চুরি হচ্ছে ঢাকনা, অরক্ষিত ব্রিজ

সব মিলিয়ে এই পাঁচ সন্তানের দায়িত্ব ভাগাভাগিতে বেহাল অবস্থা বালি ব্রিজের। অথচ একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপিয়েই দায়মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছে তারা।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৮ ০২:০৫
Share:

বেআব্রু: লোহার পাত চুরি হওয়ার পরে এমনই বিপজ্জনক অবস্থা বালি ব্রিজের। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

তাঁর অবস্থা ‘ভাগের মা গঙ্গা পায় না’-র মতো!

Advertisement

৮৬ বছরের বৃদ্ধের সন্তান অনেক। কোন জন তাঁর খেয়াল রাখবে, তা নিয়ে সন্তানদের মধ্যে ঠেলাঠেলি লেগেই থাকে। ফলে বৃদ্ধের রোগের খবর কেউ জানেই না।

বৃদ্ধের নাম বালি ব্রিজ। অভিযোগ, দিনের পর দিন সেতুর কাঠামোয় লাগানো লোহার প্লেটের ঢাকনা কেটে লোপাট করে দিচ্ছে চোরের দল। অথচ খবর নেই কারও কাছেই। ৮৮০ মিটার লম্বা এই সেতুর ১১টি এক্সপ্যানশন জয়েন্টের উপরে ১০টি অর্ধেক ডিম্বাকৃতি কাঠামো রয়েছে। বালির দিকে চার নম্বর কাঠামো পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে হাওড়া সিটি পুলিশের বালি থানা। আলো দেখাশোনার দায়িত্ব হাওড়া পুরসভার। আবার দক্ষিণেশ্বরের দিকের বাকি অংশের দায়িত্বে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের বরাহনগর থানা এবং কামারহাটি পুরসভা। পাশাপাশি সেতুর মাঝ বরাবর রেল পথের রক্ষণাবেক্ষণ ও নজরদারির দায়িত্বে রেল কর্তৃপক্ষ ও তাদের সুরক্ষা বাহিনী।

Advertisement

সব মিলিয়ে এই পাঁচ সন্তানের দায়িত্ব ভাগাভাগিতে বেহাল অবস্থা বালি ব্রিজের। অথচ একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপিয়েই দায়মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছে তারা। তবে পথচারীদের অভিযোগ, এ বার সমস্যা একেবারে আলাদা। রেলপথের অংশে ব্রিজের মূল কাঠামোর নীচে আংটা দিয়ে ঝালাই করে ঝোলানো রয়েছে তিন ফুট বাই তিন ফুট এক একটি লোহার প্লেট। যার প্রতিটির ওজন প্রায় একশো কেজি। রোদ, বৃষ্টি থেকে মূল কাঠামো রক্ষা করতে এই ব্যবস্থা। অভিযোগ, লোহার আংটা ও ঝালাই কেটে লোপাট হয়ে যাচ্ছে ওই ভারী লোহার প্লেট। জানা গিয়েছে, এক সময়ে দু’প্রান্তে এমন কয়েকশো ঢাকনা ছিল। যা এখন দাঁড়িয়েছে ৩০-৪০টিতে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীরা বলছেন, ভারী ওই লোহার প্লেট লোপাট করতে ঝালাই বা আংটা কাটতে হয়। এটা বেশ সময়সাপেক্ষ। সেগুলো নিয়ে যেতেও বড় গাড়ি দরকার, এবং কয়েক জনের হাত লাগাতে হবে। দিনের পর দিন এই সব হয়ে চলেছে। তাঁদের দাবি, সেতুর উপরে যদি রাজ্য পুলিশ ও রেল পুলিশের নজরদারি থাকত, তাহলে হয়ত এমন ঘটত না। সেতুর মেরামতির দায়িত্বে থাকা কর্মীদের দাবি, প্লেট কাটার ঝালাই কাটতে গিয়ে কোথাও কোথাও মূল কাঠামোয় আঘাত করে ফেলছে চোরের দল। ফলে ক্ষতি হচ্ছে পুরনো সেতুর।

নজরদারি এড়িয়ে কী ভাবে হচ্ছে চুরি? উত্তর খুঁজতে দায় এড়াচ্ছে বৃদ্ধের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দুই সন্তান। হাওড়া ও ব্যারাকপুর সিটি পুলিশের কর্তাদের দাবি, সেতুর কাঠামোয় নজরদারির দায়িত্ব রেল সুরক্ষা বাহিনীর। যদিও রেল সুরক্ষা বাহিনীর এক কর্তা বলেন, ‘‘বিষয়টি জেলা পুলিশের দেখার কথা। তবু কেন এমন হচ্ছে, খবর নিয়ে দেখব।’’

স্থানীয়দের মতে, চারদিকে তো এত সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। বালি ব্রিজে কেন সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে না? তা হলেই তো ধরা পড়বে, কে কী ভাবে চুরি করছে?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement