্রামের অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণি, তফসিলি ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরাই ওই স্কুলগুলিতে পড়তে আসে। সম্প্রতি রাজ্য সর্বশিক্ষা বিভাগের একটি সমীক্ষা রিপোর্টে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, মূলত এসএসকে, এমএসকে-র তফসিলি সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে স্কুলছুট হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এসএসএসকে-এমএসকে-র শিক্ষকদের অভিযোগ, বেতন না হওয়া-সহ নানা বঞ্চনার শিকার স্কুলগুলি। সেটাও পড়ুয়াদের স্কুলছুট হওয়ার অন্যতম কারণ।