কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে বিশ্বভারতীর সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। ফাইল চিত্র।
বিশ্বভারতীর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শুক্রবার কয়েক স্তরের কঠোর সুরক্ষা বলয় ভেঙে মঞ্চে উঠে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে চলে গেলেন এক আগন্তুক। সেখানে তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর মতো ভিভিআইপি-রাও ছিলেন। এই ঘটনায় ফের প্রশ্নের মুখে রাজ্য পুলিশ। কারণ, এ দিন সমাবর্তন মঞ্চের সামনে ‘ডি-জোনের’ নিরাপত্তার দায়িত্ব ছিল রাজ্য পুলিশের হাতেই। মঞ্চের নিরাপত্তায় ছিল এসপিজি। মঞ্চে উঠে প্রধানমন্ত্রীকে প্রণাম করে কানে কানে কিছু বলে তাঁর হাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি তুলে দেন ওই ব্যক্তি। তার পর এসপিজি তাঁকে টেনে নামায়। অনেকের মতে, এসপিজি-র ‘তৎপরতা’ও তাই প্রশ্নের বাইরে নয়।
সমাবর্তনের পরে মঞ্চ থেকে তখন নামছিলেন আচার্য মোদী। তাঁর কিছুটা সামনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনা, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। প্রধানমন্ত্রীর চারপাশে এসপিজি-বেষ্টনী। এমন সময়ে মধ্যবয়সী ওই ব্যক্তি মঞ্চে উঠে পড়েন। পরনে পাঞ্জাবি-ট্র্যাক প্যান্ট, পায়ে স্নিকার্স। মোদীর সঙ্গে ছবিও তোলেন তিনি। অথচ, তিনি কে, কোথা থেকে এসেছেন, কী করে মঞ্চে উঠলেন— এ সবই তখনও রহস্য!
পরে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তাঁর নাম চন্দন মাজি। বাড়ি ভদ্রেশ্বরে। বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজকলি সেন সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, তাঁর সামনেই ওই ঘটনা ঘটেছিল। তিনি তখন সমাবর্তনের মঞ্চেই ছিলেন। ওই ব্যক্তিকে তিনি আগে কখনও দেখেননি। একটি সূত্রের খবর, আগন্তুক দু’-এক জন বিজেপি নেতার ‘ঘনিষ্ঠ’। তাঁদের মারফতই তিনি অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকতে পেরেছিলেন। অন্য সূত্রে বলা হয়, বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী হিসেবে তিনি এসেছিলেন। সবই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এসপিজি তাঁকে ধরে জেলা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার পরে বোলপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু রাত পর্যন্ত তাঁকে গ্রেফতার করা হয়নি।
বীরভূম জেলা প্রশাসনের এক কর্তা এ দিন বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট নিরাপত্তার পাস ছাড়়া কাউকেই সমাবর্তন স্থলে যেতে দেওয়া হয়নি। ওই ব্যক্তির কাছেও সম্ভবত পাস ছিল।’’ কিন্তু অনুষ্ঠানের প্রবেশপত্র থাকলেও ম়ঞ্চে উঠে পড়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তার যে চরমতম গাফিলতি দেখা গিয়েছে, তার দায় কে নেবে? এ প্রশ্নের রাত পর্যন্ত কোনও উত্তর মেলেনি। এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মঞ্চে নিরাপত্তা বলয় ভেঙে উঠে পড়েছিলেন এক তরুণী। সিঁড়ি পর্যন্ত ছুটে গিয়েছিলেন তাঁর আর এক বোন। তখনও নিরাপত্তার গাফিলতি নিয়ে শোরগোল পড়েছিল। প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানিয়েছিলেন মমতা। এ বার এখন পর্যন্ত সবাই চুপচাপ!
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শুক্রবার সকাল থেকেই বিশৃঙ্খলা ছিল। প্রবল গরমে জলের ব্যবস্থা না থাকায় হইচই করছিলেন মঞ্চের কাছাকাছি থাকা পড়়ুয়াদের বড়় অংশ। দু’দেশের দুই প্রধানমন্ত্রী আসার আগে এসপিজি আধিকারিকেরা তাঁদের শান্ত হওয়ার আর্জি জানান। কিন্তু শোরগোল থামেনি। বচসা থেকে হাতাহাতি হয়, এক পড়়ুয়াকে মারধর করে বাইরে বার করে নিয়ে যেতেও দেখা যায়। তার পর আবার মঞ্চে আগন্তুক!
রাতে পুলিশ সূত্রে খবর, চন্দনের কাছে তখনও পর্যন্ত সন্দেহজনক কিছু মেলেনি। তবে আরও তদন্ত চলছে।