প্রত্যাশিত ভাবেই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী থেকে বিদায় ঘটে গেল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। এখন থেকে তিনি দলের শুধু এক জন সাধারণ সদস্য! পাশাপাশিই রাজ্য নেতৃত্ব থেকে সরলেন আরও তিন প্রবীণ মুখ— শ্যামল চক্রবর্তী, মদন ঘোষ ও দীপক সরকার। পরিবর্তে সিপিএমের নতুন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে জায়গা পেলেন মানব মুখোপাধ্যায়, আভাস রায়চৌধুরী, অনাদি সাহু ও সুমিত দে।
শ্যামলবাবুদের তুলনায় আভাস-সুমিতেরা বয়সে অনেক তরুণ। পুরনো সম্পাদকমণ্ডলীর দুই আমন্ত্রিত সদস্য, শিলিগুড়়ির অশোক ভট্টাচার্য ও বীরভূমের রামচন্দ্র ডোমকে এ বার পূর্ণ সদস্য করা হয়েছে। অনাদি ও সুমিত এসেছেন আমন্ত্রিত হিসেবে। তুলনামূলক তরুণ মুখ এনে নেতৃত্বে নতুন রক্তসঞ্চারের চেষ্টা হলেও দলের রাজনৈতিক ভাবনা ও সংগঠনে যে বিস্তর গলদ রয়ে গিয়েছে, তা নিয়ে প্রবল আত্মসমালোচনাও উঠে এসেছে রাজ্য কমিটিতে।
আলিমুদ্দিনে বৃহস্পতিবার রাজ্য কমিটির বৈঠকের শেষ দিনে উপস্থিত ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তাঁর সামনেই জবাবি ভাষণে দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, মনোনয়নে সন্ত্রাস, ভোটের দিনে লুট এবং গণনায় কারচুপির মধ্যে এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছে। তার মধ্যেও বহু জায়গায় মানুষ প্রতিরোধে নেমেছেন। এটা যেমন এই ভোটে উঠে আসা নতুন প্রবণতা, তেমনই দলের রাজ্য কমিটি চেষ্টা করেও বাম নেতা-কর্মীদের কিছু অংশের তৃণমূলকে রুখতে বিজেপিকে সাহায্য করার মতো ‘মিথ্যা মোহজাল’ কাটাতে পারেনি। সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের রাজনীতির মোকাবিলা ঠিক মতো হয়নি। আবার ভোট কবে হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণ দেখিয়ে অনেক জায়গায় সাংগঠনিক প্রস্তুতিও ঠিক মতো হয়নি।
ইয়েচুরি বলেছেন, পেট্রল-ডিজেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির মতো সাধারণ মানুষের জীবনযন্ত্রণার বহু দৃষ্টান্ত থেকে নজর ঘোরানোর জন্য সঙ্ঘ-বিজেপি নানা চটকদার প্রচার চালাচ্ছে। দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে যে, বামেরা এখন অপ্রাসঙ্গিক। এই প্রচারে কান না দিয়ে মোদী সরকারের জনবিরোধী নীতি ও সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে লড়়াইয়ের কথা বলেছেন তিনি। পাশাপাশিই ইয়েচুরি বুঝিয়েছেন, কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রীর শপথে তিনি ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমন্ত্রিত হয়ে বেঙ্গালুরু গিয়েছিলেন মানেই বাংলায় বাম-তৃণমূল সমঝোতা হবে— এমন প্রচার বা ভাবনা অর্থহীন।