প্রতীকী ছবি।
তাঁরা যে বিয়ে করেননি, সেটা গোপন করেননি কেউই। শুনে কয়েক জন বাড়ি ভাড়া দিতে চাননি, তবে রাজিও হয়েছিলেন কোনও বাড়িওয়ালা। সেই দেড় যুগ আগেই তাই পাটুলিতে এক সঙ্গে থাকার ছাদ পেয়ে গিয়েছিলেন, অয়ন চক্রবর্তী ও অদিতি রায়।
এই ২০১৮-য় সুপ্রিম কোর্ট ফের প্রাপ্তবয়স্ক যুগলদের বিয়ে না-করেই স্বেচ্ছায় এক সঙ্গে থাকার অধিকারটি মনে করিয়ে দিয়েছে। তাতে অয়ন বলছেন, ‘‘যুগলদের লিভ-ইনে সায় দেওয়ার পক্ষে থাকা বাড়িওয়ালার সংখ্যা হয়তো ক্রমশ বাড়বে।’’ পাটুলি, বাগুইআটি, নিউটাউন— কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় এত বছর যৌথ জীবন কাটিয়ে এই দম্পতির অভিজ্ঞতা, কিছু সমস্যা থাকলেও লিভ-ইন আগেও অসম্ভব ছিল না। এবং বিয়ে না-করেই দিব্যি শান্তিতে আছেন বলেই আর বিয়ের ঝামেলায় যাওয়ার ইচ্ছে নেই এই যুগলের।
হাইকোর্টের উকিল জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘কেউ কেউ বিয়েবিহীন দাম্পত্যকে ভাল চোখে না-ও দেখতে পারেন। সেটা তাঁদের সমস্যা। তবে প্রাপ্তবয়স্ক নরনারী কে কার সঙ্গে থাকবেন ঠিক করাটা তাঁদেরই অধিকার।’’ তাঁর মত, সর্বোচ্চ আদালতের কথায় নানা সামাজিক বাধার মুখে পড়া যুগলদের জীবন একটু হলেও নিরাপদ হল। যুগলরা বিবাহিত কি না জরিপ করে হোটেলে হোটেলে পুলিশি হয়রানি এতে কিছুটা কমতে পারে। এ দেশের বড় শহরগুলোয় মাঝবয়সি বা প্রবীণ একা মানুষদের মধ্যে গাঁটছড়া বাঁধতে উদ্যোগী গুজরাতের একটি সংস্থার কর্তা নাথুভাই পটেলও দম্পতিদের বিয়ের তুলনায় ‘লিভ-ইনে’ জোর দেন। তাঁর মত, ‘‘বুড়ো বয়সের বিয়েয় আগের পক্ষের ছেলেপুলে, সম্পত্তি নিয়ে নানা জটিলতা আসে। শেষ ক’টা দিন লিভ-ইন সম্পর্ক বরং ঢের ঝাড়া হাত-পা।’’ তবে আইন-আদালতের ব্যাখ্যা যা-ই বলুক সাধারণত, সামাজিক মূল্যবোধই শেষ কথা বলে। কেউ অবিবাহিত যুগলকে বাড়ি ভাড়া দিতে না-চাইলে প্রমাণ জোগাড় করে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন।
আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা বলছেন, লিভ ইন সম্পর্কটিকে কোর্টের স্বীকৃতির পিছনেও সাধারণত মেয়েদের অধিকার রক্ষার তাগিদ কাজ করছে। বিয়েবিহীন সম্পর্কেও মহিলার খোরপোষ, সম্পত্তির অধিকার বৈধ তা আগে বার বার বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু দম্পতির কেউ
আগের সম্পর্কে ডিভোর্স না-পেলে লিভ-ইন সম্পর্কে গোল বাধতে পারে। তবে জয়ন্তনারায়ণবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘সে-ক্ষেত্রেও দু’জনের কারও স্বামী বা স্ত্রী মেনে নিলে কারও কিছু বলার নেই।’’