বাবার বাড়ির সামনের ফুটপাতে রাতভর ধর্না দিয়েও লাভ হল না। আশঙ্কাই সত্যি হল নবম শ্রেণির ছাত্রী সুহানি চট্টোপাধ্যায়ের। হাতছাড়া হয়ে গেল তার জার্মানি যাওয়ার সুযোগ। স্রেফ বাবা-মায়ের কলহের জেরে। সুহানির স্কুল এবং ভিসার আবেদনপত্রে কিছুতেই সই করতে রাজি হলেন না তার বাবা— কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়।
সুহানি পড়ে হেরিটেজ স্কুলে। সে এবং ওই স্কুলের আরও কিছু পড়ুয়া একটি ‘এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম’-এ জার্মানি যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। রওনা হওয়ার কথা ছিল আগামী ২ জুন। কিন্তু স্কুল এবং ভিসার আবেদনপত্রে বাবা-মা দু’জনেরই সই দরকার ছিল। সুহানির মা রত্না চট্টোপাধ্যায় বুধবার বলেন, ‘‘বারবার আবেদন সত্ত্বেও শোভন সই করেননি। ভিসা পাওয়ার জন্য যে সময় লাগে, এখন আর সেই সময়ও নেই। তাই মেয়ের যে ওখানে যাওয়া হচ্ছে না, তা নিশ্চিত।’’
শোভন এবং রত্নাদেবীর বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলা চলছে গত নভেম্বর থেকে। দু’জনে থাকেনও আলাদা বাড়িতে। মেয়র থাকেন গড়িয়াহাটে সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের একটি আবাসনে, রত্নাদেবী বেহালায়। বিদেশযাত্রার সুযোগ পেয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের দেওয়া আবেদনপত্র পূরণ করে জমা দিতে গিয়ে সুহানি জানতে পেরেছিল, তাতে বাবারও সই দরকার। সই লাগবে ভিসা পেতে গেলেও।
বাবার সইয়ের জন্য শোভনের বতর্মান ঠিকানায় গিয়ে বিফল হয়ে ফেরে সুহানি। রত্নাদেবী আদালতের দ্বারস্থ হন। তাতেও কাজ না হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার শোভনের আবাসনের সামনের ফুটপাতে রাতভর মেয়েকে নিয়ে ধর্নায় বসেন রত্নাদেবী। শুক্রবার সকালে তাঁকে গ্রেফতার করে রবীন্দ্র সরোবর থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। রত্নাদেবী সে দিন বলেন, পুলিশ তাকে সই সংগ্রহের ব্যাপারে যথাসাধ্য চেষ্টা করার আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি বলে বুধবার জানান মেয়র-পত্নী।
আরও পড়ুন: টাকা কি আকাশ থেকে আসে, গৌতমকে ভর্ৎসনা মুখ্যমন্ত্রীর
শোভন সে দিন বলেছিলেন, ‘‘আমার বাচ্চা মেয়েটা পড়তে যাচ্ছে, না কোথায় যাচ্ছে— সে বিষয়টি পরিষ্কার না করে অসত্য তথ্য পরিবেশন করা হচ্ছে।’’ সই না করার পিছনে সেটাই বড় কারণ বলে জানান তিনি। যুক্তি দেন, সই করলে বিবাহ-বিচ্ছেদ মামলাতেও তার প্রভাব পড়তে পারে। এ দিন রত্নাদেবী জানান, বাবার সই না হওয়া অবস্থাতেই এখনও পড়ে রয়েছে সুহানির আবেদনপত্র। সুহানি শুধু বলেছে, ‘‘সময় চলে গেল। বাবা সই না করায় সুযোগ পেয়েও যেতে পারছি না জার্মানিতে।’’