অভিজিৎ নস্কর
কখনও তিনি সিনেমায় অভিনয় করেছেন মহানায়ক উত্তমকুমারের সঙ্গে। কখনও যাত্রার আসর মাতিয়েছেন কিংবদন্তী শিল্পী বীণা দাশগুপ্তের সঙ্গে। ভারতের নানা প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছেন অভিনয়ের সূত্রে।
এ হেন শিল্পীর এখন দিন কাটছে গ্রামের পথে পথে। বহুরূপী সেজে ভিক্ষা করে।
শিল্পীর নাম কুমার অভিজিৎ, ওরফে অভিজিৎ নস্কর। থাকেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার দক্ষিণ বারাসাতে। প্রায় ষাট বছরের অভিনয় জীবনের অভিজ্ঞতা। সিনেমা, যাত্রা, নাটক— সব ক্ষেত্রেই ছিল অবাধ বিচরণ। মা মাটি মানুষ, নটী বিনোদিনী, কপালকুণ্ডলা, চাঁপাডাঙার বৌ-সহ তাঁর অভিনীত বিভিন্ন যাত্রাপালার কথা এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। মৌচাক, হারানো সুরের মতো সিনেমাতেও দর্শকদের মন কেড়েছেন একটা সময়ে। কিন্তু ইদানীং কাকদ্বীপ থেকে ক্যানিং, কুলতলি থেকে কলকাতা— পথে পথে বহুরূপী সেজে সামান্য রোজগারে দিন কাটে তাঁর। বিভিন্ন মনীষীর জন্মদিনে সেই রূপ নেন। সেই তালিকায় মা সারদা যেমন আছেন, আছেন মারাদোনাও। নানা সাজে মেলাতেও হাজির হন অভিজিৎ। হরবোলার ভূমিকাতেও তাক লাগিয়ে দিতে পারেন এখনও।
বহু বছর কোনও সরকারি সাহায্য পাননি। তবে কিছু দিন হল সরকারি মাসিক অনুদান মিলছে বলে জানালেন তিনি। সিনেমা, যাত্রা, নাটক মিলে প্রায় ২৭৬টি রূপে দেখা গিয়েছে তাঁকে, জানালেন শিল্পী। কিন্তু গত কুড়ি বছর আর অভিনয়ের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। এখন ভরসা শুধু বহুরূপীর সাজটুকুই। একেক দিন খাওয়া জোটে না বলে জানালেন। কারণ, খেতে গেলে মেকআপ নষ্ট হয়ে যায়। অভিজিৎ বলেন ‘‘ছোট থেকে অভিনয়ের শখ ছিল। তবে অভিনয়ের জন্য টাকার পিছনে ছুটিনি কখনও। অভিনয়কে ভালবাসি। এখন অভিনয় করতে পারি না ঠিকই। তবে বহুরূপী সাজি। তাতেই যতটুকু রোজগার।’’ সময় পেলে চাষবাসও করেন বলে জানালেন। কথায় আছে, দেহ পট সনে নট সকলই হারায়— এক সময়ে রূপালি পর্দা, যাত্রার আসরের এত খ্যাতি— সে সব এখন আর টানে না?
সত্তর পেরোনো অভিজিৎ বলেন, ‘‘পুরনো কথা মনে পড়ে ঠিকই। তবে সময়ের সঙ্গে সব কিছু মেনেও নিতে হয়। হরবোলা শুনে বা বহুরূপী হিসাবে দেখে কেউ তাচ্ছিল্য করলে খারাপ লাগে বই কী!’’