ভারতী ঘোষ।
পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রাক্তন পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ এবং তাঁর ব্যক্তিগত দেহরক্ষী সুজিত মণ্ডলকে ফেরার দেখিয়ে চার্জশিট জমা দিতে চলেছে সিআইডি। সূত্রের খবর, এই সপ্তাহেই, সম্ভবত মঙ্গলবার ঘাটাল আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হবে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর থানার তোলাবাজি মামলায়। দাসপুরের ব্যবসায়ী চন্দন মাজির অভিযোগের ভিত্তিতে এই মামলা শুরু করে মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। সেই এফআইআরে অবশ্য ভারতী এবং তাঁর দেহরক্ষীর অভিযুক্ত হিসেবে নাম ছিল না।
এই মামলায় এখনও পর্যন্ত ছ’জনকে গ্রেফতার করেছেন সিআইডির গোয়েন্দারা। ধৃতদের মধ্যে চার পুলিশ আধিকারিক ছাড়াও রয়েছেন দাসপুরের এক ব্যবসায়ী বিমল গড়াই এবং ভারতী ঘোষের মাদুরদহের একটি ফ্ল্যা়টের কেয়ারটেকার রাজমঙ্গল সিংহ। ধৃত চার পুলিশ আধিকারীক হলেন- তোলাবাজির ঘটনার সময় ঘাটালের সার্কল ইনস্পেক্টর শুভঙ্কর দে, ঘাটাল থানার অফিসার ইনচার্জ সাব ইন্সপেক্টর চিত্তরঞ্জন পাল, দাসপুর থানার ওসি প্রদীপ রথ এবং অ্যাসিস্টান্ট সাব ইন্সপেক্টর দেবাশিস দাস।
সিআইডি সূত্রে খবর, অভিযুক্তদের মধ্যে তিন জন বিচারকের সামনে গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন। তদন্তকারীদের সামনে অভিযুক্তদের বয়ান এবং গোপন জবানবন্দির উপর ভিত্তি করেই চার্জশিটে ভারতী এবং সুজিত মণ্ডলকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
ভারতী ঘোষের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার হয়েছে প্রায় নগদ প্রায় ২.৪ কোটি টাকা।
প্রত্যেককেই অভিযুক্ত করা হয়েছে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৮৪, ৩৮৫, ৩৮৯, ১১৯, ৪০৩ এবং ১২০(বি) ধারায়। সিআইডি সূত্রে খবর, নির্দিষ্ট সময়ের আগেই চার্জশিট জমা দিয়ে ধৃতদের জামিন আটকে, জেল হেফাজতে রেখে বিচার করার পক্ষে সওয়াল করা হবে। কারণ সিআইডির যুক্তি— ধৃতরা সবাই প্রভাবশালী। তাঁরা জামিন পেলে সাক্ষীদের প্রভাবিত করা হতে পারে।
আরও পড়ুন:
বিজেপির সঙ্গে দেখা হল না নির্বাচন কমিশনারের, তীব্র কটাক্ষ শমীকের
সোনারপুর থানায় আত্মহত্যার চেষ্টা স্বামী খুনে অভিযুক্ত মধুমিতার
প্রায় ৫০ জন সিআইডি আধিকারিককে নিয়ে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়, যাঁরা ভারতীর একাধিক বাড়িতে তল্লাসি চালান। সিআইডির দাবি, প্রাক্তন এই আইপিএসের মাদুরদহের বাড়িতে তল্লাসি চালিয়ে প্রচুর দামি মদ, সম্পত্তির নথি ছাড়াও মিলেছিল নগদ প্রায় ২.৪ কোটি টাকা। অভিযুক্ত দুই পুলিশ আধিকারিক শুভঙ্কর দে এবং চিত্তরঞ্জন পালের কাছে পাওয়া গিয়েছিল নগদ ৬০ লাখ টাকা। তার ক’দিন পরেই সিআইডি আধিকারিকরা দক্ষিণ কলকাতার বাঁশদ্রোণীতে একটি ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে উদ্ধার করে দু’কোটি টাকা। তদন্তকারীদের দাবি, ওই ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন ভারতীর দেহরক্ষী সুজিত মণ্ডল।
প্রাক্তন আইপিএসের বাড়ি থেকে উদ্ধার দামি মদ।
২১ ফেব্রুয়ারি বাঁশদ্রোণীর তল্লাসির পর থেকেই হঠাত্ করে ভারতীকে নিয়ে সিআইডির সক্রিয়তা কমতে থাকে। তখন রাজ্য পুলিশের শীর্ষ মহলে জল্পনা শুরু হয়ে যায় যে, এক শীর্ষ পুলিশ কর্তার মাধ্যমে সমঝোতা প্রস্তাব পাঠিয়েছেন এই প্রাক্তন আইপিএস। সিআইডির সক্রিয়তা কমার পর থেকেই ভারতীর পক্ষ থেকে সরকারকে আক্রমণ করে যে হোয়াটস্অ্যাপ বিবৃতি আসত, তাও বন্ধ হয়ে যায়।
থরে থরে সাজানো দামি মদ।
সেখান খেকেই এই সমঝোতার সম্ভবনা আরও জোরালো হতে থাকে। তার মধ্যেই নির্দিষ্ট ৯০ দিন সময়সীমার আগেই ভারতী এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ সুজিত মণ্ডলকে ফেরার দেখিয়ে সিআইডি-র চার্জশিট দেওয়ার তোড়জোড়, পরিবর্তিত সমীকরণের ইঙ্গিত বলেই মনে করছে আইপিএস মহল।