মমতা বলেন, সুব্রত বক্সী এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায় যে তালিকা প্রকাশ করেছেন, সেটিই চূড়ান্ত।
পুরভোটের প্রার্থিতালিকা নিয়ে দলের অন্দরে অসন্তোষ প্রসঙ্গে মুখ খুললেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, সুব্রত বক্সী এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায় যে তালিকা প্রকাশ করেছেন, সেটিই চূড়ান্ত। পাশাপাশি, পছন্দের প্রার্থী টিকিট না পাওয়ার কারণে বিক্ষোভকেও বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাননি মমতা। তিনি জানান, কিছু জায়গায় ‘বিভ্রান্তি’ তৈরি হয়েছিল। তা-ও এখন মিটে গিয়েছে।
শুক্রবার রাজ্যে ১০৮ পুরভোটের প্রার্থিতালিকা প্রকাশ করেছে তৃণমূল। প্রায় ৩,০০০ প্রার্থীর নাম সংবলিত পুস্তিকা দেখিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে তালিকা তৈরির কাজে মূল ভারপ্রাপ্ত দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত ও মহাসচিব পার্থ জানান, দলনেত্রী ওই তালিকায় অনুমোদন দিয়েছেন। পরিস্থিতি ঘোরালো হয় এর পরে। কারণ, তৃণমূলের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ এবং মিডিয়া গ্রুপে প্রকাশিত হয় অন্য একটি প্রার্থিতালিকা।
এর পর থেকে রাজ্যের নানা জায়গা থেকে বিক্ষোভ, অবরোধ, প্রতিবাদের খবর আসতে থাকে। একাধিক নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ-বিধায়ক তাঁদের অসন্তোষের কথা জানাতে থাকেন দলের উপরতলায়। রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভের আবহে তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে শুক্রবার রাতেই জানিয়ে দেওয়া হয়, দলনেত্রী যে তালিকায় অনুমোদন দিয়েছেন, সেই ‘চূড়ান্ত’ তালিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে জেলা সভাপতিদের কাছে।
কিন্তু এর পরেও দলীয় কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষে রাশ টানা যায়নি। শনিবার ও রবিবার দু’দিনই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ দেখা গিয়েছে। তা নিয়েই সোমবার লখনউ যাওয়ার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে মমতা বলেন, ‘‘সবাইকে খুশি করা যাবে না। পার্থ-বক্সীর তালিকাই চূড়ান্ত তালিকা।’’ প্রার্থিতালিকা নিয়ে যে কিছু জায়গায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল, তা অবশ্য অস্বীকার করেননি দলনেত্রী। তিনি বলেন, ‘‘হ্যাঁ, বিভ্রান্তি কিছু ছিল। তবে এখন আর কোনও সমস্যা নেই।’’
প্রসঙ্গত, একই কথা বলেছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। রবিবার তিনি বলেছেন, ‘‘এতগুলি প্রার্থীর মধ্যে বড়জোর ১০০টি জায়গায় কিছু ত্রুটি আছে। সেগুলি সবই সংশোধন করে নেওয়া হবে।’’ তবে পাশাপাশিই উদাহরণ স্বপূর অভিষেক তাঁর লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারের বজবজ পুরসভার প্রার্থিতালিকা (যা বক্সী-পার্থের দেওয়া) তুলে ধরে জানান, একটি আসনে এক মৃত ব্যক্তির নাম প্রার্থী হিসেবে রয়েছে। অন্য একটি মহিলা সংরক্ষিত ওয়ার্ডে পুরুষ প্রার্থীর নাম রয়েছে।
ঘটনাচক্রে, সোমবার পার্থ জেলায় জেলায় দলীয় কর্মীদের বিক্ষোভ নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। সেখানে দলনেত্রী মমতার কথার প্রতিধ্বনি করেই তিনি বলেন, ‘‘প্রার্থিতালিকায় সই করেছি আমি ও সুব্রত বক্সী। জেলা সভাপতিদের কাছে সেই তালিকা পাঠানো হয়েছে। যেখানে সমস্যা ছিল, সেগুলিও ঠিক করে গত কাল (রবিবার) পাঠানো হয়েছে। এই তালিকা নিয়ে আর ক্ষোভ থাকা উচিত নয়। মমতার উন্নয়নে সবাই সামিল হতে চাইছেন। কিন্তু প্রার্থী তো এক জনই হন। সবাইকে প্রার্থী করা যায় না। দলের নেত্রী এক, প্রতীক এক। সবাই দলের পাশে দাঁড়ান।’’
প্রসঙ্গত, পার্থ ও বক্সীর সই করা প্রার্থিতালিকা নিয়েই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। পুরভোটে প্রার্থী বাছাই যে একেবারেই ঠিক হয়নি, তা স্পষ্ট জানিয়ে বিধায়ক আবার সোমবার বলে বসেছেন, ‘‘পার্থ চট্টোপাধ্যায় দলের ছেলেদের চেনেন বলে মনে হয় না!’’