‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিতে ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছে। ফাইল চিত্র।
সরকারি সহায়তার নানান প্রকল্প নিয়ে ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি চলছে রাজ্য জুড়ে। তার মধ্যে ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পে বিমা করাতে আবেদনের এমনই ঢল নেমেছে যে, তা সামাল দিতে কার্যত নাভিশ্বাস উঠেছে প্রশাসনের! সেই জন্য বিকল্প হিসেবে স্মার্টকার্ডের পরিবর্তে আপাতত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি-সহ অঙ্গীকারপত্র দেওয়ার কথা ভেবেছে নবান্ন।
১ ডিসেম্বর শুরু হওয়া পরিষেবা শিবিরে প্রথম সপ্তাহে শুধু স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড পেতে আবেদন এসেছে ১১ লক্ষ। স্বাস্থ্য ভবনের ধারণা, এই হারে চললে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড চাইতে পারে অন্তত ৫০ লক্ষ পরিবার। সে-ক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে সকলকে স্মার্টকার্ড দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, রাজ্যে এত কম সময়ে ৪০-৫০ লক্ষ স্মার্টকার্ড তৈরি করার পরিকাঠামো নেই। ‘‘শুধু তো স্বাস্থ্যসাথী নয়, অন্যান্য প্রকল্পের সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে। ২০ লক্ষ পর্যন্ত স্মার্টকার্ড নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিলি করা সম্ভব। তার চেয়ে বেশি আবেদন এলে আপাতত কাগজের বিমাপত্র দিয়ে দেওয়া হতে পারে। ভোট পর্ব মিটে গেলে স্মার্টকার্ড দেওয়া হবে,’’ বলেন নবান্নের এক শীর্ষ কর্তা।
তবে স্মার্টকার্ডের বদলে কাগজের বিমাপত্র প্রদান নিয়ে ভিন্ন মত রয়েছে সরকারের অন্দরেই। কারণ, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প ঘোষণার সময় মুখ্যমন্ত্রী নিজেই স্মার্টকার্ড দেখিয়ে বলেছিলেন, রাজ্যের প্রকল্পে বাড়ির মহিলার নামে বিনামূল্যে কার্ড দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রের আয়ুষ্মান প্রকল্পে ৩০ টাকার বিনিময়ে দেওয়া হয় একটি কাগজ। এ বার রাজ্যও সেই কাগজ দিতে শুরু করলে ভোটের আগে ব্যাপারটা সরকারের পক্ষে অনুকূল হবে না বলেই নবান্নের কর্তাদের একাংশের অভিমত। যদিও কর্তাদের অন্য অংশের বক্তব্য, ৪০-৫০ লক্ষ আবেদন এলে এখন কোনও ভাবেই সকলকে কার্ড দেওয়া সম্ভব নয়। ডিজিটাল রেশন কার্ডের ক্ষেত্রে প্রাথমিক ভাবে বারকোড-যুক্ত কাগজ দেওয়া হয়েছিল। এ ক্ষেত্রেও তা করা হতে পারে। পরে অবশ্য সকলকেই স্মার্টকার্ড দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্যসাথী নিয়ে এই সমস্যা কেন?
স্বাস্থ্যকর্তারা জানান, ২০১১-এর জনগণনা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে ২.০৩ কোটি পরিবার ছিল। এখন তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২.৩০ কোটি। ১.৪৩ লক্ষ পরিবার বা সাড়ে সাত কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় আছেন। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরি করেন, এমন ব্যক্তিদের প্রায় ৩০ লক্ষ পরিবার যদি আবেদন না-ও করেন, তা
হলেও এখনও ৬০ লক্ষ পরিবার স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় চলে আসতে পারে। যাঁরা বেসরকারি সংস্থার বিমা করিয়েছেন, রাজ্যের নির্দেশে তাঁরাও স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড পাওয়ার যোগ্য। ফলে সরকারি চাকুরে বা পেনশন প্রাপক ছাড়া সকলেই শিবিরে গিয়ে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড করাতে চাইছেন। সেই জন্যই প্রথম সপ্তাহে ১১ লক্ষ আবেদন জমা পড়েছে। এখনও তিন সপ্তাহ বাকি। স্বাস্থ্যকর্তাদের ধারণা, বাকি সময়ে অন্তত ৩৫ লক্ষ আবেদন আসবে। সব আবেদন ঝাড়াইবাছাই করে মার্চের মধ্যে কার্ড দেওয়া অত্যন্ত কঠিন কাজ বলেই মনে করছেন কর্তারা। কারণ, মাসে ১০ লক্ষ স্মার্টকার্ড তৈরি করে বিতরণ ব্যবস্থা দাঁড় করাতেই হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি দফতর।
নবান্নের এক কর্তা জানান, ভোটের মুখে সরকার স্বাস্থ্য-কার্ডের বিষয়টি ঘোষণা করায় রাজ্যের বহু সংস্থা সেই কাজ করতে রাজি হচ্ছে না। অগ্রিম চাইছে তারা। অনেকের ধারণা হয়েছে, সরকারের আর্থিক সঙ্কট চলছে। ফলে কাজ করে সময়ে টাকা পাওয়া যাবে না। আর্থিক বছরের শেষ পর্বে ভোটের দামামা বেজে যাবে। তখন সরকারের ঘর থেকে টাকা বার করা মুশকিল হবে। তাই রাজ্যের অনেক সংস্থা স্বাস্থ্যসাথীর স্মার্টকার্ড তৈরি করতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। প্রয়োজনে স্বাস্থ্য ভবন ভিন্ রাজ্যের সংস্থাকে দিয়ে কার্ড তৈরির চেষ্টা চালাবে বলে জানাচ্ছেন কর্তাদের একাংশ।